'জয়া হল' অনুষ্ঠানপ্রিয় স্বদেশিদের ঠিকানা

নিউইয়র্কের কুইন্স ভিলেজ এলাকায় জয়া হল
নিউইয়র্কের কুইন্স ভিলেজ এলাকায় জয়া হল

নিত্য জেগে থাকা নিউইয়র্কে প্রবাসীরাও জেগে থাকেন নিত্য প্রহর। উৎসব আর অনুষ্ঠানপ্রিয় প্রবাসীদের প্রাণচাঞ্চল্যে এ নগরী সরগরম থাকে পুরো বছর। নিউইয়র্কে প্রবাসী মালিকানাধীন পার্টি হল খুব একটা নেই। ভিড়বাট্টার মধ্যে স্বজন-পরিজন নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে প্রবাসীদের ছুটতে হয় এখানে-ওখানে। এই অভাব পূরণ করেছে প্রবাসী মালিকানাধীন ‘জয়া হল’। বাংলাদেশিবহুল এলাকার নাগালের মধ্যেই কুইন্স ভিলেজ এলাকার জয়া হল ক্রমশ পার্টিপ্রিয় স্বদেশিদের আনন্দ অনুষ্ঠানের ঠিকানা হয়ে উঠছে।
জয়া হলের অন্যতম স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলীম বলেন, ‘শুধু ব্যবসার উদ্দেশ্যে নয়, কমিউনিটির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই “জয়া হল” করেছি। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি পরিবার কয়েক যুগ থেকেই নিউইয়র্কের পাঁচটি বরোতে বসবাস করছেন। দিনে দিনে এ সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশি অধ্যুষিত কুইন্সের জ্যামাইকা, ওজন পার্ক প্রভৃতি এলাকায় বসবাসরতদের বিয়ের সময়ের অনুষ্ঠানের জন্য পার্টি হলের অভাব অনুভব করি। ফলে আমাদের অভিবাসী পরিবারগুলোর নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। কোনো বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে বিদেশি মালিকানাধীন হলগুলোর দ্বারস্থ হতে হতো।

মোহাম্মদ আলীম
মোহাম্মদ আলীম

মোহাম্মদ আলীম বলেন, বিদেশি পার্টি হলগুলোর মালিকেরা প্রবাসীদের কাছ থেকে অধিক অর্থ নিয়ে নিয়েছে। তখন অভিবাসীদের কাছে অন্য কোনো বিকল্প ছিল না। সীমিত আয়ের লোকজনকে আর্থিক বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো। শতভাগ বেশি অর্থ আদায় করে নিত পার্টি হলের ভাড়া ও নানা ফি বাবদ। তা ছাড়া হালাল খাবার পরিবেশনেও ছিল বিড়ম্বনা। কারণ হারাম-হালাল একই হাঁড়িতে রান্না করা হতো। অনেকেই অসন্তুষ্ট হতেন। বিকল্প না থাকায় নীরবে মেনে নিতে হতো।
খোলামেলা আলাপে মোহাম্মদ আলীম বলেন, ‘আমেরিকায় এসেছি ১৯৯৩ সালে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েছি। রেস্তোরাঁতে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। কিছুটা সঞ্চয় করে ওজন পার্কে গ্লোবাল ট্রাভেলস ও মানি ট্রান্সফারের ব্যবসা শুরু করি। সেই সাথে কমিউনিটির জন্য একটি বিয়ে, জন্মদিন, গায়েহলুদ—এসবের পার্টি হল করার পরিকল্পনা করতে থাকি।’
জয়া হলে বসে মোহাম্মদ আলীম উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, কয়জন বন্ধুর সাথে পরামর্শক্রমে একটি হল কেনার পরিকল্পনা করি। তিন বছর আগে কুইন্স ভিলেজের উডহ্যাভেন এলাকার এ পার্টি হলটি একজন ভারতীয় মালিকের ছিল। বিশেষ তথ্যদাতার মাধ্যমে জানতে পারি, পার্টি হলটি বিক্রি হবে। তাই যোগাযোগ করে দুই ফ্লোরের ৮৫০ আসনের হলটি কিনে ফেলি। এটি জন্মদিন, গায়েহলুদ, মুখে ভাত, বিয়ের এবং বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, সুইট সিক্সটিনসহ নানা কমিউনিটি অনুষ্ঠানের জন্য আদর্শ পার্টি হল। তিনি বলেন, মানের দিক দিয়ে আমাদের রয়েছে সজাগ দৃষ্টি। কমিউনিটির সহযোগিতায় প্রতি সপ্তাহে আমরা দু-চারটি অনুষ্ঠান করে থাকি। তা ছাড়া বিদেশিদের অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ততা বাড়ছে।
আলীম বলেন, অত্যন্ত পেশাদার শেফের তৈরি সুস্বাদু খাবার তাঁরা পরিবেশন করে থাকেন। জয়া হলের সুনাম এখন সর্বত্র। কমিউনিটির যেকোনো ছোট-বড় অনুষ্ঠানের জন্য জয়া হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য তিনি কমিউনিটির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।