ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই হুমকি এক অর্থে শাপেবর হতে পারে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির নেতা নিকোলাস মাদুরোর জন্য। দিনে দিনে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন তিনি, বাড়ছে দেশের দুর্দশা। তাঁর নেওয়া বিভিন্ন নীতি যা দেশটির অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ ডেকে এনেছে, এর পক্ষে বরাবরই যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেছেন, মার্কিন আগ্রাসনের হুমকির কথা। এবার সেই হুমকি সত্যি হলো। এ অবস্থায় নতুন করে রাজনৈতি জীবন পেতে পারেন তিনি।
প্রয়াত পূর্বসূরি হুগো শ্যাভেজের শুরু করা সমাজতান্ত্রিক ‘বিপ্লব’-এর পথেই প্রায় ২০ বছর ধরে হাঁটছেন ভেনেজুয়েলার বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। শাভেজের মতো মাদুরোও একই বুলি ফুঁকে এসেছেন, তা হলো ভেনেজুয়েলার তেল চুরি করতে তলে তলে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে মার্কিন সাম্রাজ্য। সম্ভাব্য আগ্রাসনের প্রসঙ্গটি দেশটির বিরোধী মহল হেসে উড়িয়ে দিলেও গত শুক্রবার তা সত্যি প্রমাণ করলেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ভেনেজুয়েলায় চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আকস্মিক প্রশ্নোত্তর পর্বে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ভেনেজুয়েলা নিয়ে আমাদের অনেক বিকল্পই আছে। প্রয়োজনে সামরিক হস্তক্ষেপ চালানোর বিষয়ও এর মধ্যে রয়েছে’ উল্লেখ্য, সম্প্রতি মাদুরো সরকারের আজ্ঞাধীন একটি নতুন সাংবিধানিক পরিষদ গঠিত হওয়ায় কংগ্রেসে বিরোধী দলগুলোর নিয়স্ত্রণ খর্ব হয়েছে। এ ঘটনার পর একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে সরকারবিরোধীদের হাতে অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে।
রাজধানী কারাকাসের এক রেস্তোরাঁয় আইনজীবী লুইস আলবার্টো রদ্রিগেজ বলেন, মার্কিনরা ভেনেজুয়েলা আক্রমণ করতে চায় তা বলার মধ্য দিয়ে তিনি (ট্রাম্প) জাতীয়তাবাদী অবস্থানকে জোরালো করে মাদুরোর আরও উপকার করেছেন।
এদিকে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পরপরই মাদুরোর অনুগত মহল বিরোধী মহলকে একহাত নিতে ভোলেনি। এমনিতেও বিরোধীদের মাদুরোপন্থীরা ‘যুক্তরাষ্ট্রের চামচা’ বলে খোঁচা দিয়ে থাকে। উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে মাদুরোর ছেলে নিকোলাস বলেছেন, ‘নিজের চরকায় তেল দিন এবং নিজের সমস্যার সমাধান করুন, ট্রাম্প।’ নিকোলাস আরও বলেন, ‘যদি ভেনেজুয়েলায় আক্রমণ হয়, রাইফেল পৌঁছে যাবে নিউইয়র্কে, হোয়াইট হাউসের নিয়ন্ত্রণ নেব আমরা।’
ট্রাম্পের সামরিক হস্তক্ষপের হুমকি দেওয়ার পর ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতারা কেউই তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি। কী বলবেন, ঠিক বুঝে পাচ্ছেন না মাদুরোবিরোধীও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ‘আমি বুঝে পাচ্ছি না কী বলব। পরিস্থিতি জটিল ঠেকছে।’
মানবাধিকারবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াশিংটন অফিস অন লাতিন আমেরিকান’-এর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ট্রাম্পের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো উপহার চাইতে পারতেন না মাদুরো নিজেও।’
এদিকে গত শনিবারও কারাকাসের সড়কে মাদুরোবিরোধী এক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সহিংসতা হলেও কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। ভেনেজুয়েলায় গত এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সহিংসতার ঘটনায় ১২০ জনের বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি খাদ্য ও ওষুধের স্বল্পতাও সেখানে দেখা দিয়েছে।