নিউইয়র্কে বইমেলা শুরু

নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলার ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন পবিত্র সরকার। ছবি: প্রথম আলো।
নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলার ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন পবিত্র সরকার। ছবি: প্রথম আলো।

নিউইয়র্কে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ২৬তম আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলা। জ্যাকসন হাইটসের পিএস ৬৯ এ (পাবলিক স্কুল) শুক্রবার সন্ধ্যায় ফিতা কেটে উৎসবের উদ্বোধন করেন কলকাতার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক পবিত্র সরকার। এ সময় আমেরিকার বিভিন্ন স্থান ও অন্যান্য দেশ থেকে আসা বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের আগে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। অডিটোরিয়ামে মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে ২৬ জন বিশিষ্ট অতিথি সাংস্কৃতিক পর্বের উদ্বোধন করেন।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কবি, সাহিত্যিক, লেখক ও প্রকাশকেরা এ উৎসবে যোগ দিয়েছেন। উৎসব চলবে স্থানীয় সময় রোববার পর্যন্ত। উৎসবের আয়োজক মুক্তধারা ফাউন্ডেশন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পবিত্র সরকার, শামসুজ্জামান খান, লীনা তাপসী, ইকবাল হাসান, লুৎফর রহমান রিটন, নাজমুন নেসা পিয়ারী, আমীরুল ইসলাম, আহমদ মাযহার, ফেরদৌস সাজেদীন, জামাল হোসেন হোসেন, হুমায়ূন কবির, জসিম মল্লিক, কণা বসু মিশ্র, আলমগীর শিকদার লোটন, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ, নিনি ওয়াহেদ, রোকেয়া হায়দার, দুলাল তালুকদার, সব্যসাচী ঘোষ দস্তিদার, খায়রুল আনাম, তাজুল ইমাম, তাপস কর্মকার, লতিফুল ইসলাম শিবলী, হাসান ফেরদৌস ও কনসাল জেনারেল শামীম আহসান। সঞ্চালনা করেন মোশাররফ হোসেন ও ফাহিম রেজা নূর। স্বাগত বক্তব্য দেন উত্সবের আহ্বায়ক ফেরদৌস সাজেদীন।
উদ্বোধনী সংগীত ‘আলো আমার আলো’ পরিবেশন করে আনন্দধ্বনি। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শামসুজ্জামান খান, পবিত্র সরকার, আমীরুল ইসলাম, লীনা তাপসী, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, জামাল উদ্দিন হোসেন, ফেরদৌস আরা, রোকেয়া হায়দার ও শামীম আহসান।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলা ও দেশের সংস্কৃতি প্রবাসীরা মনেপ্রাণে লালন করছেন। যাতে আমি একজন বাঙালি হিসেবে গর্ববোধ করি। ২৬তম বাংলা উত্সব ও বইমেলা বাঙালির বিশ্বায়ন।’

সূচনা সংগীত পরিবেশন করছেন শিল্পীরা। ছবি: প্রথম আলো।
সূচনা সংগীত পরিবেশন করছেন শিল্পীরা। ছবি: প্রথম আলো।

পবিত্র সরকার বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে বাঙালির জয়জয়কার। বাঙালি সংস্কৃতি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। বাঙালির কবিতা, সংগীত, চিত্রকলা বিশ্বের পাঠকের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে। এখন বাংলা এপার বাংলা আর ওপার বাংলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।’
লীনা তাপসী বলেন, ‘আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির মৌলিক গুণ বাঁচিয়ে রাখতে হবে। যে ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি সেই রক্তের দাগ কখনো মুছে যাবে না। সেই দাগকে আমরা জিইয়ে রাখতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষার যে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ তা অনেক ক্ষমতাবান। আমরা বাংলা ভাষা জানি বলেই পৃথিবীর যেকোনো ভাষা অতি সহজেই আমরা উচ্চারণ করতে পারি।’
অনুষ্ঠানে ‘আবহমান বাংলা’ শীর্ষক নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাঞ্জলি। পরিচালনা করেন চন্দ্রা ব্যানার্জি। নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা পরিবেশন নৃত্য, আবৃত্তি ও গান। এতে অংশ নেয় অন্তরা সাহা, মার্জিয়া স্মৃতি, রিতিকা দেব, চন্দ্রিকা দে, শ্রুতিকণা দাশ, বিরশা ও শতাব্দী রায়। রবীন্দ্র সংগীতের একক পরিবেশনায় অংশ নেন শামা রহমান।
দ্বিতীয় দিন শনিবার উৎসব শুরু হবে বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এবং শেষ দিনের অনুষ্ঠানও শুরু হবে বেলা ১১টা থেকে এবং তা চলবে রাত ১১টা পর্যন্ত। এবারের আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলার অনুষ্ঠান মঞ্চের ব্যবস্থাপনা, অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন নিনি ওয়াহেদ, হাসান ফেরদৌস ও সেমন্তী ওয়াহেদ।

বই মেলায় বইয়ের স্টল। ছবি: প্রথম আলো
বই মেলায় বইয়ের স্টল। ছবি: প্রথম আলো

মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের বিশ্বজিৎ সাহা বইমেলা এবং বাংলা উৎসবে দেশ-বিদেশ থেকে নিউইয়র্কে সমবেত হওয়া লেখক, প্রকাশক এবং শিল্পীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। ১৯৯২ সাল থেকে শুরু হওয়া এই বইমেলা প্রতিবছরই একজন লেখক-সাহিত্যিক উদ্বোধন করে আসছেন।
মেলায় বাংলাদেশ থেকে যোগ দিয়েছে মাওলা ব্রাদার্স, সময় প্রকাশন, অনন্যা, কথাপ্রকাশ, ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ, নালন্দা, ভাষাচিত্র, স্টুডেন্ট ওয়েজ, থিয়েটার। কলকাতা থেকে যোগ দিয়েছে পত্রভারতী ও সাহিত্যম। ছিল প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার স্টলও।
মেলায় যোগ দিয়েছেন সংগীতশিল্পী আবদুল হাদী, শামা রহমান, শিল্পী ফেরদৌস আরা, আমীরুল ইসলাম, আহমেদ মাযহার, হুমায়ূন কবির ঢালি ও অভিনেত্রী শিরীন বকুল। এতে কলকাতার দেবাঙ্গনা সরকারও যোগ দিয়েছেন। কানাডা থেকে নিউইয়র্কের বইমেলা এবং উৎসবে যোগ দিয়েছেন লুৎফুর রহমান রিটন, ইকবাল হাসান, সালমা বাণী ও জসিম।
মেলায় যোগ দেওয়া নিউইয়র্কের বিশিষ্ট কবি ও লেখক ফকির ইলিয়াস বলেন, যারা বাংলাদেশের বইমেলাকে মিস করে তারা নিউইয়র্কের বইমেলায় কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরে পাবে। গীতিকার ও কবি ইশতিয়াক রুপু বলেন, বই মেলা মানে প্রাণের মেলা। নিউইয়র্কে বই মেলায় এসে আবারও সেটার প্রমাণ পেলাম। যেভাবে প্রবাসীর মিলন মেলা ঘটছে তাতে অভিভূত না হয়ে পারছি না।
জ্যাকসন হাইটসের গৃহিণী আলিয়া আকতার বলেন, ঢাকার একুশে বই মেলায় যেতে পারিনি, এখানে এসে মনে হচ্ছে ঢাকার বই মেলায় আছি। জ্যামাইকা থেকে মেলায় বই কিনতে যাওয়া স্কুল পড়ুয়া সুরুজ সুমন বলে, বাংলাদেশের এত এত বই দেখে খুব ভালো লাগছে।