কে এই স্টিফেন প্যাডক?

স্টিফেন প্যাডক। ছবিটি টুইটার থেকে নেওয়া
স্টিফেন প্যাডক। ছবিটি টুইটার থেকে নেওয়া

যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে উন্মুক্ত কনসার্টে গুলি ছোড়ার ঘটনার সন্দেহভাজন বন্দুকধারী স্টিফেন প্যাডক একজন অবসরপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষক ছিলেন। তাঁর ভাই এরিক প্যাডক বলেছেন, পোকার বা তাস খেলতে খুব পছন্দ করতেন স্টিফেন। এর আগে কোনো সহিংস ঘটনায় স্টিফেন জড়িত ছিলেন না বলে তিনি দাবি করেছেন।

স্থানীয় সময় গত রোববার রাতে লাস ভেগাসে কনসার্টস্থলের পাশে থাকা মান্দালাই বে হোটেলের ৩২ তলা থেকে বন্দুকধারী স্টিফেন ওই উন্মুক্ত কনসার্টে গুলি ছোড়েন। এতে কমপক্ষে ৫৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫ শতাধিক মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলছেন, এ সময় শতাধিক গুলি চালানো হয়। ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশ এর জবাব দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বন্দুক হামলা।

সন্দেহভাজন হামলাকারী হিসেবে স্টিফেন প্যাডকের নাম জানিয়েছে পুলিশ। বলা হচ্ছে, পুলিশ হোটেলকক্ষে ঢোকার আগেই স্টিফেন আত্মহত্যা করেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে এই হোটেলে অবস্থান করছিলেন তিনি। পুলিশ ওই কক্ষে ১০টি বন্দুক পেয়েছে। ৬৪ বছর বয়সী স্টিফেন নেভাদার মেসকিটের বাসিন্দা। পুলিশ সন্দেহভাজন আরও এক ব্যক্তিকে খুঁজছে।

এমন সহিংসতার ঘটনায় স্টিফেনের জড়িত থাকার খবরে স্রেফ স্তম্ভিত হয়ে গেছেন তাঁর ভাই এরিক প্যাডক। ফ্লোরিডায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সে এমন একজন মানুষ যে কিনা ভিডিও পোকার খেলতে পছন্দ করত, সাগরে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসত এবং বোরিতোস (মেক্সিকোর একটি বিশেষ খাবার) খেত। তার এমন কাজ করার কোনো কারণই নেই, কোনো যুক্তি নেই।’

এরিকের দাবি, তাঁর ভাইয়ের কোনো সামরিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না। স্টিফেনের আরেক ভাই হলেন ব্রুস প্যাডক। তিনি এনবিসি নিউজকে বলেছেন, নিজের মালিকানাধীন অ্যাপার্টমেন্টের মাধ্যমে বেশ রোজগার করেছিলেন স্টিফেন। তিনি ধনী ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এনবিসি নিউজ আরও জানিয়েছে, সম্প্রতি বেশ বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন করেছিলেন এই সন্দেহভাজন বন্দুকধারী। তবে জুয়ায় জিতে বা হেরে ওই অর্থ লেনদেন করা হয়েছিল কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের  লাসভেগাসে উন্মুক্ত কনসার্টে হামলার পর ছোটাছুটি। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে উন্মুক্ত কনসার্টে হামলার পর ছোটাছুটি। ছবি: রয়টার্স

সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্টিফেনের উড়োজাহাজ চালানোর ও শিকার করার লাইসেন্স ছিল। তবে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার রেকর্ড নেই। লাস ভেগাসের স্থানীয় পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এর আগে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের মতো ঘটনায় জড়িত ছিলেন তিনি, এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। অন্যদিকে এক মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, স্টিফেনের পরিবারে মানসিক অসুস্থতার ইতিহাস রয়েছে। সেই কারণে তাঁরও এমন সমস্যা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জানা গেছে, লাস ভেগাসে আসার আগে অরল্যান্ডোতে থাকতেন স্টিফেন। স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল, তবে কোনো সন্তান ছিল না। ভাই এরিক প্যাডক বলেছেন, তাঁদের বাবা বেঞ্জামিন হসকিনস প্যাডক একজন ব্যাংক ডাকাত ছিলেন এবং মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) দাগি অপরাধীদের তালিকায় তাঁর নাম ছিল।

এরিক বলেছেন, সর্বশেষ সপ্তাহখানেক আগে মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে স্টিফেন যোগাযোগ করেছিলেন। ঘূর্ণিঝড় ইরমা আঘাত হানার পর মায়ের বিষয়ে কথা বলেছিলেন তিনি। এ ছাড়া এক সপ্তাহ আগেও মোবাইলে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন স্টিফেন।

গতকাল সোমবার নেভাদার মেসকিটে স্টিফেনের দোতলা বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। তবে এ বিষয়ে মেসকিট পুলিশের মুখপাত্র কুইন অ্যাভারেট বিস্তারিত কিছু জানাতে রাজি হননি।

এদিকে আইএসের সংবাদ সংস্থা আমাক নিউজের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে, লাস ভেগাসে হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। আইএসের দাবি, হামলাকারী স্টিফেন প্যাডক একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম। তবে মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই) আইএসের দাবি নাকচ করে দিয়েছে। তারা বলছে, এ হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সম্পর্ক নেই। স্টিফেনের ভাই এরিকও দাবি করেছেন, কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর ভাই সংশ্লিষ্ট ছিলেন না।

প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, স্টিফেন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি চালান। সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এসব অস্ত্র বৈধভাবে কেনা হয়েছিল। তবে এরিক সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁর ভাইয়ের কাছে ছোটখাটো বন্দুক (হ্যান্ডগান) আছে বলে জানতেন। তবে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র কখনো দেখেননি।

স্টিফেনের সাবেক প্রতিবেশী ডায়ানে ম্যাককে (৭৯)। তিনি দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, স্টিফেন খুবই অদ্ভুত প্রকৃতির ছিলেন। ডায়ানে বলেন, ‘সে সব সময় চুপচাপ থাকত, নিজেকে গুটিয়ে রাখত।’

লাস ভেগাসের এ ঘটনার ঠিক ১৬ মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডোর পালস নাইট ক্লাবে ওমর মতিন নামের এক বন্দুকধারীর হামলায় নিহত হয়েছিলেন ৪৯ জন। ওই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিল জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এ ঘটনার আগে বন্দুক হামলায় সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল ভার্জিনিয়ায়। ২০০৭ সালে ভার্জিনিয়া টেকে হওয়া ওই বন্দুক হামলায় নিহত হয় ৩২ জন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, সিএনএন