আমেরিকায় কেমন থাকেন বাংলার দাদুরা!

সন্তান, নাতি–নাতনিসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে সুদুর বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় ছুটে আসেন অনেক মা–বাবা
সন্তান, নাতি–নাতনিসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে সুদুর বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় ছুটে আসেন অনেক মা–বাবা

‘দাদুমনি চলে যাবে কেন? রেখে দাও দাদুকে। স্কুল থেকে এসে আমি কার সঙ্গে খেলব?’ পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু ওয়াসির প্রশ্ন এগুলো। বাবা শরীফের উদ্দেশ্যে ওয়াসির ছুড়ে দেওয়া এসব প্রশ্নই বলে দেয় দাদুদের নিয়ে আমেরিকায় বেড়ে ওঠা নাতি-নাতনিদের আবেগ ও চিন্তা কেমন। কিন্তু এ-তো গেল নাতি-নাতনিদের দিক, দাদু-দিদারা কী ভাবছেন? উচিটা শহরের একাধিক পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেল, তাদের মধ্যে এক দ্বিমুখী টান। একদিকে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে থাকা, অন্যদিকে দেশের মাটির টান।
মা-বাবা পরিবার পরিজনসহ হাজারো মধুময় স্মৃতি ফেলে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় এসে বসত গড়েছেন লাখো বাঙালি। তাদের অনেকেই নিজের মতো করে আপন করে নিয়েছেন আমেরিকার মাটিকে। কিন্তু ওই যে পরিবার, তার টান কি ভোলা যায়? না, যায় না। এখানে আসার সময় অনেকে বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেশে রেখে এলেও তাদের অনেকেই প্রতি বছর নাড়ির টানে দেশে ছুটে যান। অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে নিজের মা-বাবাকে একবার হলেও আমেরিকায় ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেক সময়ই দীর্ঘদিনের চিরচেনা সবুজ দেশ ছেড়ে আমেরিকায় আসতে চান না অনেক মা-বাবা। আবার যারা আসেন, অল্প সময় পরই দেশে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। কারণ অপরিচিত পরিবেশ। আবার এই যে বাংলাদেশে ফেরা, এর ক্ষণ যত ঘনিয়ে আসে, ততই বিমর্ষ হয়ে ওঠেন তাঁরা। কারণ সন্তানসন্ততি ছেড়ে চলে যাওয়া, আবার কবে দেখা হবে এই অনিশ্চয়তা।
সন্তানের কাছে ঘুরতে এসে অধিকাংশ মা-বাবাই আবার জড়িয়ে পড়েন এখানে থাকা নাতি-নাতনিদের ভালোবাসার আবর্তে। এখানে বড় হওয়া নাতি-নাতনিরাও দাদু-দিদাকে কাছে পেয়ে যেন চাঁদ হাতে পায়। কারণ আমেরিকার ব্যস্ত ঘড়িতে এমন ‘পারিবারিক আবহ’ বেশ দুর্লভ, যতটা আনতে পারে দাদু-দিদাদের উপস্থিতি। আর রক্তের টান তো রয়েছেই। তাই বিদায়ের ক্ষণ ঘনিয়ে এলে ওয়াসির মতো শিশুদের সামলানো দায় হয়ে পড়ে। বয়সের কারণে প্রকাশ না থাকলেও একই আবেগে ভেতরে ক্ষয় শুরু হয় দাদু-দিদাদেরও।
উচিটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একমাত্র ছেলে ওয়াহিদ রাজিবের সঙ্গে ঈদ কাটাতে এসেছেন তাঁর মা-বাবা। বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম বলেন, ‘টগবগে যুবক অবস্থায় দেশের মুক্তিসংগ্রামে জীবনকে একবার দেখেছি। এখন বৃদ্ধ অবস্থায় দেখছি সন্তানের সুখের ভেতরে। পৃথিবীর সব বা-মায়ের সন্তান ভালো থাকুক এ কামনা করি।’
আবুল হাশেম ও তাঁর স্ত্রী ঈদের পর ফিরে যাবেন দেশে। একদিকে দেশের টান, অন্যদিকে সন্তানের। এই দোটানায় অনেক সময়ই জয়ী হয় দেশের টান। সন্তান সুখে আছে জেনে চেনা পরিবেশেই ফিরে যেতে চান অনেকে। ব্যতিক্রমও দেখা যায়। বৃদ্ধ বয়সে একমাত্র ছেলের কাছেই থাকতে চান অনেক বাবা-মা। ছেলেও তাই হাজার চেষ্টায় এখানে নিজের কাছে নিয়ে আসেন মা-বাবাকে। হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও চেষ্টা করেন সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ষাটোর্ধ্ব এক বাংলাদেশি জানান, জীবনে অনেক কষ্ট করে আমাদের এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন মা-বাবা। সেই মা-বাবা কে ভুল করেও ভোলা যাবে না।