আমেরিকায় বছরে ক্ষতি ১০ হাজার কোটি ডলার

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় রয়েছে টুইটার, স্ন্যাপচ্যাটসহ আরও বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। রয়েছে অনলাইন গেমসের এক বিরাট দুনিয়া, যেখানে বলা যায় ক্যানডি ক্রাশের শাসন চলে বলা যায়। এটা নিঃসন্দেহে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য সুখবর। কিন্তু একই সঙ্গে এই একই বিষয় দুঃসংবাদ হয়ে এসেছে অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য। কারণ সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, কর্মীদের ফেসবুক ও ক্যানডি ক্রাশ আসক্তির কারণে বছরে ১০ হাজার কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে চাকরিদাতাদের।
যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরই কর্মঘণ্টার সময় কিছু অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। কর্মদক্ষতা ধরে রাখতে এর প্রয়োজনও রয়েছে। কিন্তু যখন এই অলস সময় কাটাতে ফেসবুক ব্যবহার কিংবা ক্যানডি ক্রাশ খেলায় মেতে ওঠেন কর্মীরা তখন এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কর্মক্ষেত্রে। কারণ এই দুটি বিষয়ই এক ধরনের আসক্তি হিসেবে সামনে আসে। আর কর্মীদের এই আসক্তির মূল্য চোকাতে হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। অ্যাপ্লাইড সাইকোলজি জার্নালে প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কর্মীদের এ ধরনের আসক্তির কারণে যে ক্ষতি হয়, তা আর্থিক হিসাবে বেশ বড়। আমেরিকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বছরে শুধু এই কারণে ১০০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
এ সম্পর্কিত গবেষণা নিবন্ধটি এখনো প্রকাশ না হলেও এর একটি খসড়ার উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্ক পোস্ট জানায়, কাজের চাপে পর্যুদস্ত মানুষকে নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে কর্মদক্ষতা কমা থেকে শুরু করে মনোদৈহিক বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাবের কথাও উঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণায়। কিন্তু এই বাস্তবতার পাশেই রয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীত আরেক বাস্তবতা, যেখানে কাজের চাপে নয়, কর্মক্ষেত্রে অলস সময় কাটাতে কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা অনলাইন গেমসে আসক্তির বিষয়টি উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে অলস সময় বিভিন্ন কারণেই আসতে পারে। সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির ত্রুটি, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কর্মী, ব্যবস্থাপকের কর্মদক্ষতার অভাবসহ নানা কারণে এই অলস সময় আসতে পারে। আর মানুষ স্বভাবতই কিছু না করে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। ফলে এই সময়টি তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিংবা অনলাইনে গেম খেলে কাটায়।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ড্রু ব্রডস্কি ও হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের টেরেসা অ্যামাবিল যৌথভাবে এই গবেষণা করেন। এ জন্য তাঁরা ২৯ ধরনের কাজে নিযুক্ত মোট ২ হাজার ১০৩ জন চাকরিজীবীর ওপর জরিপ চালান। অংশগ্রহণকারীদের ৭৮ শতাংশই জানান যে, কর্মক্ষেত্রে মাঝে মাঝেই তাঁরা অলস সময় কাটান। আর প্রায় ২২ শতাংশ জানান এমন অলস সময় তাঁদের প্রতি দিনই আসে।
অ্যান্ড্রু ব্রডস্কি বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে অলস সময়ের আর্থিক প্রভাব উল্লেখ করা মতো। আমাদের হিসাবে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের যে ক্ষতির কথা বলা হয়েছে, তাও এমনকি কম হতে পারে। কারণ আমরা এ ক্ষেত্রে ২০১৪ সালের শুমারি অনুযায়ী আমেরিকায় একজন কর্মীর ঘণ্টাপ্রতি গড় আয় ১৭ দশমিক শূন্য ৯ ডলার হিসাব করেছি। কিন্তু ওই হিসাবমতেই ঘণ্টাপ্রতি ২২ ডলারের চেয়ে বেশি আয় করেন এমন কর্মীর সংখ্যা কম নয়। ফলে অনুপুঙ্খ হিসাব নিলে এই ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে।’