অনন্ত বিজয়ের খুনিদের বিচার দাবি, নিউইয়র্কের আলোক প্রজ্বালন

বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক অনন্ত বিজয় দাশের হত্যার বিচারের দাবিতে শনিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে কর্মসূচি পালন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো
বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক অনন্ত বিজয় দাশের হত্যার বিচারের দাবিতে শনিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে কর্মসূচি পালন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক অনন্ত বিজয় দাশ স্মরণে আলোক প্রজ্বালন করা হয় শনিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে। অনন্ত হত্যার তিন বছর উপলক্ষে নিউইয়র্কের মুক্তচিন্তার প্রবাসীরা এ কর্মসূচির আয়োজন করেন। 

প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লার সভাপতিত্বে কর্মসূচিটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ও নাট্যকার তোফাজ্জল লিটন। খুনিদের বিচার চেয়ে বক্তব্য দেন অধিকারকর্মী মুজাহিদ আনসারি, শিতাংশু গুহ, জাকির আহমেদ রনি, সাংস্কৃতিক কর্মী গোপাল স্যান্যাল, মাহতাব সোহেল, শিবলী সাদিক, শুভ রয় ও ব্লগার সুজন করিম।

নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত প্রথম সাপ্তাহিক প্রবাস-এর সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, মুক্তচিন্তার প্রসারের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অনলাইনে অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবতার কথা বলতে হবে প্রত্যেকের নিজের জায়গা থেকে।

সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী মুজাহিদ আনসারি বলেন, ‘ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা সব সময় চিন্তাশীল ব্যক্তিদের নানা অপবাদ দিয়ে হত্যা করেছে। আগে তারা মানুষ হত্যা করত মুরতাদ আখ্যা দিয়ে, এখন করে নাস্তিক বলে। এত মানুষ হত্যা করেও তারা বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বাংলাদেশের কৃত্রিম উপগ্রহ আজ মহাকাশে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে কেউ রুখতে পারবে না। যদি অনন্ত হত্যার বিচার না হয়, যদি অনন্তরা হেরে যায়, তবে বাংলাদেশও হেরে যাবে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ যেভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, তাতে সে হেরে যেতে পারে না।’
মানবাধিকারকর্মী শিতাংশু গুহ বলেন, বিচার চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যারা মুক্তচিন্তা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও মানবিক বিশ্বের স্বপ্ন দেখে। তাদের সহযোগিতা করতে হবে। নিজের জায়গা থেকে অর্থনৈতিকভাবে ও সামাজিকভাবে তাদের পাশে থাকতে হবে।

ঢাকা গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক জাকির আহমেদ রনি বলেন, ‘মৌলবাদের কালো থাবায় বারবার বিপর্যস্ত হয়েছে মুক্তচিন্তা। অভিজিৎ রায়কে খুনের পর ধর্মান্ধদের চাপাতির আঘাতে ধারাবাহিকভাবে খুন হয়েছেন ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নীল, ফয়সাল আরেফীন দীপন, নাজিমুদ্দিন সামাদ, অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী, জুলহাস মান্নান, মাহবুব তনয়সহ অনেকে। যত দিন পর্যন্ত এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার না হবে, তত দিন পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিচারের দাবি জানিয়ে যাব।’

ব্লগার সুজন করিম বলেন, ‘নাস্তিক হলেই কি আমাকে মেরে ফেলতে হবে? আর মেরে ফেলার পর রাষ্ট্র যদি সেই বিচার না করে, তাহলে সেই উগ্র মৌলবাদীদের সঙ্গে রাষ্ট্রের পার্থক্য কী। আমি কারও কাছে কিছুর বিচার চাই না। আমি চাই অনন্তরা যে সমাজ পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছিলেন, তা আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।’

বাংলাদেশে মানবতা ও যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের অগ্রপথিক, বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক, বিজ্ঞান পত্রিকা যুক্তির সম্পাদক অনন্ত বিজয় দাশ। তিনি ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেটে ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর চাপাতির আঘাতে নির্মমভাবে খুন হন।