'একলা চলো নীতি' বজায় রাখলেন ট্রাম্প

কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-সেভেন বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ছবি: রয়টার্স
কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-সেভেন বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ছবি: রয়টার্স

কানাডাতে অনুষ্ঠিত জি-সেভেন বৈঠকের যৌথ সমাপনী ঘোষণা থেকে নিজের সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কানাডা প্রতারণা করেছে এমন অভিযোগ করেছেন তিনি। ট্রাম্পের অভিযোগ অন্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বিরাট অঙ্কের শুল্ক বসাচ্ছে। তবে ট্রাম্প সমর্থন না দিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বাকিরা পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন সমাপনী ঘোষণায়।

গত শুক্রবার কানাডাতে শুরু হয় শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-সেভেন সম্মেলন। দুদিনব্যাপী এই সম্মেলনের শেষ দিন ছিল গতকাল শনিবার। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেষ দিন জাস্টিন ট্রুডো ঘোষণা করেন, আমরা সবাই খুশি যে সবার সম্মতিতে আমরা যৌথ সমাপনী ঘোষণা প্রকাশ করেছি। তাঁর বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র ওই ঘোষণায় সমর্থন দিয়েছে এমন ইঙ্গিত ছিল। তবে পরে এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র ওই ঘোষণা থেকে সরে এসেছে এবং কোনো সাক্ষর করেনি। তিনি ট্রুডোকে ‘অসৎ’ ও ‘দুর্বল’ বলে অভিহিত করেন।

ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর মার্কিন শুল্কের চাপ তৈরি হওয়ায় এবার ‘নিয়ন্ত্রক-ভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থা’ -এর পক্ষে মত দেন যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্য দেশ। ১ জুলাই থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রুডো বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখিয়ে ট্রাম্প ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্ক বসিয়েছেন এটি ‘অপমানজনক’। তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক তবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা এবং দৃঢ়তার সঙ্গে আমরা ১ জুলাই থেকে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে চলব। কানাডীয়রা নম্র ও সমঝদার, তার মানে এই নয় আমরা চারপাশ থেকে ধাক্কা খাব।’

ট্রুডোর এই সংবাদ সম্মেলন চটিয়ে দিয়েছে ট্রাম্পকে। জি সেভেন সম্মেলন শেষে সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে শীর্ষবৈঠকে যোগ দিতে গেছেন তিনি। পথে এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প জানান তিনি তাঁর কর্মকর্তাদের যৌথ সমাপনী ঘোষণায় অনুমোদন না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অটোমোবাইল আমদানির ওপর শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলন করে জাস্টিন ট্রুডোর মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছেন, তাই তিনি এই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘সত্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের কৃষক, শ্রমিক ও প্রতিষ্ঠানের ওপর অনেক অনেক বেশি শুল্ক বসিয়েছে কানাডা। তিনি মনে করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো খুবই অসৎ এবং দুর্বল। আমাদের দুগ্ধজাত পণ্যে তিনি ২৭০ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে রেখেছেন। এটি তার জবাব।’

এদিকে সম্মিলিত ইশতেহারে ট্রাম্পের সমর্থন না থাকলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এতে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে। অপরদিকে যুক্তরাজ্য সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও জানান, জি সেভেনের সমাপনী ঘোষণায় পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তার দেশের। জুনের শুরু থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে ইস্পাত আমদানিতে ২৫ শতাংশ ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের বক্তব্য এই সিদ্ধান্ত দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করবে। যা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়নও যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোটরসাইকেল ও অন্য পণ্য আমদানিতে শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেয়। পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ায় ঘোষণা দিয়েছে কানাডা ও মেক্সিকোও।

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেও যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে সম্পর্কটা ছিল বেশ উষ্ণ। সমালোচনার চেয়ে একে অপরকে সমর্থনই দিয়েছেন বেশি। বাণিজ্য নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ব্যবধান আগেও ছিল তবে তা সম্পর্কে চিড় ধরায় নি। একে অপরের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জাস্টিন ট্রুডো। তবে সম্প্রতি কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মেক্সিকো থেকে ধাতু আমদানিতে শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এরপরেই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। এর আগে যে ট্রুডো ট্রাম্পের বিষয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্ভাষণ করেছেন সেই ট্রুডোই এখন কঠোর হয়েছেন। জরিপে দেখা গেছে, কানাডার জনগণও ট্রুডোর কঠোরতার পক্ষেই রয়েছেন।

এবারে জি- সেভেন বৈঠকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই হলো গোলমেলে। প্রথম দিনই ট্রাম্পের সঙ্গে অন্য নেতাদের মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের জি-সেভেনের বৈঠকে আবারও রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান ট্রাম্প। ট্রাম্পের এই প্রস্তাবে অসম্মতি জানান অন্য সদস্য দেশগুলোর নেতারা। ট্রাম্প বলেন, জি-সেভেন আগে জি-এইট ছিল, রাশিয়াকে বের করে দেওয়া হয়। আমাদের উচিত রাশিয়াকে ফিরতে দেওয়া। ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল বলেন, ইউরোপীয় সদস্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের এই ভাবনার সঙ্গে একমত নয়। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো মনে করে ইউক্রেন নিয়ে অগ্রগতি না হলে রাশিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। কানাডাও ট্রাম্পের ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে।