আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা বন্ধের দাবি

িনউইয়র্কে আড্ডা অনুষ্ঠানে প্রবাসী সাংবাদিকেরা
িনউইয়র্কে আড্ডা অনুষ্ঠানে প্রবাসী সাংবাদিকেরা

ঢাকায় সাংবাদিক উৎপল রায় নিখোঁজের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছেন নিউইয়র্কপ্রবাসী সাংবাদিকেরা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানের সম্মানে নিউইয়র্কে আয়োজিত এক আডডা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সাংবাদিকেরা। ‘ঢাকা-নিউইয়র্ক সাংবাদিক আড্ডা’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠান গত ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় সিটির জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সাপ্তাহিক ঠিকানা’র প্রধান সম্পাদক ফজলুর রহমান।

আড্ডার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও দৈনিক নয়া দিগন্ত’র যুক্তরাষ্ট্র সংবাদদাতা ইমরান আনসারি। তিনি তাঁর বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী এম কে আনোয়ার ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সহধর্মিণী শিলা ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং সাংবাদিক উৎপল রায়ের নিখোঁজে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এ ছাড়া আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহ সভাপতি ও সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক মনজুর আহমদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, সাপ্তাহিক বর্ণমালা’র প্রধান সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সাপ্তাহিক জন্মভূমির সম্পাদক রতন তালুকদার, সাপ্তাহিক রানার এর সাবেক সম্পাদক এনামুর রেজা দিপু, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, প্রেসক্লাবের সদস্যসচিব ও টাইম টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি শিবলী চৌধুরী কায়েস, মোহনা টেলিভিশনের সাবেক প্রধান বার্তা সম্পাদক সোহেল মাহমুদ, সাংবাদিক আবিদুর রহীম, যমুনা টেলিভিশনের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি ও সাপ্তাহিক আজকাল-এর সহযোগী সম্পাদক হাসানুজ্জামান সাকী, সাংবাদিক শাহেদ আলম, টিবিএন২৪-এর শামীম আল আমিন, সাংবাদিক-লেখক মনিজা রহমান, ক্রীড়া ভাষ্যকার ও সাংবাদিক আলমগীর হোসেন, সাংবাদিক রিমন ইসলাম, তুহিন সানজিদ, আবদুর রহিম দিপু, হাকিকুল ইসলাম খোকন, মঞ্জুর হোসেন প্রমুখ।
খোলামেলা এই আড্ডায় সাংবাদিকেরা ঢাকা ও নিউইয়র্ক সাংবাদিকতার সুযোগ ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনায় মেতে ওঠেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় সাংবাদিক নেতা ইলিয়াস খানকে নিউইয়র্কে কর্মরত সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

আলোচনায় সাংবাদিকেরা ঢাকায় সাংবাদিকতার স্মৃতি চারণ করেন এবং কেউ কেউ জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার বিষয়টিও সাংবাদিক ইলিয়াস খানের দৃষ্টি গোচরে আনেন। আবার কেউ কেউ আলোচনায় নিউইয়র্কে সাংবাদিকতা করে টিকে না থাকার প্রসঙ্গ তুলে ধরে অন্য পেশায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে ইলিয়াস খান বলেন, সাংবাদিক উৎপল রায়ের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা সাংবাদিক সমাজকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তাঁকে অবিলম্বে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, হাজারো তরুণের স্বপ্ন ভঙ্গ করেছে দেশে চলমান হাজার হাজার মানহীন অনলাইন ও সংবাদপত্র। বাংলাদেশের বহু মেধাবী সাংবাদিকেরা দেশে টিকতে না পেরে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন, যা বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের জন্য বড় ধরনের হুমকি।
মুহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, আশির দশকের সাংবাদিকতায় এত গ্ল্যামার না থাকলেও পেশাদারিত্ব ছিল। এখন সাংবাদিকদের বেতন বেড়েছে কিন্তু মান কমেছে। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি সাংবাদিকতা পেশার অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। মনজুর আহমদ বলেন, সাংবাদিক সমাজের বিভক্তি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের মানকে দিনের পর ক্ষুণ্ন করছে। মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রবাসে কিংবা দেশে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধতাই সংবাদমাধ্যমকে সুসংহত করবে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সত্যিকারভাবে সাংবাদিকতা পেশায় যারা আগ্রহী তারা নানা কারণেই নিউইয়র্কের সাংবাদিকতায় নিজেদের ধরে রাখতে না পারায় অপেশাদার নামধারীরা সাংবাদিকতায় স্থান করে নিচ্ছে। ফলে কমিউনিটি সাংবাদিকতা মর্যাদা হারাচ্ছে। তিনি প্রকৃত সাংবাদিকদের ‘খণ্ডকালীন’ সময় দিয়ে নিজেদের সাংবাদিকতায় ধরে রেখে কমিউনিটি সাংবাদিকতাকে সমৃদ্ধ করার অনুরোধ জানান। সোহেল মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে মেধাবী সাংবাদিকদের উঠতে দেওয়া হয় না। অযোগ্য নেতৃত্বের আষ্টেপৃষ্ঠে সাংবাদিক সমাজ আজ আবদ্ধ। আবিদুর রহীম বলেন, নিউইয়র্কের দুটি টিভি চ্যানেলে কাজ করে শেষ পর্যন্ত তাঁর সেখানে স্থায়ীভাবে থাকা সম্ভব হয়নি। ফলে বিকল্প পেশার চিন্তা করতে বাধ্য হয়েছেন।