ওয়াশিংটনকে পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত বেইজিং

ওয়াশিংটন যদি বাণিজ্যযুদ্ধের আগুন জ্বালাতেই চায়, তাহলে বেইজিংও পাল্টা জবাব দেবে। ছবি: রয়টার্স
ওয়াশিংটন যদি বাণিজ্যযুদ্ধের আগুন জ্বালাতেই চায়, তাহলে বেইজিংও পাল্টা জবাব দেবে। ছবি: রয়টার্স

ওয়াশিংটন যদি বাণিজ্যযুদ্ধের আগুন জ্বালাতেই চায়, তাহলে বেইজিংও পাল্টা জবাব দেবে। গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী জুনেই চীনের বিনিয়োগের ওপর ট্রাম্পের কড়াকড়ি ও বাড়তি শুল্কের বোঝা বসতে যাচ্ছে, যদি না মেধাস্বত্ব অধিকার বিষয়ে চীন আলোচনায় না যায়—এরপরই চীনের পক্ষ থেকে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াইট হাউস এমন সময় এই ঘোষণা দিল, যখন শুল্ক আরোপের বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মিউচিন জানিয়েছিলেন, উভয় পক্ষ বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে যাওয়ায় শুল্ক আরোপের বিষয়টি স্থগিত থাকবে। তবে মিউচিনের এই মন্তব্যের পর সমালোচকেরা বলতে থাকেন, ট্রাম্প প্রশাসন চীনের বিষয়ে নরম হয়ে গেছে।

চীনে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের চেয়ারম্যান উইলিয়াম জারিট আজ বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি কিছুটা কার্যকর হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটি কোনো কৌশল বলে মনে করছি না। বিষয়টা এমন যে যুক্তরাষ্ট্রে যদি পদক্ষেপ না নেয় বা আমাদের চীনা বন্ধুর ওপর চাপ প্রয়োগ না করে, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে আলোচনা এগোবে না।’

এর আগে গতকাল হোয়াইট হাউস সাফ জানিয়েছে, যেসব পণ্যের ওপর শুল্ক বসছে, তার চূড়ান্ত তালিকা আগামী ১৫ জুনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। এই ঘোষণার এক দিন পর প্রতিক্রিয়ায় চীন জানায়, তারা একরকম বিস্মিত হয়েছে, আবার হয়নি।

এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এটি স্পষ্টতই ওয়াশিংটনে কিছুদিন আগে আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষের যে ঐকমত্যে এসেছিল তার বিপরীত। এমন সিদ্ধান্ত সম্প্রতি এ নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে বলেও মনে করছে চীন।

চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন এখনো আশাবাদী যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঝোঁকের বশে কোনো কাজ করবে না। তবে নিজের স্বার্থরক্ষায় লড়াই করতে প্রস্তুত আছে তারা। তারা বলছে, ‘চীনের আচরণ সব সময় এক, আমরা লড়াই করতে চাই না, তবে লড়াই করতে ভয় পাই না।’

চলতি সপ্তাহেই মার্কিন বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রী উইলবার রোজের চীন সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। ওয়াশিংটনে মে মাসে দুই পক্ষের মধ্যে যে আলোচনা হয়, তার পরিপ্রেক্ষিতেই চীনে যাচ্ছেন তিনি। মে মাসে ওই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন আরও বেশি কৃষি ও জ্বালানি পণ্য কিনবে—এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

শুরুটা করেন ট্রাম্প। মার্কিন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মেধাস্বত্ব হস্তান্তর ও চুরিতে চীন উৎসাহিত করছে—এমনটা নিশ্চিত হওয়ার পর দেশটির ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে ট্রাম্প প্রশাসন। প্রথমে চীনা টেলিকম সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেডটিই করপোরেশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

এ নিষেধাজ্ঞার ফলে জেডটিইর কাছে কোনো ধরনের যন্ত্রাংশ বা সফটওয়্যার বিক্রি করতে পারবে না মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। জেডটিইর বিরুদ্ধে অভিযোগ, মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইরানে টেলিকম সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নিষেধাজ্ঞার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী সাত বছর জেডটিইর কাছে কোনো ধরনের যন্ত্রাংশ বা সফটওয়্যার বিক্রি করতে পারবে না। বছরের পর বছর আলোচনার পরও বেইজিং অবস্থান না বদলানোয় এসব পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানায় হোয়াইট হাউস।

পরে বিষয়টিতে কিছুটা ভারসাম্য আনতে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক চিপ নির্মাতা এনএক্সপি সেমিকন্ডাক্টরসকে কেনার বিষয়টি এগিয়ে নিতে চীনা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ক্লিয়ারেন্স চায় সান ডিয়েগোভিত্তিক কোয়ালকম ইনকরপোরেশন। ৪৪ কোটি বিলিয়ন ডলারের ওই চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। তবে নতুন এই ঘোষণায় বিষয়টি থেমে থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোয়ালকমের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ট্রাম্প একদম পাগল, যদিও পাগলের কৌশল কাজে লাগে।’

গত এপ্রিলে ইস্পাতের ওপর ২৫ ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট। লক্ষ্য দেশীয় শিল্পকে রক্ষা। ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান ইস্পাত রপ্তানিকারক দেশ কানাডা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাও (ডব্লিউটি) সিদ্ধান্তটির সমালোচনা করে। এমনকি নিজ দল রিপাবলিকান সদস্যদেরও সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রাম্প। পরে শক্ত অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে তিনি কানাডা ও মেক্সিকোকে বাদ দিয়ে ওই বাণিজ্যনীতি পাস করেন। ওই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বেইজিং জানায়, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে আইনি পদক্ষেপে যাবে তারা। এরপর আবার চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এরপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় চীন।