ট্রাম্প-জমানায় স্বস্তি পাবেন অভিবাসীরা?

অভিবাসন আর আমেরিকার নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্কে উত্তপ্ত ওয়াশিংটন। সরকার সচল রাখার জন্য একের পর এক আপসরফা ভেস্তে যাচ্ছে। রাজনৈতিক চালাচালিতে আমেরিকায় অভিবাসীদের জন্য এখনো কোনো ভালো সংবাদ নেই। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, অভিবাসন নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাব খুবই দুর্বল। ট্রাম্প আর রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের অভিবাসনবিরোধী ঐক্য প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। ড্রিমার্স নামে পরিচিত শিশু অবস্থায় আমেরিকায় আসা প্রায় সাত লাখ অভিবাসীর সমস্যার কোনো সুরাহা হচ্ছে না। পারিবারিক অভিবাসন সংকুচিত করা ও ডিভি ভিসার লটারি বন্ধে অনড় ট্রাম্প। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কর্মসূচিতে অনড় প্রেসিডেন্ট। দেয়াল নির্মাণের ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে অর্থ বরাদ্দে আইনপ্রণেতাদের ঐক্য না থাকায় সব সমঝোতাই ভেঙে গেছে।

ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডাকা) কর্মসূচি চালু করেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এই কর্মসূচির আওতায় অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে আমেরিকা আসার পর যারা কাগজপত্রহীন অবস্থায় আছে, তাদের সুরক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্মসূচিটি বাতিল করেছেন। ফলে নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি হওয়ার আগে আমেরিকায় আসা প্রায় সাত লাখ অভিবাসীর এখন বিপন্ন অবস্থা। কর্মসূচিটি মার্চেই বাতিল হচ্ছে। এ নিয়ে ডেমোক্র্যাট দলসহ উদারনীতিক রাজনৈতিক পক্ষ, নাগরিক ও মানবাধিকার গ্রুপগুলো আন্দোলন করে আসছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ডাকা কর্মসূচিতে আইনপ্রণেতাদের সমঝোতার কথা বলে নতুন রাজনৈতিক চাল ছাড়েন। এই আলোচনার সঙ্গে দেয়াল নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। পারিবারিক অভিবাসনে পরিবর্তন আনতে হবে এবং ডিভি লটারি ভিসা বাতিল করতে হবে।

অভিবাসীদের দেশ আমেরিকার অভিবাসীদের নিয়ে এমন রাজনৈতিক চালে সতর্ক হয়ে ওঠে উদারনৈতিক রাজনৈতিক পক্ষ। ডেমোক্র্যাটসহ অভিবাসী গ্রুপগুলোও সতর্ক। অবশ্য রিপাবলিকান দলের গোঁড়া অভিবাসীবিরোধী পক্ষ শক্তভাবেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কংগ্রেসে রাষ্ট্রীয় ব্যয় নির্বাহের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে চলছে উত্তেজনা। সমঝোতা না হলে কেন্দ্রীয় সরকার অচল হয়ে পড়বে। ফলে সাময়িকভাবে সরকার সচল রাখার জন্য রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সমঝোতা নিয়ে চলছে দুই পক্ষের দর-কষাকষি। এর মধ্যে অভিবাসন নিয়ে আলোচনা অনেকটাই চাপা পড়ে যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সীমান্ত সংরক্ষণের জন্য দেয়াল নির্মাণে অর্থ বরাদ্দের নিশ্চয়তা চান। পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ ও ডিভি লটারি ভিসা বন্ধের প্রস্তাব নিয়ে তিনি কংগ্রেসের অভিবাসন সংস্কার আইনের প্রস্তাব চেয়েছেন। যদিও তাঁর এ প্রস্তাব নিয়ে খোদ রিপাবলিকান দলেই ঐক্য নেই। এর মধ্যে আগের সপ্তাহে অভিবাসন সংস্কার নিয়ে হোয়াইট হাউসে আলোচনার সময় হাইতিসহ অন্যান্য আফ্রিকান দেশকে লক্ষ্য করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘শিটহোল’ বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অবশ্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ সভায় উপস্থিত রিপাবলিকানরা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট অভিবাসন নিয়ে শক্ত কথা বললেও আপত্তিকর শব্দটি তিনি বলেননি।
বিতর্ক আর উদ্বেগের মধ্যে সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, অভিবাসন নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি কী চান, সেটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি এখনই কোনো অভিবাসন আইন প্রস্তাব উপস্থাপন করছেন না। বিষয়টি নিয়ে তিনি আরও অপেক্ষায় থাকতে চান।
এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি খোলামনে ড্রিমার বা ডাকা কর্মসূচির লোকজনের জন্য একটি সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সিনেটররা যখন একটি সমঝোতায় আসার বিষয়টি জানাতে শুরু করলেন, তখন বিস্তারিত শোনার আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলে বসলেন, এমন প্রস্তাবে রিপাবলিকান দলের সব আইনপ্রণেতা রাজি হবেন না। তিনি রিপাবলিকান দলের অভিবাসীবিরোধী হিসেবে পরিচিত তিন আইনপ্রণেতা টম কটন, ডেভিড পারডিউ ও বব গুডলেটকে প্রস্তাবটি শোনার জন্য হোয়াইট হাউসে ডেকে পাঠান। এসব আইনপ্রণেতাকে স্মার্ট বলে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, তাঁদের সঙ্গে তাঁর মতের মিল রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্র্যাট সিনেটর ডিক ডুরবিনের সঙ্গে সমঝোতায় মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের নিশ্চয়তা নেই। এ ছাড়া পারিবারিক অভিবাসন ও ডিভি লটারি ভিসা বন্ধে দুর্বল প্রস্তাব আনা হয়েছে। এ কারণে ডেমোক্র্যাট সিনেটর ডিক ডুরবিনের ওপর তাঁর আস্থা নেই।
হোয়াইট হাউসের আলোচনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘শিটহোল’ শব্দ ব্যবহার করেছেন বলে সিনেটর ডিক ডুরবিনই গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন।
অভিবাসন নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যে অনেকের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল। অবশ্য তাঁদের সেই আশা উবে যেতে সময় লাগেনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই অভিবাসনবিরোধী বক্তব্য দিয়ে আসছেন। আমেরিকায় বসবাসরত প্রায় দুই কোটি কাগজপত্রহীন অভিবাসীকে আমেরিকা থেকে বহিষ্কার করতে চান তিনি। এর মধ্যে মুসলিমপ্রধান কয়েকটি দেশ থেকে আমেরিকায় ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তিনটি নির্বাহী আদেশও জারি করেন তিনি। তাঁর সময়ে আমেরিকার অভিবাসীরা যে স্বস্তিতে থাকবেন না, তা আরও পরিষ্কার হয়ে উঠছে দিনে দিনে।