ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করতে কোহেনকে অর্থ দিয়েছিল ইউক্রেন

গত বছরের জুনে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো (বায়ে) ও  যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
গত বছরের জুনে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো (বায়ে) ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কোর একটি বৈঠকের আয়োজন করে দিতে গোপনে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন চার লাখ ডলার নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কিয়েভের এক ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি এ তথ্য জানায়। তবে কোহেন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গত বছরের জুনে হোয়াইট হাউসে বৈঠকটি হয়।

হোয়াইট হাউসে ওই বৈঠক হওয়ার আগে কী হয়েছিল, তা বিস্তারিত জানিয়েছেন পেত্রো পোরোশেঙ্কো প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

এই কর্মকর্তা বলেন, কোহেনকে অর্থ দেওয়ার কারণ, ইউক্রেনে নিবন্ধিত লবিস্ট বা ওয়াশিংটনের ইউক্রেনের দূতাবাস থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পোরোশেঙ্কোর একটি ছবি তোলা ছাড়া আর বেশি কিছু আশা করা যাচ্ছিল না। কিন্তু পোরোশেঙ্কো চাইছিলেন একটি পুরাদস্তুর ‘বৈঠক’ বলে বর্ণনা করা যায় এমন কিছু।

আর এটি করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

মাইকেল কোহেন । ছবি: রয়টার্স
মাইকেল কোহেন । ছবি: রয়টার্স

ওই কর্মকর্তার বক্তব্য অনুসারে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পর্যন্ত পৌঁছাতে পেছনের দরজার সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই দায়িত্ব দেন তাঁর একজন সাবেক সহকারীকে। এই সহকারী আবার এ বিষয়ে একজন বিশ্বস্ত ইউক্রেনিয়ান এমপির সহায়তা চান।

ওই এমপি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের একটি ইহুদি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে তাঁর ব্যক্তিগত যোগাযোগকে কাজে লাগান। এর মাধ্যমে তাঁরা মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেনের কাছে পৌঁছে যান। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি পুরাদস্তুর বৈঠকের আয়োজন করে দেওয়ার জন্য কোহেনকে তখন চার লাখ ডলার দেওয়া হয়।

তবে এই লেনদেনের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানতেন, এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

কিয়েভের দ্বিতীয় আরেকটি সূত্রও একই বিবরণ দিয়েছে। তবে সেখানে বলা হয়, কোহেনকে ছয় লাখ ডলার দেওয়া হয়েছিল।

এসব বক্তব্যের সমর্থনে মাইকেল কোহেনের আর্থিক হিসাবের কিছু তথ্য-প্রমাণ বের করেছেন আরেকজন আইনজীবী মাইকেল অ্যাভেনাত্তি। তিনি পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের হয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা লড়ছেন।

অ্যাভেনাত্তি বলছেন, কোহেনের ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগকে যে সন্দেহজনক কার্যকলাপ প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে দেখা গেছে, ‘ইউক্রেনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট’ একটি খাত থেকে তিনি অর্থ পেয়েছেন।

কিয়েভের ওই উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, কোহেন এ ক্ষেত্রে দণ্ডিত সাবেক এক ডাকাত ফেলিক্স সেটারের সহায়তা দেন। ফেলিক্স একসময় ট্রাম্পের ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন। ফেলিক্সের আইনজীবীও এই দাবি অস্বীকার করেন।

তবে কোহেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পাশাপাশি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তর তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। অবশ্য স্থানীয় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে এক বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে ঘটনাটিকে ‘পুরোপুরি মিথ্যা, কুৎসা রটানো ও সাজানো’ বলে বর্ণনা করা হয়।

গত জুনে যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো ওয়াশিংটনে রওনা দেন, তখনো তিনি হোয়াইট হাউসে আদৌ কতটা সময় পাবেন, তা নিয়ে ভাবছিলেন, শিডিউলে তাঁর জন্য কয়েক মিনিট সময় বরাদ্দ ছিল। হোয়াইট হাউসের কার্যতালিকা অনুযায়ী বলা হয়, পোরোশেঙ্কোর জন্য খুব অল্প সময় বরাদ্দ আছে। কেননা, তখন ট্রাম্পের স্টাফ মিটিং ছিল। তাই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো যেদিন ওয়াশিংটনে রওনা হচ্ছেন, সেদিনও এ নিয়ে দেনদরবার চলছিল।

এ ঘটনায় খেপে যায় ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। কারণ, কোহেনকে হাজার হাজার ডলার দেওয়া হয়েছে পোরোশেঙ্কোর জন্য অল্প সময়ের এক বৈঠকের আয়োজন করতে এবং করমর্দনের জন্য। কিন্তু এর বিনিময়ে তাঁরা যথেষ্ট পাচ্ছেন না। তাঁরা কোহেনের এই নোংরা আয়োজন দেখে খুবই হতাশা প্রকাশ করেন।

কিন্তু পোরোশেঙ্কো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারের সময় কিছু ব্যাপারে ইউক্রেনের নাম আসে।

পল ম্যানাফোর্ট। ছবি: রয়টার্স
পল ম্যানাফোর্ট। ছবি: রয়টার্স

২০১৬ সালের আগস্টে নিউইয়র্ক টাইমস এক নথি প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, ট্রাম্পের প্রচারণা ব্যবস্থাপক পল ম্যানাফোর্ট ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থীদের কাছ থেকে মিলিয়ন ডলার গ্রহণ করেছেন, যা ‘কালো অধ্যায়’ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ইউক্রেনে একটি রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চালানোর সময় এই অর্থ গ্রহণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা ইউক্রেনের জাতীয় দুর্নীতি দমন ব্যুরোর নজরে এলে ম্যানাফোর্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তবে বৈঠক থেকে পোরোশেঙ্কো ফেরার কিছুদিন পরেই ম্যানাফোর্টের বিরুদ্ধে এই তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়।

অনেক সূত্রে মতে, পোরোশেঙ্কো ওই তথ্য ফাঁস করার অনুমোদন দিয়েছিলেন। কারণ, তিনি ধারণা করেছিলেন, হিলারি ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসবেন।