ঈদ ঘিরে চিত্র প্রদর্শনী 'ঈদি'

ফিলাডেলফিয়া শহরের ঐতিহ্যবাহী ডিউক গ্যালারিতে আয়োজিত প্রদর্শনীতে আর্ট স্কুল সারিনাজ আর্টি ক্রাফটির শিক্ষার্থীরা
ফিলাডেলফিয়া শহরের ঐতিহ্যবাহী ডিউক গ্যালারিতে আয়োজিত প্রদর্শনীতে আর্ট স্কুল সারিনাজ আর্টি ক্রাফটির শিক্ষার্থীরা

সাউথ জার্সিভিত্তিক আর্ট স্কুল সারিনাজ আর্টি ক্রাফটির শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো ব্যতিক্রমধর্মী চিত্রপ্রদর্শনী ‘ঈদি’। ফিলাডেলফিয়া শহরের ঐতিহ্যবাহী ডিউক গ্যালারিতে ১৭ জুন ঈদের তৃতীয় দিন এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। মুসলিম সমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে বিষয়বস্তু করে ‘ঈদি’ শীর্ষক বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেন স্কুলের শিক্ষক চিত্রশিল্পী মশিউল চৌধুরী।
ঈদি অর্থ আনন্দ উপহার যা সাধারণত ঈদের দিন বড়দের কাছ থেকে ছোটরা পেয়ে থাকে। আর তাই এই আয়োজন যেন গুরুর কাছ থেকে শিষ্যদের জন্য এক অভিনব ঈদ উপহার।
ঈদি নামটা শুনলেই কেমন যেন নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসে। শৈশবের ঈদের কথা মনে পরে। শেষ রোজার ইফতারের সঙ্গে সঙ্গেই ওই সূর্য ডোবা লালচে পশ্চিমের আকাশের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকার কথা মনে পড়ে। দূরের ওই তাল গাছটির ঠিক এক হাত ওপরেই শাওয়ালের হাসি মাখা বাঁকা চাঁদটা হয়তো এখনই আকাশে উঠবে। কী উত্তেজনা! চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই কে যেন মনে আর কানে বাজাত ‘ও মোর রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’।
কী খুশি! পাড়ার ছেলেমেয়েরা ছুটে যেতো মশাল হাতে ঈদের মিছিলে। মনের রঙ্গে রঙিন হতো মেহেদি রাঙানো হাত। রং লাগত পোলাও চালেও, সেই রঙে তৈরি হতো সুস্বাদু ঈদের খাবার জর্দা। সারা রাত উচ্চ শব্দে কেউ গান বাজিয়ে প্রতিবেশীদের ঈদ আয়োজনে নিরন্তর উৎসাহ ঢালতো। ঘুম থেকে উঠেই ছোট ছেলেমেয়েদের লুকিয়ে রাখা ঈদের নতুন জামা গায়ে অধীর অপেক্ষা ঈদের নামাজ শেষে বড়দের ঘরে ফেরার। আর ওমনি একছুটে দলে দলে এ বাড়ি ও বাড়ি করে দিন শেষে কে কত ঈদি পেল, সেই খুশি নিয়ে একমাত্র আনন্দ বক্স বাংলাদেশ টেলিভিশনের দিকে চোখ রাখতে রাখতে ঘুমিয়ে পড়া। আহ্ কী আনন্দ অনুভূতি! অমূল্য, তুলনাহীন সে সব স্মৃতি।
ঈদি আর্ট শো যেন এই প্রবাসী আমেরিকান বাঙালি প্রজন্মকে সেই আনন্দের ভাগীদার করেছে। ব্যতিক্রমী এই চিত্র প্রদর্শনীতে পুরোটাই ছিল ঈদের আমেজ। প্রদর্শনী শুরু হয়েছে বেরঅ দুইটায়, চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।
উইলিংফোর্ড এলাকার পাহাড়ি পথ ঘেঁষেই বিস্তৃত দৃষ্টিনন্দন জায়গাজুড়ে কমিউনিটি আর্ট সেন্টার ও ডিউক গ্যালারি। সুবিন্যস্ত পাথরের তৈরি গ্যালারির প্রাচীন প্রবেশ দ্বার। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে ওক কাঠের প্রশস্ত সিঁড়ি ও বিশাল মূল গ্যালারি। সেখানে দেয়ালজুড়ে সাজানো আর্ট স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আঁকা অসাধারণ সব চিত্রকর্ম। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী ২০ জন শিল্পীর ৬০টি চিত্রশিল্প প্রদর্শনীতে স্থান পায়।
প্রতিটি চিত্রকর্মেই উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ছবি আঁকার বিষয়বস্তুর মধ্যে মসজিদ ও ঈদগাহের পাশাপাশি ফুল, প্রকৃতি ও পোর্ট্রেটের প্রাধান্য ছিল।
সবাইকে স্বাগতম জানিয়ে গ্যালারি ডিরেক্টর পল বলেন, ‘এই চিত্র প্রদর্শনী তাদের জন্য আনন্দ উপহার’। চিত্রকর্মের পাশাপাশি অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য ছিল মুখরোচক বাংলাদেশি ঈদের খাবার। বাড়তি পাওনা হিসেবে ছিল কমিউনিটি বলিউড ড্যান্স প্রোজেক্টের পরিবেশনায় নৃত্য।
ঈদ মানে আনন্দ। ঈদি চিত্র প্রদর্শনী যেন শিল্পীর হাতের রং তুলির ছোঁয়ায় সেই আনন্দেরই বিরল শৈল্পিক উপস্থাপন।
মননশীল শিল্পসমাজ তৈরির লক্ষ্যে এক ঝাঁক শিশুকিশোর নিয়ে শিল্পী মশিউল চৌধুরী অভিভাবকদের সহায়তায় পাঁচ বছর আগে এই আর্ট স্কুলের কার্যক্রম শুরু করেন। শিল্পী অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ছবি আঁকা শেখানোর পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নানা রকম শিল্প কর্মশালা ও চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এই শিল্পীদের নিয়ে গেল বছর ‘স্বাধীনতার রং’ শীর্ষক আরেকটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। সেবারের বিষয় ছিল বাংলাদেশের বিজয় দিবস। মাত্র পাঁচ বছরে স্কুলটির সাফল্য প্রশংসার দাবিদার।