নিউইয়র্ক, দ্বিতীয় ঢাকা তুমি কেমন আছ?

একই গল্প বারবার করি, পুরোনো হয় না, তাই বলি আবারও, ১৯৯৫ সালে প্রথমবার আমেরিকা এসে এক মাস ছিলাম কলোরাডো স্প্রিংসে, একটা নির্জন মোটেলে। একজনও বাঙালির দেখা পাইনি, একবেলাও ভাত পাইনি, চিঠি লিখতাম দেশে, সেসব পৌঁছেছিল আমি ঢাকায় ফেরার পর, আমার মেয়ের তখন চল্লিশ দিন বয়স, রোজ রাতে কাঁদতাম, মেয়ের কথা ভেবে, ভাতের জন্য, ভাষার জন্য, দেশের জন্য।
তারপর আসি নিউইয়র্কে, যে ট্যাক্সিতে উঠেছিলাম, তার চালক বাংলাদেশি, ম্যানহাটনে যে পাঁচতারা হোটেলে রেখেছিল, তার নিচের রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশি ম্যানেজার, মেট্রোরেলে উঠে শুনি বাংলায় কথোপকথন। তারপর বাংলা পত্রিকা অফিসে গেলাম, জ্যাকসন হাইটসে আলাউদ্দীনের দোকানে গিয়ে গভীর রাতে আড্ডা দিলাম বাঙালি বন্ধুদের সঙ্গে।
ওই সময় কলোরাডো স্প্রিংসে একরাতে আমাকে ভাত খাওয়াতে গাড়ি ড্রাইভ করে নিয়ে গিয়েছিলেন রানা ভাই। ২০১৭ সালে তাঁকে পেলাম ক্যালিফোর্নিয়ায়, স্যাক্রামেন্টোতে, রাজীবের বাড়িতে। তিনি তাঁর টেসলা গাড়িতে ওঠালেন। আমাদের বাঙালিরা নিউইয়র্কে গত ২০-৩০ বছরে সবাই ভালো করছেন।
দ্বিতীয় ঢাকা নিউইয়র্কে প্রথম আলো বেরোল তা-ও এক বছর হয়ে গেল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটার কথা মনে পড়ছে। এখন এই লেখা লিখছি ঢাকায় বসে, কিন্তু আমার মনের মধ্যে ঘোরতর টান, নিউইয়র্ক আমাকে ডাকছে, তার বইমেলা, তার বিরিয়ানি, চটপটি, তার বাংলা গানের আসর। শুধু কি নিউইয়র্ক, আমাকে ডাকছে ডিসি, ডাকছে বোস্টন, ডাকছে সানফ্রান্সিসকো, অ্যারিজোনা, এলএ...

আশ্চর্য যে আমি দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি গেছি আমেরিকাতে, কারণ ওখানকার বাংলাদেশিরা আমাকে নেমন্তন্ন করেন। কিংবা সত্যি নিউইয়র্ক দ্বিতীয় ঢাকা। অন্যদিকে আমেরিকাপ্রবাসীদের হৃদয়জুড়ে বাংলাদেশ। প্রথম প্রজন্ম দেশকে ভুলতে পারবেন না, দেশের জন্য তাঁরা কাঁদবেন, দেশের জয়েই তাঁরা হাসবেন। তাঁদের শরীর পড়ে আছে বিদেশে, মনটা নিত্য থাকে দেশেই।
আপনাদের অভিবাদন। উপলক্ষ প্রথম আলোর প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সব পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী, সাংবাদিক, কর্মী, পৃষ্ঠপোষকদের ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা। সবার মঙ্গল কামনা করি।