ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন আরও নারী

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের মুখ বন্ধ রাখতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। সেই তারকা এখন ‘নিজের সত্য কাহিনি বলতে চাই’ দাবি জানিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর অপ্রকাশ (নন-ডিসক্লোজার) চুক্তি বাতিলের জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালতে মামলা ঠুকেছেন।

গত সোমবার স্টর্মির সঙ্গে যুক্ত হলেন সামার জেরভোস নামের এক অভিনেত্রী। তিনি একসময় ট্রাম্পের রিয়্যালিটি শো ‘এপ্রেনটিস’-এর একজন অংশগ্রহণকারী ছিলেন। তিনিও মুখ খোলার দাবি জানিয়ে মামলা ঠুকেছেন।

জেরভোসের অভিযোগ, প্রায় এক দশক আগে ২০০৭ সালে তিনি ট্রাম্পের নিউইয়র্কের বাসভবনে বেড়াতে যান। এ সময় ট্রাম্প অনুমতি ছাড়াই তাঁর অন্তরঙ্গ হওয়ার চেষ্টা করেন। কিছুদিন পর বেভারলি হিলস হোটেলে নৈশভোজের সময় ট্রাম্প জেরভোসের শরীর স্পর্শ করেন। অশালীন আচরণ করেন।

ট্রাম্পের আইনজীবীর আপত্তি সত্ত্বেও আদালত জেরভোসের অভিযোগ আমলে নিয়েছেন। অভিযোগের সমর্থনে প্রমাণপত্র সংগ্রহে সম্মতি জানিয়েছেন।

একই দিন ট্রাম্পের জন্য আরও একটি নারীঘটিত দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছিল। এদিন ক্যারেন ম্যাকডুগাল নামে প্লেবয় ম্যাগাজিনের একজন সাবেক ‘প্লেমেট’ ন্যাশনাল এনকোয়ারার নামের একটি ট্যাবলয়েডের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

ম্যাকডুগালের অভিযোগ, এক দশক আগে তিনিও ট্রাম্পের সঙ্গে গোপন প্রণয়ে যুক্ত ছিলেন। পরে দেড় লাখ ডলার দিয়ে তাঁর মুখ বন্ধ রাখার জন্য চুক্তি হয়। তিনি (ম্যাকডুগাল) এখন এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চান। তিনি চান—যেন প্রকৃত সত্য প্রকাশিত হয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর আইনজীবীরা যথারীতি সব অভিযোগ ‘অসত্য’ বলে নাকচ করে দিয়েছেন। তাঁদের সবচেয়ে আপত্তি আদালত কর্তৃক মামলা আমলে নেওয়া। এ ব্যাপারে তাঁদের যুক্তি, দায়িত্ব পালনরত একজন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না। তা ছাড়া প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে যে মন্তব্য করেছেন (অর্থাৎ তাঁদের কথা মিথ্যা বলেছেন), তা একধরনের রাজনৈতিক অভিমত, যা মার্কিন শাসনতন্ত্রের প্রথম সংশোধনী দ্বারা সংরক্ষিত।

কোনো আদালত ট্রাম্প ও তাঁর আইনজীবীদের যুক্তি আমলে নেবেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে নিউইয়র্কের আদালতের প্রাথমিক সম্মতি থেকে ঠাওর করা যায়, এসব সম্ভাব্য মামলার বাতাস কোন দিকে বইতে পারে।

নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টের বিচারক জেনিফার শেখটার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার সময় মনে করিয়ে দেন, প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের বিরুদ্ধেও একই রকম অভিযোগ এনেছিলেন আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের কর্মচারী পলা জোন্স। পরে সেই মামলার সূত্র ধরেই ক্লিনটন মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে অভিশংসিত হয়েছিলেন।

বিচারপতি শেখটার তাঁর সিদ্ধান্তে বলেন, কোনো ব্যক্তি, তা তিনি যে-ই হোন, আইনের ঊর্ধ্বে নন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন ব্যক্তিগতভাবে কিছু করেন, তাঁর আইন থেকে নিষ্কৃতি দাবি করার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।

নিউইয়র্কের আদালতে মামলা শুরুর অনুমতির অর্থ—ভবিষ্যতে কোনো একসময় অভিযোগের ব্যাপারে সওয়াল-জবাবের জন্য হাজিরা দিতে বাধ্য হবেন ট্রাম্প।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, শিগগিরই এই হাজিরার সম্ভাবনা নেই। ট্রাম্পের আইনজীবীরা চেষ্টা করবেন এই শুনানি যত দিন সম্ভব পেছাতে।

ট্রাম্পের জন্য আশু চ্যালেঞ্জ হলো—এ অভিযোগকারীরা যাতে মুখ না খোলেন, তা নিশ্চিত করা।

ট্রাম্পের আইনজীবীরা ইতিমধ্যেই চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে স্টর্মির কাছে ২০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করে বসেছেন। সেই হুমকিতে অবশ্য স্টর্মি খুব ভীত বলে মনে হয় না। তিনি সিবিএস টিভিকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারটি ২৫ মার্চ প্রচারিত হবে। অন্যদিকে ম্যাকডুগালও বৃহস্পতিবার সিএনএনকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।