স্যাক্রামেন্টো এরিয়া বাংলাদেশি-আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন উদ্বোধন ও বনভোজন

বনভোজনে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা
বনভোজনে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা

বৃহত্তর স্যাক্রামেন্টো এলাকার বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে ফলসমের লিও হাওয়ার্ড পার্কে উৎসবমুখর পরিবেশে জমজমাট বনভোজনের মাধ্যমে স্যাক্রামেন্টো এরিয়া বাংলাদেশি-আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশনের (সাবা) উদ্বোধন হয় ১২ মে। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী স্যাক্রামেন্টো ও এর পার্শ্ববর্তী শহরগুলোয় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
সাবায় স্যাক্রামেন্টোর পাশাপাশি রয়েছেন ফলসম, এল ডোরাডো, র‍্যাঞ্চোকর্ডোভা, রোজভিল, গ্রানাইট বে, নাটোমাস, এল্কগ্রোভে ও ডেভিসের বাংলাদেশি অভিবাসীরা। এটিকে অনেক বড় ব্যাপার বলছেন স্থানীয়রা।
ডেভিসের এক বাংলাদেশি অভিবাসী বলেন, ‘বিয়ের পর ডেভিসে আসার পর আশপাশের ৫০ মাইলের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি দেখিনি। গত ২৭ বছর ধরে এখানে আছি। এই সময়ের মধ্যে চোখের সামনেই একটু একটু করে এই কমিউনিটি গড়ে উঠেছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ২০০ পরিবার বাস করছে। কমিউনিটি বড় হওয়া সত্ত্বেও এখানে কোনো অ্যাসোসিয়েশন ছিল না। কমিউনিটির সবাই এর অভাব অনুভব করলেও এত দিন এটা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন প্রয়োজনে এখানকার মানুষ একরকম অসহায় বোধ করত। যদিও কিছু মানুষ ব্যক্তিগত উদ্যোগে অন্যদের আপদে-বিপদে এগিয়ে আসতেন। কমিউনিটির লোকজন সব সময় একটা স্বীকৃত নিরপেক্ষ অ্যাসোসিয়েশনের চাহিদা অনুভব করেছেন।’
শেষ পর্যন্ত সাবা গঠনের মধ্য দিয়ে এখানকার বাংলাদেশি-আমেরিকানদের নিজেদের একটি নিরপেক্ষ সংগঠন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলো। তবে এর প্রতিষ্ঠার পথটি সরল ছিল না। ২০১৬ সালের ১৭ জুন কমিউনিটির অভিজ্ঞ সমাজসেবী রানা বিল্লাহ আরও কয়েকজন অভিজ্ঞ অভিবাসীকে নিয়ে ১১ জনের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য একটি অ্যাসোসিয়েশন গড়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ বিষয়ে সবার সাহায্য ও মতামত চেয়ে ই-মেইল পাঠানো হয় কমিটির পক্ষ থেকে। এই ধাপে বিভিন্ন দিক থেকে অ্যাসোসিয়েশন গঠনের আগে কমিউনিটির মধ্যে একটি ভোটাভুটির ব্যবস্থা করার পরামর্শ আসে। এই পরামর্শ অনুযায়ীই ২০১৭ সালের মার্চে ভোট গ্রহণ করা হয়। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে বাংলাদেশি-আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন গড়ার উদ্যোগ স্বীকৃতি পায়। পরে ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি সাতজনের একটি অন্তর্বর্তীকালীন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সহায়তায় গত ২২ এপ্রিল পরবর্তী দুই বছরের জন্য সাবা-এর ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।
১২ মে সাবা-এর উদ্বোধন ও বনভোজন উপলক্ষে ফলসমের লিও হাওয়ার্ড পার্কে সমবেত হন স্থানীয় বাংলাদেশি অভিবাসীরা। দিনব্যাপী এই আয়োজনে সকাল থেকেই সাবা-এর কিছু সদস্য ও অতিথি ব্যস্ত ছিলেন বারবিকিউ গ্রিল নিয়ে। রং-বেরঙের সাজ-সজ্জায় শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি এই আয়োজনকে ভিন্ন মাত্রা দেয়। বড়দের অনেকেই ব্যস্ত ছিলেন ক্যারাম খেলা নিয়ে। সঙ্গে ছিল ঝালমুড়ি আর চায়ের আয়োজন। এ ছাড়া ছোট পরিসরে গল্ফ, ব্রিজ খেলার পাশাপাশি ছিল জমজমাট আড্ডা।
সাবা-এর ফার্স্ট লেডির উদ্যোগে ছিল নারীদের নিয়ে সাতচাড়া ও হাডুডু খেলার আয়োজন, যা খেলোয়াড় ও দর্শক সবার জন্যই ছিল উপভোগ্য। মধ্যাহ্নভোজের পর সাবা-এর উদ্যোক্তা রানা বিল্লাহ সংগঠনের নবগঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। পরে কমিটির সদস্যরা সবার সামনে উপস্থিত হয়ে এই অনুষ্ঠান ও বনভোজনে যোগ দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
ক্যালিফোর্নিয়ার সপ্তম কংগ্রেসনাল জেলার প্রতিনিধি কংগ্রেসম্যান অমি বেরা ছিলেন সাবা-এর এই প্রথম বনভোজনের বিশেষ অতিথি। লাঞ্চের পর বিকেল ৩টার দিকে তিনি বনভোজনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশি অভিবাসীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। উপস্থিতদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন তিনি। এর পর ছিল একটি বিশেষ প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্বটি সঞ্চালনা করেন রানা বিল্লাহ।
বনভোজনের পরদিন অর্থাৎ ১৩ মে ছিল ‘বিশ্ব মা দিবস’। এ জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত সব মায়েদের জন্য সাবা-এর পক্ষ থেকে কেক কেটে দিবসটি অগ্রিম উদ্‌যাপনের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত নারীরা একসঙ্গে কেক কেটে বেশ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে আগাম মা দিবস উদ্‌যাপন করেন। সাবা ও এর কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে https://sabaa.us ওয়েবসাইটে খোঁজ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সংগঠনটির সদস্যরা।