সংকটে পড়বেন নিম্ন আয়ের আমেরিকানরা

আমেরিকার দরিদ্র মানুষদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই মধ্যে আগামী বাজেটে সম্পূরক পুষ্টি সহযোগিতামূলক কর্মসূচি ‘ফুডস্ট্যাম্প’ বাতিলের প্রস্তাব রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই প্রস্তাব কংগ্রেসে গৃহীত হলে মারাত্মক সংকটে পড়বেন বিপুলসংখ্যক নিম্ন আয়ের আমেরিকান।

সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম (এসএনএপি) নিম্ন আয়ের মানুষদের সম্পূরক পুষ্টি সহযোগিতা দিয়ে থাকে। সাধারণভাবে এই কর্মসূচি ‘ফুডস্ট্যাম্প’ নামে পরিচিত। ২০১৯ সালের বাজেটে এই কর্মসূচি বাতিলের প্রস্তাব রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন। নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য নিরাপত্তার চাদর হিসেবে বিবেচিত এই কর্মসূচি বাতিল হলে তা নিম্ন আয়ের আমেরিকানদের জন্য মারাত্মক সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মাসে কমপক্ষে ৯০ ডলার আয় করেন এমন আমেরিকানরা কৃষি বিভাগের ‘ইউএসডিএ ফুড প্যাকেজ’র অধীনে প্রাপ্ত সুবিধা অর্ধেক হয়ে যাবে। ফুডস্ট্যাম্প ভোগকারী আমেরিকানদের ৮০ শতাংশেরও বেশি এই স্তরে পড়েন। এ প্যাকেজের আওতায় সেরিয়াল, পেস্তা, পিনাট বাটার, ডাল জাতীয় খাবার (বিনস), টিনজাত ফল ও সবজি দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে এই প্যাকেজের আওতায় তাজা ফল কিংবা সবজি আর পাওয়া যাবে না।

বর্তমানে ‘এসএনএপি’ নীতিমালার আওতায় সুবিধাপ্রাপ্তদের আয় ও সংসারের চাহিদা বিবেচনা করে প্রত্যেকের নিজ নিজ ইবিটি কার্ডে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এ কার্ড ব্যবহার করে সংশ্লিষ্টরা পছন্দসই খাবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্য দোকান থেকে সংগ্রহ করেন। কিন্তু এখন এর আওতা কমিয়ে ব্যয় সংকোচন নীতির কথা বলা হচ্ছে।
ইউএসডিএ কর্তৃপক্ষ মনে করে, ‘এসএনএপি’ কর্মসূচির সুবিধাভোগীরা বর্তমানে খুচরা দোকান থেকে যে দামে খাদ্য-সামগ্রী কেনেন, তার চেয়ে কম দামে অঙ্গরাজ্য সরকারগুলো একই দ্রব্য দিতে পারবেন। ট্রাম্প প্রশাসন মনে করছে, নতুন প্রস্তাব গৃহীত হলে এই খাতে আগামী ১০ বছরে ২১৩ বিলিয়ন ডলার কম খরচ হবে।
‘হাঙ্গার ফ্রি আমেরিকা’র সিইও জোয়েল ব্রেগ ট্রাম্প প্রশাসনের এ ধরনের পদক্ষেপে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, প্রশাসন প্রায় অসম্ভব কিছু প্রস্তাব করছে। প্রশাসন নিম্ন আয়ের আমেরিকানদের কাছ থেকে ২০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যমানের খাদ্য-সামগ্রী কেড়ে নিতে চান।
তিনি বলেন, ‘এসএনএপি’ কর্মসূচি তথা ‘ফুডস্ট্যাম্প’ অসাধারণ। কারণ এটা মুক্তবাজারের মডেলে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাব কারও ঘরে অনাহূত প্রবেশকারীর মতো। প্রশাসন ভাবছে, ওয়াশিংটনের আমলারাই নির্ধারণ করবে আমাদের পরিবারের প্রয়োজনকে।
এ প্রস্তাবের সমালোচকদের অন্যতম ‘ফুড রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন সেন্টার’র প্রেসিডেন্ট জিম উই’ল। তাঁর মতে, এই প্রস্তাব ব্যয়বহুল হবে। অথচ ‘এসএনএপি ’ কর্মসূচির আওতায় বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও ভঙ্গুর করে তুলবে।
অন্যদিকে ‘সেন্টার ফর বাজেট অ্যান্ড পলিসি প্রায়োরিটিজ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট স্ট্যাসি ডিন বলেন, এই প্রস্তাব রেডিক্যাল ও ঝুঁকিপূর্ণ। খাদ্য বিতরণ করে সরকার অর্থ সাশ্রয় করবে এমন ধারণা বড়জোর অশুভ প্রচারণা বা খবর হতে পারে।
উল্লেখ্য গত বছরের বাজেটে ট্রাম্পের ‘এসএনএপি’ কর্মসূচির জন্য সরবরাহকৃত অর্থ এক-চতুর্থাংশ কমানোর প্রস্তাব কংগ্রেস অগ্রাহ্য করেছিল। তবে এবার ট্রাম্পের এই প্রস্তাব কংগ্রেসে গৃহীত হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।