নিউইয়র্কে উচ্চ গতির রেল বিল প্রস্তাব

দশক আগে নিউইয়র্কে ধুম উঠেছিল উচ্চ গতির রেল বসানোর। তখন না হলেও সেই স্বপ্নেরই যেন পুনরুজ্জীবন ঘটল। নিউইয়র্ক অ্যাসেম্বলির একদল সদস্য এই সপ্তাহে উচ্চ গতির রেলের ওপর একটি বিল প্রস্তাব করেছে। তবে বিলটি উচ্চ গতির রেল বাস্তবায়ন শুরুর বিষয়ে নয়, বরং শুধু এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের একটি ‘অনুসন্ধান কমিশন’ গঠন করতে প্রস্তাবিত হয়েছে। কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন, উচ্চ ব্যয়বহুল এই প্রকল্পের দিকে এই মুহূর্তে পা বাড়ানো ভুল সিদ্ধান্ত।
কিন্তু ধরুন, অ্যাসেম্বলির এই সদস্যদের মতো আপনিও নিউইয়র্কে উচ্চ গতির রেলের দলে। সমালোচকদের কোনো কথা শুনবেন না বলে হয়তো কানে তুলো দিলেন। সময় বাঁচাতে, জীবন সহজ করতে নিউইয়র্কের বাসিন্দা হয়ে উচ্চ গতির রেল সুবিধা পাচ্ছেন না বলে লজ্জায় মাথা ঠুকছেন দেয়ালে। উচ্চ গতির রেলে এবার চড়তেই হবে, ভাবছেন। তাহলে মানিব্যাগের দিকেও একটু চোখ বুলিয়ে নিন। নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে প্রশ্ন রাখা হয়েছে, কী পরিমাণ অর্থ এর বাস্তবায়নে ব্যয় করতে হবে, তার ধারণা রাখেন কি? কারণ দিন শেষে এই স্বপ্নের পেছনে বর্ধিত করের নামে ট্যাকের অর্থ গচ্চা দিতে হবে আপনাকেই। বিশ্বাস হচ্ছে না, ক্যালিফোর্নিয়ার গল্প শুনুন তবে।
ক্যালিফোর্নিয়া উচ্চ গতির রেল প্রকল্প শুরু করেছিল এক দশক আগে। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে সান ফ্রান্সেসকো পর্যন্ত উচ্চ গতির রেললাইন নির্মাণ শেষ হবে কবে তা ঈশ্বরই জানেন। তার ওপর নির্মাণ ব্যয় বেড়েই চলেছে। এই প্রকল্পের কারণে জনগণের ওপর করের বোঝা ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলার হয়েছে। শুধুমাত্র প্রথম ধাপের কাজের নির্মাণব্যয়ই ৬০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ১ হাজার ৬০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। সম্ভবত নির্মাণকাজ শেষ হতে হতে এই ব্যয় ৯ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকবে। নির্মাণকালও চার বছর পিছিয়ে নির্ধারিত হয়েছে ২০৩৩।
তার ওপর, এসব ব্যয়ের প্রায় সবই কিছু শৌখিন গ্রাহক চাহিদার প্রকল্পে পরিণত হতে যাচ্ছে। আর তাদের সংখ্যাও সীমিত। এদিকে প্রযুক্তির উন্নয়ন কিন্তু থেমে নেই। ফলে পুরো প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হলেও তা হবে সেকেলে প্রযুক্তির। উদাহরণস্বরূপ, সময় বাঁচাতে এখন চালকবিহীন গাড়ি চলে এসেছে। এটি জীবনকে আরও সহজ করে তুলছে। আর উচ্চ গতির রেলের করের তুলনায় এর মাধ্যমে গচ্ছিত অর্থের খুব কমই ব্যয় করতে হচ্ছে গ্রাহককে। উপরন্তু ক্যালিফোর্নিয়াতেই উচ্চ গতির রেল পেতে যেখানে ২০৩৩ সাল লেগে যাবে, সেখানে নিউইয়র্ক এই প্রকল্প হাতে নিলে কবে নাগাদ সেটি শেষ হবে তাও ভবিষ্যতের ঈশ্বরই জানবেন।
এই প্রকল্পের সমালোচনাকারীরা শুধু বলছেন, নিউইয়র্কের এখন অনেক দিকে সমস্যা। প্রধান সমস্যা, রাজ্যের অর্থনীতি পিছিয়ে পড়ছে। বেকার বাড়ছে। আর উচ্চ গতির রেল হলে যে সুবিধা পাওয়া যাবে তার বিকল্প চিন্তা করার সুযোগ রয়েছে। তাই এ ধরনের প্রকল্প উচ্চাভিলাষী, অপ্রয়োজনীয় ও ‘গরিবের ঘোড়া রোগ’ প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। দিবসে মোমের বাতি জ্বালিয়ে নিশীথে প্রদীপ না পাওয়ার অবস্থা কেউ দেখতে চাইবেন না সমালোচকদের বিশ্বাস।
নিউইয়র্কের অ্যাসেম্বলির সদস্য রন কিম (ডি-কুইন) উচ্চ গতির রেল বিলের প্রধান প্রস্তাবকারী। কিম জানালেন, রাজ্যের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমাদের পুনরায় ভাবার অবকাশ আছে। উচ্চ গতির রেল দিয়ে সেই উচ্চ লক্ষ্যের যাত্রা শুরু হতে পারে।
প্রতিবেদনটিতে মন্তব্য করা হয়েছে, নিউইয়র্কের এখন দরকার করের হার কমানো। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও নিয়মের কঠোরতা শিথিল করাও জরুরি।