অব্যবহৃত ওষুধ বাতিলে কোম্পানির ওপর আসছে বাধ্যবাধকতা

অব্যবহৃত ওষুধ ফিরিয়ে নিয়ে তা যথাযথভাবে বাতিলের বিধান করে আইন হচ্ছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে। এ আইন পাস হলে সংশ্লিষ্ট ওষুধ কোম্পানিগুলোকে তাদের উৎপাদিত কিন্তু অব্যবহৃত ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফিরিয়ে নিয়ে তা নিজেদের তত্ত্বাবধানে যথাযথভাবে নষ্ট করতে হবে। সম্প্রতি এ বিষয়ক একটি আইন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের দুই আইনপ্রণেতা উত্থাপন করেছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম স্টেট নিউজে ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের দুই আইনপ্রণেতা একটি আইন প্রস্তাব করেছেন। ‘ড্রাগ টেক ব্যাক অ্যাক্ট’ নামের এ আইনে অব্যবহৃত ওষুধ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকেই ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য গ্রাহকদের ওষুধ কেনার সময় একটি ফিরতি খাম দিতে বলা হয়েছে। এই ফিরতি খামে করে গ্রাহকেরা অব্যবহৃত ওষুধ চাইলে ফেরত পাঠাতে পারবেন সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছে। এ ছাড়া ওষুধ ফেরত নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু স্থান নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রস্তাবও করা হয়েছে এতে। আইনটি পাস হলে অব্যবহৃত ওষুধের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিজেদের তত্ত্বাবধানে যথাযথভাবে নষ্ট করতে হবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে। এ ক্ষেত্রে মানতে হবে মার্কিন ফেডারেল সরকার অনুমোদিত পদ্ধতি।
আইনটি উত্থাপন করেছেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সিনেটর কেম্প হ্যানন ও টম ও’মারা। এ বিষয়ে সিনেটর কেম্প হ্যানন বলেন, ‘পরিবারের কোনো সদস্য বা কোনো বন্ধুর অব্যবহৃত ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাথমিক ধাপের মাদক ব্যবহার শুরু হয়। নিউইয়র্কে ওষুধের অতি ব্যবহার থেকে মাদকাসক্তি দিন দিন বাড়ছে। এই অবস্থায় অব্যবহৃত ওষুধ দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করাটা জরুরি।’
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, অঙ্গরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট ওষুধ কোম্পানিগুলো নিজেদের উৎপাদিত অব্যবহৃত ওষুধ গ্রাহক পর্যায় থেকে তুলে নেবে। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নষ্ট করার কাজটিও হবে তাদের আওতাতেই। তবে এ ক্ষেত্রে অঙ্গরাজ্য কর্তৃপক্ষ সরাসরি তদারকি করবে। এ ক্ষেত্রে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ওষুধের মিশ্রণ থেকে সৃষ্ট দূষণ প্রতিরোধেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। আর এই পুরো কর্মকাণ্ডের ব্যয়ভারটি বহন করতে হবে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকেই।
তবে জনস্বার্থে আনা এই আইনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ওষুধ উৎপাদন ও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। এ বিষয়ে ফার্মাআরএমএ প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রিসিলা ভ্যানডার বলেন, ‘এই আইন কোনো সমাধান নয়। এটি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বাতিল ও ওষুধের অতিব্যবহার রোধে তেমন কিছুই করতে পারবে না। বরং এটি এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। এমনকি ওষুধের দোকানে চুরির ঘটনাও এর ফলে বেড়ে যেতে পারে।’
প্রিসিলা বলেন, ‘এমন ত্রুটিপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণের বদলে গ্রাহকদের শিক্ষিত করার একটি অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাই আমরা। আমরা আশা করি নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টির দিকে নজর দেবে। বিশেষত ঘরে ওষুধ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ সেবনের বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে কাজ করাটাই এখানে কার্যকর হবে। এর মাধ্যমেই অব্যবহৃত ওষুধের পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। একই সঙ্গে এই সব অব্যবহৃত ওষুধের থেকে সৃষ্ট সংকটও মোকাবিলা করা সম্ভব। জাতীয়ভাবে এই পদ্ধতিই অনুসৃত হয়।’
এ বিষয়ে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর মুখপাত্র বলেন, ‘ওষুধের অপব্যবহার থেকে সৃষ্ট যে মাদকাসক্তি সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে তা মোকাবিলায় কার্যকর যে কোনো আইনেই আমরা সমর্থন জানাব। তবে উত্থাপিত আইনটি আগে আমরা ভালোভাবে পর্যালোচনা করব। তার পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’