হারিয়ে যাওয়া কলমের গল্প!

সাদা শার্টের পকেটের কোনায় বা প্যান্টের পকেটে কলমের কালির দাগ! ছোটবেলায় কমন একটা দৃশ্য ছিল আমাদের জন্য। আর এই দৃশ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে একটি কলমের নাম। ইকোনো ডিএক্স (ECONO DX)

নব্বইয়ের দশকে কলমের কথা বললে মানুষের মনে ইকোনো ডিএক্সের কথাই আসত। বলতে গেলে মার্কেটে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল জিকিউ কোম্পানির এই বলপয়েন্টের। কিন্তু ২০০০ সালের শুরু থেকেই হঠাৎ করে বাজার হারাতে শুরু করে ইকোনো। সেই যে শুরু আস্তে আস্তে মুছে যেতে শুরু করে মানুষের মন থেকে।

কী হয়েছিল ইকোনোর?

প্রথম কারণ বাজারে নতুন এবং শক্ত কম্পিটিটর। তখন ম্যাটাডোর, অলিম্পিকসহ আরও কিছু কোম্পানি বাজারে আসে এট্রাকটিভ ডিজাইন ও কম্পোর্টেবল কলম নিয়ে। যেটা মানুষকে ইকোনো থেকে অন্য ব্র্যান্ডে শিফট করতে বাধ্য করে। এ ছাড়া ম্যাটাডোরের সূক্ষ্ম নিবের বিপরীতে ইকোনোর মোটা নিবের লেখা তাদের অনেকটা পিছিয়ে দেয় মার্কেটে।

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে প্রোডাক্ট ডাইভার্সিটি। যেখানে অন্য কোম্পানিগুলো নতুন নতুন ডিজাইনের কলম বাজারে আনছিল, সেখানে জিকিউ একই ডিজাইনেই পড়ে ছিল। দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ডিজাইন একঘেয়ে ও পুরোনো লাগছিল গ্রাহকদের কাছে। স্বভাবতই মানুষ নতুনের দিকে ধাবিত হয়েছিল।

তৃতীয় কারণ মার্কেটিং। অলিম্পিক বা ম্যাটাডোর যেভাবে মার্কেটিংয়ে জোর দিয়েছিল তেমনটা ইকোনোর ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। বিশেষ করে টেলিভিশন বিজ্ঞাপন। কারণ সে সময়ে শহর থেকে গ্রাম সবখানে রঙিন টেলিভিশন সহজলভ্য হতে শুরু করেছিল।

এ ছাড়া ইকোনো কলম প্লাস্টিকের হওয়ায় হাত ঘেমে গিয়ে লিখতে অসুবিধা হতো, কালি জমে যাওয়া এবং যখন তখন পকেট নষ্ট করার ব্যাপার তো ছিলই।

পরবর্তী সময়ে নতুন ডিজাইনের কলম দিয়ে, পুরোনো কলম রিব্র্যান্ড করে, নস্টালজিক কিছু বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাজারে ফিরতে চেষ্টা করেছিল এবং এখনো করে যাচ্ছে ইকোনো। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেছে। ম্যাটাডোর ইতিমধ্যে একটা শক্ত অবস্থানে চলে গেছে। এ ছাড়া গুডলাকের কলমও অনেকখানি বাজার দখল করে নিয়েছে।

তারপরও চাইব স্বরূপে ফিরে আসুক আমাদের শৈশবের প্রথম কলমটি।