প্রাথমিকে হারলেও লক্ষ্যে অবিচল নিনা

১৫ মে দিনটি আমাদের হলো না। পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক বাছাই পর্বে জয়ী হতে পারেননি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নিনা আহমেদ। ফিলাডেলফিয়ার কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-১ থেকে প্রথমে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক বাছাইয়ের লড়াইয়ে নেমেও নির্বাচনী এলাকার নতুন সীমানা নির্ধারণের কারণে নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি। নাম লেখান লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদের লড়াইয়ে। 

১৫ মে ডেমোক্র্যাটদের প্রাথমিক বাছাইয়ে নিনা এই লড়াইয়ে জয়ী আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের জন্য অনন্য মর্যাদার হতো দিনটি। কেননা, তিনি জয়ী হলে জয়ী হতো বাংলাদেশও। মূল নির্বাচনে একজন ডেমোক্র্যাট হিসেবে সহজেই তিনি সেখানে জয় পেতে পারতেন। কিন্তু তার আগের প্রাথমিক বাছাইয়ে তিনি হেরে গেলেন। এদিন নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাডউকের মেয়র জন ফাটারম্যান জয়ী হয়েছেন। স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো ফাটারম্যানের এই জয়কে ‘অঘটন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কেননা জয়ের দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিনা আহমেদ।
বাছাই পর্বের ভোটের ফলাফলের পর এক বক্তৃতায় নিনা আহমেদ বলেন, তিনি থামবেন না। মানুষের যে ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন তাঁর জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। এই নির্বাচন তাঁর নিজের জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা। কয়েক বছর আগেও তিনি ভাবতে পারেননি, এমন একটি বড় পদের জন্য তিনি লড়বেন। গত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে নেমে তিনি যে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন, তাঁর জন্য তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।
নিজে নারী, অভিবাসী ও অশ্বেতাঙ্গ হয়েও আমেরিকার নির্বাচনী মাঠে যে ভালোবাসা পেয়েছেন, তাঁর জন্য উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে নিনা আহমেদ বলেছেন, এটিই আমেরিকার সমাজ ও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এই আমেরিকাকে একটি উৎকৃষ্ট ও মহান দেশ হিসেবে দেখার লড়াই অব্যাহত থাকবে। নিনা আহমেদ বলেন, এই নির্বাচনে হারের কারণে তাঁর কাজ থেমে যায়নি। আমেরিকাকে একটি উৎকৃষ্ট দেশ হিসেবে দেখার কাজ সবাইকে নিয়ে তিনি কাজ করে যাবেন।
নিনা আহমেদ কৃতজ্ঞ চিত্তে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বাংলাদেশি আমেরিকানদের পক্ষ থেকে যে অপার সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একজন অভিবাসী ও একইসঙ্গে নারী প্রতিদ্বন্দ্বী নিনা আহমেদ মাঠে অনেক রকম অপপ্রচারের মুখে পড়েছেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন। নিউইয়র্কে তহবিল সংগ্রহের একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘ভোটের ময়দানে জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারণাও বেড়ে চলছে। তবে আমি থামার মানুষ নই। দুই যুগের বেশি সময় ধরে তৃণমূলের অভিবাসী, খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ের জন্য কাজের সময় এসব আমি অনুভব করতে শিখেছি। আমি এটাও জানি, নির্বাচনে জয়ী হতে হলে মোটা চামড়া লাগে।’
সেই মোটা চামড়া নিয়েই মাঠ কামড়ে পড়েছিলেন নিনা আহমেদ। তবে শেষ দিনে হেরেছেন। জয়ী ফাটারম্যানের সঙ্গে তাঁর ভোটের ব্যবধান ছিল এক লাখের বেশি। ভোটের মাঠে শতভাগ উপস্থিতি টের পাওয়া গেছে এই নির্বাচনে। ড. নিনা পেয়েছেন ১ লাখ ৮২ হাজার ১০৮ ভোট। অন্যদিকে বিজয়ী প্রার্থী জন ফ্যাটারম্যান পেয়েছেন ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৮৮ ভোট। দলের এই প্রাথমিক বাছাইয়ে ডেমোক্র্যাট দলের মোট চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।
নিনার এই পরাজয়ে কিছুটা হতাশ ফিলাডেলফিয়ার বাংলাদেশি ও দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটি। সেই সঙ্গে নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশি সম্প্রদায় যাঁরা দিনের পর দিন তহবিল সংগ্রহে কাজ করেছিলেন, তাঁরাও বেশ হতাশ হয়েছেন। তবে, এই নির্বাচনই নিনার শেষ নয়। তিনি ভবিষ্যতে আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে একটা ভালো অবস্থান করে নেবেন। হারের পরও রাজনীতিতে মূল লক্ষ্য তিনি অবিচল থাকবেন, বাংলাদেশ থেকে আসা প্রথম প্রজন্মের আমেরিকান হিসেবে তিনি সবার মুখ উজ্জ্বল করবেন—এমন প্রত্যাশা করছেন নিনা আহমেদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা।