সিলেটের তিন কবি-লেখককে নিয়ে সেমিনার

অশোক বিজয় রাহা, কবি দিলওয়ার, অমিতাভ চৌধুরী
অশোক বিজয় রাহা, কবি দিলওয়ার, অমিতাভ চৌধুরী

জালালাবাদ বিশ্ব সিলেট সম্মেলন-এর প্রথম দিন, ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার নিউইয়র্ক কলেজের ‘সুরমা’ সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত হলো সিলেটে জন্ম নেওয়া প্রথিতযশা তিন কবি-লেখক অশোক বিজয় রাহা, দিলওয়ার ও অমিতাভ চৌধুরীকে নিয়ে সেমিনার।
কবি তমিজ উদ্দীন লোদীর সমন্বয় ও সঞ্চালনায় তাঁদের নিয়ে আলোচনা করেন আলোচক সৌদ চৌধুরী, কবি কাজী আতিক, কবি শাহিন ইবনে দিলওয়ার, আলোচক সুব্রত বিশ্বাস ও লেখিকা শামসাদ হুসাম।
আলোচকেরা বলেন, এই তিনজন কবি-লেখক যার যার ক্ষেত্রে স্বনামধন্য ও তাঁদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। পৃথক পৃথক আলোচনায় তাঁরা বলেন, অশোক বিজয় রাহা তিরিশের দশকের একজন অন্যতম প্রধান কবি। রবীন্দ্রোত্তর আধুনিকতার সূচনাপর্বে যে কজন কবি কবিতার নতুন মোড় তৈরিতে অবদান রেখেছেন তিনি তাঁদের অন্যতম। নতুন প্রজন্ম অনেকেই তাঁর নাম বিস্মৃত হলেও তাঁকে চর্চার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে তাঁর কাব্যগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে। আলোচনায় তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘ডিহাং নদীর বাঁকে’, ‘রুদ্র বসন্ত’, ‘জল ডম্বরু’ প্রভৃতি পাঠের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন আলোচকেরা।

তিন কবি-লেখককে নিয়ে সেমিনারে কথা শুনছেন অতিথিরা
তিন কবি-লেখককে নিয়ে সেমিনারে কথা শুনছেন অতিথিরা

কবি দিলওয়ারের কবিতা ও জীবনের নানাদিক তুলে ধরে আলোচকেরা বলেন, তিনি আজীবন কাব্যসাধনায় নিমগ্ন থেকেছেন। তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে সাধারণ মানুষের কথা। এসেছে সামাজিক-রাজনৈতিক নানা বৈকল্যের বিরুদ্ধে দ্রোহ ও প্রতিবাদ। তিনি সাধারণের কথা বলেছেন বলেই তাঁকে ‘গণমানুষের কবি’ বলা হয়। তিনি কাব্যসাধনার পথেই হেঁটেছেন, বৈষয়িক বিষয়ে থেকেছেন নির্লিপ্ত। জীবদ্দশায় লাভ করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদক। তাঁরা আরও বলেন, দিলওয়ারের কাব্য ও অন্যান্য রচনা পাঠই হবে তাঁর প্রতি যথাযথ মূল্যায়ন এবং তাঁকে স্মরণ করার একমাত্র উপায়।
লেখক-সাংবাদিক ও ছড়াকার অমিতাভ চৌধুরী সম্পর্কে বলতে গিয়ে আলোচকেরা বলেন, তিনি বাংলাদেশের সিলেটে (বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানায়) জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর জীবনের সিংহভাগ ভারতের কলকাতায়। পঞ্চাশের দশকে তিনি যোগ দেন সাংবাদিকতায়। কাজ করেছেন আনন্দবাজার, যুগান্তর, ও আজকাল পত্রিকায়। ১৯৮৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘পদ্মশ্রী’ ও ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক ‘বঙ্গভূষণ’ সম্মান লাভ করেন তিনি। রবীন্দ্র গবেষক হিসেবে বেশি খ্যাতি লাভ করলেও তিনি ছড়াকার হিসাবেও পরিচিতি লাভ করেন। ৪০টি গ্রন্থের রচয়িতা এই লেখকের রচনা পাঠের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন আলোচকেরা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ তাঁর সৌজন্য বক্তব্যে বলেন, ‘আমি যদিও কবিতা কম বুঝি তবু মনে করি এই তিন কৃতি লেখক-কবি আমাদের সিলেটের তথা বাংলাদেশের গৌরব। তাদের রচনা পাঠের মাধ্যমেই তাদের যথাযথ স্মরণ করা সম্ভব। আমাদের সাহিত্যের ভিত নির্মাণে তাঁদের অবদানকে কিছুতেই অস্বীকার করা যাবে না।’