দুই হাজার অভিবাসী শিশু পরিবারবিচ্ছিন্ন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর অভিবাসন-বিরোধী নীতি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর অভিবাসন-বিরোধী নীতি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে মার্কিন প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী অবস্থান দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সীমান্তগুলোকে রীতিমতো বন্দিশিবিরে পরিণত করা হয়েছে। বিশেষত মেক্সিকো সীমান্তে চরম কঠোর হয়ে উঠেছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টরা। এ থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও।

সীমান্তে আটক অভিযানের কারণে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে তারা। গত দেড় মাসে প্রায় দুই হাজার শিশুকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।

মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টার অভিযোগে সীমান্তে আটক করা হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্কদের। আর তাদের সঙ্গে থাকা শিশুদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পৃথক পরিচর্যাকেন্দ্রে। পরিবার-বিচ্ছিন্ন এসব শিশু ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে।

কিন্তু কোনো কিছুতেই অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান থেকে নড়ছে না ট্রাম্প প্রশাসন। ১৪ জুন বরং অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্স এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পক্ষে সাফাই গেয়েই বক্তব্য দিয়েছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, জেফ সেশন্সের এ ঘোষণা অবৈধ অনুপ্রবেশকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করার পক্ষে যায়। অথচ আগে প্রথমবার এ ধরনের সীমান্ত পাড়ির চেষ্টাকে লঘু অপরাধ হিসেবেই দেখা হতো। কিন্তু এখন একই কারণে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা অপরাধী সাব্যস্ত হচ্ছেন। ফলে তাঁদের নেওয়া হচ্ছে আটককেন্দ্রে। আর তাঁদের সঙ্গে থাকা শিশুদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে সরকারি পরিচর্যাকেন্দ্রে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের হিসাবে, গত ১৯ এপ্রিল থেকে ৩১ মের মধ্যে সীমান্তে আটক হওয়া ১ হাজার ৯৪০ ব্যক্তির সঙ্গে থাকা ১ হাজার ৯৯৫ শিশুকে আলাদা করা হয়েছে তাদের অভিভাবকের কাছ থেকে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা এই শিশুদের বয়সসীমা সম্পর্কে কোনো তথ্য অবশ্য দেওয়া হয়নি।

এরই মধ্যে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মার্কিন সরকারকে এমন অমানবিক কার্যক্রম দ্রুত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

মার্কিন প্রশাসনের এই পদক্ষেপে দেশটির প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পল রায়ান অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এই কৌশল আমার জন্য স্বস্তিকর নয়।’

বিষয়টি এমন মাত্রায় গিয়ে ঠেকেছে যে এই সপ্তাহেই শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা ঠেকাতে কংগ্রেসে একটি আইনের খসড়া উত্থাপন করতে যাচ্ছে রিপাবলিকান নেতারা। এই আইনে শিশুদের তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে একসঙ্গে আটক রাখার কথা বলা হয়েছে। এই একই আইনে অবশ্য ১৮ লাখ ড্রিমারকে সুরক্ষা দেওয়া, ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারি বন্ধ ও সীমান্ত নিরাপত্তা তহবিলে আড়াই হাজার কোটি ডলার যোগ করার কথা বলা হয়েছে।

কংগ্রেসের উদারবাদী ও রক্ষণশীল নেতাদের সমঝোতার ভিত্তিতে এই আইন কংগ্রেসে উত্থাপন করা হচ্ছে, যার ওপর ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী সপ্তাহে। তবে প্রেসিডেন্ট কিন্তু এরই মধ্যে জানিয়ে রেখেছেন যে তিনি এমন কোনো আইনে সই করবেন না। যদিও রিপাবলিকান নেতারা জানিয়েছিলেন, এই আইনের প্রতি ট্রাম্পের সমর্থন রয়েছে।