শিক্ষা শেষে ছাড়তে হবে আমেরিকা

আমেরিকায় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি অর্জনের পরদিনই এ দেশ থেকে চলে যেতে হবে। ইউএস সিটিজেন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসের নতুন নীতিমালায় শিক্ষাগ্রহণ সম্পন্ন বা ডিগ্রি নেওয়ার পর অতিরিক্ত সময় অবস্থান করলে ২ থেকে ১০ বছরের জন্য আমেরিকায় নিষিদ্ধ হতে পারেন অভিবাসী মেধাবী শিক্ষার্থীরা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী খসড়া এই নীতিমালা আইনে পরিণত হলে প্রায় ১৫ লাখ উচ্চশিক্ষিত মেধাবী অভিবাসী বিপদে পড়তে পারেন।
১১ মে প্রকাশিত খসড়া নীতিমালায় অভিবাসী শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমনই প্রস্তাব আনা হয়েছে। ইউএসসিআইএসের পরিচালক এল ফ্রান্সিস কিসনা খসড়া নীতি প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অভিবাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিষয়ে আমরা নিবেদিত। নন-ইমিগ্রান্টরা একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে আমেরিকার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। যখন এই উদ্দেশ্য শেষ হয়ে যায়, আমরা প্রত্যাশা করি, তারা চলে যাবে বা অন্য কোন বৈধতা নিয়ে থাকবে। কিসনা বলেন, বার্তাটি পরিষ্কার, আমেরিকার নাগরিক বা বৈধ অভিবাসী নন—এমন ব্যক্তিদের শিক্ষা শেষ হওয়ার পর এখানে থাকার আর সুযোগ নাই।

ওবামা প্রশাসনের হোয়াইট হাউসে সহকারী পরিচালক ছিলেন ডাগ র‍্যান্ড। তিনি বলেন, আমেরিকার অভিবাসনে এক নাটকীয় পরিবর্তন আসছে। এমন পরিবর্তন আর কড়াকড়িতে ১৫ লাখ উচ্চশিক্ষিত অভিবাসী শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বর্তমানে সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের জন্য আমেরিকা শীর্ষস্থানীয় গন্তব্যস্থলে পরিণত হয়েছে, যাঁদের অনেকেই আমেরিকার অর্থনীতিতে তাঁদের প্রতিভা দিয়ে অবদান রাখছেন। আমেরিকায় জন্ম না নিয়েও এ দেশকে তাদের মেধা দিয়ে সমৃদ্ধ করছেন।
অভিবাসী পরিবারকে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে বাউন্ডলেস নামক একটি প্রযুক্তি কোম্পানির সহ প্রতিষ্ঠাতা রেন্ড বলেন, ‘আমাদের সেরা ও প্রতিভাবানদের স্বাগত জানানো উচিত। যদি আমাদের দেশ এই পথটি বন্ধ করে দেয়, অসাধারণ প্রতিযোগিতামূলক সময়ে আমরা আমেরিকানরাই বঞ্চিত হব। অগ্রসর মেধা দিয়ে বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার সুবিধা আমাদের হারাতে হবে।’ তিনি যোগ করেন, প্রস্তাবিত নীতি শিক্ষার্থীদের জীবনে ‘ভয়াবহ অনিশ্চয়তার’ সৃষ্টি করবে।
রেন্ড আরও বলেন, ‘আমি মনে করি না, ভিসা আবেদনের ওপর সরকারের নজর রাখা উচিত। তুলনামূলকভাবে কম শিক্ষার্থীই ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের ভিসা উত্তীর্ণ হতে দেয়। অন্যরা নিয়ম মেনে চলে। সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য অনিশ্চয়তার সৃষ্টি না করে যারা নিয়মানুবর্তিতা করে বিশ্বাস রক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন—তাদের একটি সহনীয় নীতিমালায় নিয়ে আসা যেতে পারে।
বর্তমান ব্যবস্থায় এফ জে বা এম ভিসাধারীদের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ ‘বেআইনি অবস্থানকারী’ হিসেবে চিহ্নিত না করা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষার্থী আমেরিকায় নিরাপদ ছিল। তাদের কেউ তেমন ঘাটাতো না।
চলতি বছরের ৯ আগস্ট থেকে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। শিক্ষা কোর্স শেষ, অন্য কোনো অভিবাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি—এমন এফ জে বা এম ভিসাধারীদের কোর্স শেষ হওয়ার পরদিন থেকেই অবৈধ বলে ধরে নেওয়া হবে। আই-৯৪-এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অন্য কোন গ্রেস পিরিয়ডের অনুমতি না থাকলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী অবৈধ হয়ে পড়বেন। কোন অভিবাসন আদালত বিতাড়নের আদেশ দিলে, আপিল করা হোক বা না হোক, সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী আর বৈধতা থাকবে না।
এমন বহু শিক্ষার্থী আছেন যাঁরা অভিবাসনের মেয়াদ শেষ হয়ে পড়লে আবার বিরতি দিয়ে ভর্তি হন বা বৈধতার অন্য পথ খোঁজেন। এর মধ্যে এমন মেয়াদ উত্তীর্ণ হাজার হাজার শিক্ষার্থী অবৈধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নতুন নিয়মে, যাঁরা এক সঙ্গে থাকার সময় ১৮০ দিনের বেশি বেআইনি উপস্থিত থাকবেন—তাঁরা আবার আমেরিকায় প্রবেশ করার জন্য তিন বছরের বা ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন। বেআইনি উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে আগামী ৯ জুন পর্যন্ত গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বৈধতার সনদ না দিতে পারলে শিক্ষার্থীদের অভিবাসন নিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়তে হতে পারেন।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, যারা কর্ম ভিসায় পরিবর্তনের জন্য আবেদন করবেন—তাদের আবেদন ঝুলে থাকা পর্যন্ত বিতাড়ন করা হবে না। যদি পরিবর্তনের আবেদন মঞ্জুর না হয়, তাহলে পেছনের তারিখ থেকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা শেষ করা ব্যক্তিকে অবৈধ বলে বিবেচনা করা হবে।
ভারত, চীন, বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে উচ্চশিক্ষার্থে প্রচুর মেধাবী শিক্ষার্থী আমেরিকায় আসেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মেধা প্রতিযোগিতায় শীর্ষে থাকা এসব ব্যক্তি অভিবাসনের ঝামেলায় আমেরিকা বিমুখ হলে ক্ষতি হবে আমেরিকারই—এমন মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।