কোহেন আইনজীবী না লেঠেল?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন। ছবি: রয়টার্স
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন। ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন বিপদে রয়েছেন। রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাতের প্রশ্নে তাঁর ও ট্রাম্পের গোপন আদান-প্রদানের বিষয়টি তলিয়ে দেখছেন তদন্তরত বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার। রাশিয়া থেকে অবৈধ অর্থ চালাচালিতে তাঁরা দুজন জড়িত থাকতে পারেন বলে ভাবা হচ্ছে।

এক পর্নো তারকার মুখ বন্ধ করতে অর্থ দিয়ে তাঁরা নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করেছেন, সেই সন্দেহে এফবিআই কোহেনের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে মামলা ঠুকেছে। কোহেনের অফিস ও ঘর থেকে বিস্তর নথিপত্র জব্দ করেছে।

পেশায় আইনজীবী হলেও কোহেনের প্রধান পরিচয় তিনি পেছন দরজা দিয়ে ট্রাম্পের তাবৎ ‘জঞ্জাল’ ঝেঁটে বিদায় করে থাকেন। সে জন্য তাঁর অন্য নাম—তিনি ট্রাম্পের ‘ফিক্সার’। এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি এই কাজ করে আসছেন। তবে আইনের মারপ্যাঁচ নয়, সরাসরি হুমকি তাঁর প্রধান অস্ত্র।

এত দিন নানা মুখে এসব অভিযোগ শোনা গেছে। এবার প্রমাণ মিলেছে। বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও প্রথমবারের মতো একটি রেকর্ডিং প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত রেকর্ডিংয়ে কোহেন একজন সাংবাদিককে ট্রাম্পের প্রতি সমালোচনাপূর্ণ কোনো প্রতিবেদন যাতে না ছাপান, সে জন্য সরাসরি হুমকি দেন।

‘ডেইলি বিস্ট’ নামের সংবাদমাধ্যমের এক সাংবাদিক ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে ট্রাম্প ও তাঁর প্রথম স্ত্রী ইভানার বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে একটি প্রতিবেদন করার প্রয়োজনে কোহেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিবাহবিচ্ছেদের অভিযোগপত্রে ইভানা দাবি করেছিলেন, ট্রাম্প তাঁকে ধর্ষণ করেছেন।

প্রতিবেদনটি যাতে ছাপা না হয়, সে জন্য কোহেন প্রথমে ওই সাংবাদিককে অনুরোধ করেন। তারপর সাবধান করে দেন। তাতেও কাজ না হলে মামলার হুমকি দেন। প্রতিবেদন ছাপা হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক ও ‘ডেইলি বিস্ট’-এর বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মামলা দিয়ে দেউলিয়া করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।

রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়, ট্রাম্পের নাম নিয়ে কোহেন বলছেন, ‘আমার কথা লিখে রাখুন, এই প্রতিবেদন ছাপা হলে আপনার সঙ্গে আদালতে দেখা হবে। শুধু আপনার নয়, আপনার পত্রিকার প্রতি পাই-পয়সার জন্য আমি মামলা করব। এই লেখা ছাপানোর কথা মাথায় আনবেন না, আমি বলে রাখলাম।’

কোহেন আরও বলেন, ‘আমি আপনাকে সাবধান করছি। খুব সাবধানে পা ফেলবেন। কারণ আপনার বিরুদ্ধে আমি যা করব তা বিশ্রী রকমের খারাপ কিছু হবে। নিজের কলমের পেছনে লুকাতে পারবেন, সে কথা ভাববেন না। কারণ তেমন কিছু হতে আমি দেব না।’

কোহেনের হাত দিয়েই ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ধরিয়ে দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য—যাতে ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে স্টর্মি মুখ না খোলেন।

স্টর্মির সঙ্গে একটি ‘নন-ডিসক্লোজার’ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন কোহেন। এ ছাড়া একটি ছাড়পত্র আদায় করেন তিনি, যেখানে স্টর্মি লিখিতভাবে জানান ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই।

স্টর্মির আইনজীবী মাইকেল আভেনাতি দাবি করেছেন, কোহেন ভয় দেখিয়ে এই ছাড়পত্র আদায় করেছেন।

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বর্ণবাদী হিসেবে পরিচিত বিতর্কিত দক্ষিণপন্থী লেখক দিনেশ ডি’সুজাকে নির্বাচনী তহবিল তছরুপের দায়ে পাওয়া শাস্তি মাফ করে দিয়েছেন।

কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য শাস্তিপ্রাপ্ত ফ্যাশন ডিজাইনার মার্থা স্টুয়ার্টকেও মাফ করে দেবেন বলে ট্রাম্প জানিয়েছেন।

হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া ট্রাম্প কেন এমন ব্যবস্থা নিতে গেলেন? কেউ কেউ বলছেন, মাইকেল কোহেন যাতে রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাতের ব্যাপারে ম্যুলারকে সহযোগিতার কথা মাথায় না আনেন, সে জন্য তাঁকে সব শাস্তি মাফের আগাম আশ্বাস দিতেই এমন ব্যবস্থা নিয়েছেন ট্রাম্প।