যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের আশু সম্ভাবনা নেই

এ বছর ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডের এক স্কুলে ভয়াবহ গুলিবর্ষণের ঘটনার পর দেশজুড়ে আওয়াজ উঠেছিল, ‘আর নয়’। তিন মাস কেটে গেছে, কিন্তু অবস্থার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। তিন দিন আগে টেক্সাসের গ্যালভাস্টনের একটি স্কুলে বন্দুকের গুলিতে ১০ জনের মৃত্যুর যে ঘটনা ঘটে, তা ছিল ২০১৮ সালে স্কুলে গুলিবর্ষণের ফলে হতাহত হওয়ার ২২তম ঘটনা। অর্থাৎ সপ্তাহে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে।


এই তথ্য উদ্ধৃত করে খ্যাতনামা ভাষ্যকার ফরিদ জাকারিয়া লিখেছেন, আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলিবর্ষণের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে এক ব্যতিক্রমী অবস্থানে রয়েছে। পৃথিবীর অন্য যেকোনো শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় এই দেশে বন্দুকের গুলিতে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ গুণ বা তার চেয়েও বেশি। জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে বন্দুক থেকে মৃত্যুর সংখ্যা কার্যত শূন্য। যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা বছরে ৩০ হাজারের মতো।

এই কঠোর বাস্তবতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ একমত, এই অবস্থা পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনাও নেই। এর কারণ, একদিকে এ দেশের বন্দুকের পক্ষে জনমত, অন্যদিকে শক্তিশালী আগ্নেয়াস্ত্র লবি। এই আগ্নেয়াস্ত্র লবির নেতৃত্বে রয়েছে ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন নামে পরিচিত একটি সংগঠন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই সংগঠন নিজের পছন্দমতো রাজনীতিকদের জিতিয়ে আনতে ৫৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। এই নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রধান সুবিধাভোগী ছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর নির্বাচনী প্রচারের পক্ষে এনআরএ ব্যয় করে ৩১ মিলিয়ন ডলার।

আগ্নেয়াস্ত্র লবির এই সমর্থনের প্রতিদান দিতে ভোলেননি ট্রাম্প। ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোরিডার স্কুলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর ট্রাম্প ইঙ্গিত করেছিলেন আগ্নেয়াস্ত্রের সহজ বিক্রি বন্ধের ব্যাপারে ‘কমনসেন্স’ আইন বাস্তবায়নে তিনি আগ্রহী। বন্দুক কিনতে হলে কমপক্ষে ১৮ বছর বয়স হতে হবে, এমন প্রস্তাব সমর্থনের কথাও তিনি জানিয়েছিলেন। সে কথা বলার কিছুদিন পর এনআরএর সঙ্গে এক বৈঠকের পর ট্রাম্প তাঁর অবস্থান বদলে ফেলেন। স্কুলে গুলিবর্ষণের ঘটনা বন্ধের তাঁর পাল্টা প্রস্তাব ছিল, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নয়, স্কুলে শিক্ষকের হাতে বন্দুক তুলে দেওয়া হোক।

বস্তুত, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এই প্রশাসন ও রিপাবলিকান পার্টি নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য ওবামা প্রশাসন যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, একের পর এক তা হয় বাতিল করেছে, নয়তো শিথিল করার উদ্যোগ নিয়েছে।

যেমন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ওবামা আমলে গৃহীত এক আইন রদের নির্দেশ দেন, যার অধীনে মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের বন্দুক কেনার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে মার্কিন কংগ্রেস এক প্রস্তাবে ‘লুক্কায়িত অবস্থায়’ বন্দুক বহনের পক্ষে মতো দেয়। সবাই একমত, বন্দুক থেকে হত্যা ঘটনার পেছনে একটি বড় কারণ মানসিক রোগ। এমন ব্যক্তিরা যাতে বন্দুক না কিনতে পারে, এ জন্য দরকার একটি জাতীয় আগ্নেয়াস্ত্র ডেটাবেইস। অথচ ২০১৯ সালের যে বাজেট প্রস্তাব ট্রাম্প প্রশাসন কংগ্রেসের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করে, তাতে এই ডেটাবেইসে বন্দুক কেনাবেচার উপাত্ত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেট থেকে ১৬ শতাংশ হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়।

কোনো সন্দেহ নেই, মার্কিন রাজনীতির নেতৃত্বে পরিবর্তন না এলে আগ্নেয়াস্ত্র প্রশ্নে পরিস্থিতি বদলাবে না। এ কথা অন্য অনেকের চেয়ে স্পষ্ট করে বলেছেন রাত্রিকালীন কমেডি শোর প্রভাবশালী হোস্ট জিমি কিমেল। গত শুক্রবার তিনি দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অথবা কংগ্রেসের সদস্যরা প্রার্থনা ও হতাহতের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কিছুই করবে না। কারণ, তাঁদের জন্য শিশুদের নিরাপত্তার চেয়ে অনেক জরুরি এনআরএর সমর্থন। যা করার দেশের মানুষকেই করতে হবে। পরিবর্তন তখনই আসবে, যখন আমরা পরিবর্তন সমর্থন করে—এমন রাজনীতিকদের নির্বাচিত করব।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচকদের কাছে সেই সুযোগ আসছে এই বছর নভেম্বরে, যখন কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সদস্যরা ভোটের মুখোমুখি হবেন।