অবৈধ অভিবাসন সমস্যা

ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে দেশ চালাবে, তা গত প্রায় এক বছরে পরিষ্কার। তেমন কিছু না ঘটলে আগামী তিন বছর ট্রাম্পই প্রেসিডেন্ট থাকবেন। ফলে এমনই চলবে। খুব বেশি হলে হয়তো উনিশ-বিশ হতে পারে। তাই অবৈধ অভিবাসন নিয়ে নতুন করে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশার কিছু নেই। সার্বিক অর্থে অভিবাসীদের জন্য এখন কোনো সুসময় যাচ্ছে বা শিগগির সুসময় আসবে, এমন প্রত্যাশা অবান্তর।
তবে বাংলাদেশি রিয়াজ তালুকদারের আমেরিকা থেকে বহিষ্কারের আদেশ এবং পরবর্তী সময়ে ছয় মাসের জন্য সেই আদেশ স্থগিতের ঘটনা প্রমাণ করে, এই প্রশাসনিক সক্রিয়তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের মানবিক সহানুভূতিও পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে সহানুভূতি নিয়ে বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। কিন্তু এসব কারণে তো ট্রাম্প প্রশাসনের আইনের কঠোর প্রয়োগ বন্ধ হবে না। এ বাস্তবতা মেনে নিয়েই সব অভিবাসীকে এখন থাকতে হবে অভিবাসনের দেশ আমেরিকায়।
এখন যাঁরা বহিষ্কার আদেশের আওতায় পড়ছেন, তাঁদের আমেরিকার অভিবাসন আইনেই প্রতিকার গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু কিছু না করে পালিয়ে থাকা বা ঘাপটি মেরে বসে থাকা, মোটেই আর নিরাপদ নয়। কাগজপত্রহীন অনেক অভিবাসীর সন্তান মার্কিন নাগরিক এবং ভবিষ্যতে তারা বাবা-মায়ের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে। তাই কোনো প্রকার অপরাধে না জড়িয়ে আমেরিকার বর্তমান আইনের মধ্যেই প্রতিকার খুঁজতে হবে। এ ধরনের বহিষ্কার একটি পরিবারের জন্য বড় ধাক্কা। আর যদি ওই পুরুষ বা নারী সদস্য সেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হন, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা আমেরিকায় অবৈধভাবে বাস করছেন, তাঁরা ও তাঁদের স্বজনেরা এই বিষয়ে জ্ঞাত যে এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি তাঁদের যেকোনো সময় হওয়া লাগতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের বিষয়টি যতটা আলোচিত, এর আগে তত ছিল না। এর কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের আসরে অবতীর্ণ হওয়ার সময় বিষয়টিকে জোরেশোরে সামনে এনেছিলেন। অথচ তাঁর পূর্বসূরি বারাক ওবামার সময়ও অবৈধ অভিবাসনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বোঝাই করে আমেরিকা থেকে উড়োজাহাজ উড়ে গেছে সংশ্লিষ্ট দেশে। কিন্তু কাজটি এমন চুপিসারে হয়েছে যে তখন কোনো হইচই হয়নি। বরং এখন আওয়াজ ওঠায় অবৈধ অভিবাসীরা অনেক বেশি সহানুভূতি পাচ্ছেন।
আমেরিকা বা কানাডার মতো দেশে যাঁরা স্থায়ীভাবে বসবাসে আগ্রহী, তাঁদের অবশ্যই এই দেশের অভিবাসন আইন সম্পর্কে জানতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে থাকার পর সরকারি ক্ষমার আওতায় স্থায়ী হওয়ার আশা করা ভালো, কিন্তু এর বিপদ সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। নিজের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য পরিবারকে যেন খেসারত দিতে না হয়, সে জন্য ভাবনাটা আরও জরুরি।