সাদায়-কালোয় তিলাইয়া

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিলাইয়া  ছবি: লেখক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিলাইয়া ছবি: লেখক

বছর দুই আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) বিএস (কৃষি) চূড়ান্ত পর্বের ছাত্রদের নিয়ে শিক্ষা ভ্রমণের অংশ হিসেবে বান্দরবান গিয়েছিলাম। শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে জাদির পাহাড়। পাহাড়ের ওপরে ‘বুদ্ধধাতু জাদি’ যা ‘স্বর্ণমন্দির’ হিসেবেই পরিচিত। পাহাড় বেয়ে স্বর্ণমন্দিরে উঠলাম। ওখানেই দেখা হলো রংবেরঙের একঝাঁক খুদে বন্ধুর সঙ্গে। ওদের মধ্যে একদল দেখতে অনেকটা মূকাভিনেতাদের মতো। মুখে যেন মেখেছে সাদা-কালো রং; যেন ভাঁড় সেজেছে। এতক্ষণ যাদের কথা বললাম তারা হলো এ দেশের প্রকৃতির সৌন্দর্য খুদে এক প্রজাপতি। অধ্যাপক শফিক হায়দার ও মনোয়ার হোসেনের ফিল্ড গাইড অনুযায়ী ওদের নাম ‘তিলাইয়া’ (Common Pierrot)। সাদা দেহের ওপর অসংখ্য ছোট-বড় কালো ফোঁটার জন্যই হয়তো এমন নাম। তবে আমি নাম দিয়েছি ‘ভাঁড়’। লাইসিনিডি (Lycaenidae) পরিবারভুক্ত এই প্রজাপতির বৈজ্ঞানিক নাম Castalius rosimon.                তিলাইয়া বা ভাঁড় একেবারেই ছোট্ট প্রজাপতি। প্রসারিত অবস্থায় ডানার মাপ ২৪-৩২ মিলিমিটার। এদের মুখমণ্ডল সাদা ও চোখ কালো। সামনের ডানার নিচের দিকটা সাদা এবং তাতে বিভিন্ন আকারের কতগুলো ফোঁটা বা দাগ সুন্দরভাবে সাজানো থাকে। পেছনের ডানার ঠিক মাঝামাঝি কোনো ফোঁটা থাকে না। তবে নিচের প্রান্তে গোড়ার দিকে একটি উজ্জ্বল সবুজ গোলাকার ফোঁটা আছে। এদের লেজ কালো, যার আগা সাদা। ওপর দিক থেকে দেখলে ডানার গোড়া ধাতব সবুজ দেখায়। সামনের ও পেছনের ডানার প্রান্তে মোটা কালো বা কালচে-ধূসর রেখা থাকে; আর তাতে থাকে ছোট সাদা ফোঁটা। পুরুষ ও স্ত্রী দেখতে একই রকম হয়। এরা যেমন আছে পাহাড়ঘেরা বান্দরবানে, তেমনি গাজীপুরের শালবন ও আশপাশে, এমনকি সুন্দরবনেও। এরা বেশ ধীরগতিতে ওড়ে এবং মাটির কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের ২৫০০ মিটার উঁচুতেও থাকতে পারে। লতাগুল্ম, ঘাস, ছোট ছোট বুনো গাছের ফুল ও পাখির মল থেকে খাবার জোগাড় করে। ছোট্ট এই প্রজাপতিরা তাদের ছোট্ট ডানাগুলো আধখোলা রেখে যখন রোদ পোহায়, তখন ডানার ধাতব সবুজ আভা ঝলমলিয়ে ওঠে। দেখতে দারুণ লাগে।

স্ত্রী প্রজাপতি কচি পাতায় ডিম পাড়ে। প্রতি পাতায় একটি করে। অর্ধগোলাকার আকারের ডিমের রং সাদা এবং তাতে সবুজ আভা থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও এদের দেখা যায়।