
আলপনা হাবীব একজন শৌখিন রন্ধনশিল্পী। রন্ধন শিল্পে তাঁর বেশ নামডাক। দেশের প্রধান প্রধান টেলিভিশনের রান্নার অনুষ্ঠানে নিয়মিত নানা ধরনের চমক দেওয়া রান্নার রেসিপি নিয়ে হাসি মুখে হাজির হন তিনি। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত নিউইয়র্ক বইমেলা ২০১৮তে আমন্ত্রিত লেখক হয়ে এসেছিলেন। সঙ্গে ছিল বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা নানা পদের ২৫০ টি খাবারের রেসিপি নিয়ে বিরাট একটি বই।
দু দিনের মেলায় তাঁর স্টলে অনেকই ভিড় করেছেন। তাঁদের মধ্যে যেমন ছিলেন বাংলাদেশ থেকে সদ্য আগত গৃহিণীরা তেমনি ছিলেন নিউইয়র্কে অনেক দিন যাবৎ বসবাসকারী পরিবারের প্রধান ও রান্নাঘরের মূল কর্মকর্তা বা প্রধানের স্ত্রী। এর এক ফাঁকে রন্ধনশিল্পী আলপনা হাবীবের সঙ্গে বসলাম আলাপচারিতায়। শুরুতে বললেন, রান্না আজকাল আর চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। রান্না এখন আর ক্ষুন্নিবৃত্তির উৎস নয়, তা কখনো হয়ে যায় মানসিক প্রফুল্ল সহায়ক একটি শিল্প। কখনো তা পুরোপুরি বিনোদনের একটি স্বস্তির মাধ্যম।
নিজের কথা বলতে গিয়ে বললেন, জন্মেছেন বিলাতের সলিহাল শহরে। রান্নার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। বাসায় আসা মেহমানদের বিভিন্ন রেসিপির খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করতে খুবই আনন্দ পেতেন। এটা তাঁর শখেও পরিণত হয়েছিল। আর শখ মেটাতে গিয়ে প্রথমে পরিবার ও পরে বড় পরিসরে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। স্বজন আর কাছের মানুষের অনুরোধে নিজ বাসায় খুলে বসেন রান্নার স্কুল। বেশি দিন লাগেনি। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে রান্নায় গুণ আর যশের কথা লন্ডন ছেড়ে বাংলাদেশে ছড়িয়ে যায়।
দেশে এসে প্রথমে শুরু করেন দেশ টিভিতে ‘ট্রিক্স রান্নাঘর: অতিথির সাথে’। খুব অল্পদিনে অনুষ্ঠানটি দর্শক-শ্রোতা সর্বোপরি ভোজন রসিকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। আলাপের এই পর্যায়ে জানতে চাইলাম, এই যে এত কম সময়ে জনপ্রিয় হয়ে গেলেন তার রহস্য কী? দু সন্তানের জননী আলপনা হাবীব জানালেন, তিনি সহজ ভাষায়, আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে ও রান্নার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে রান্নার অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের আরেকজন শ্রদ্ধেয় রন্ধনশিল্পী অধ্যাপিকা সিদ্দীকা কবিরের প্রভাব তাঁর ওপর ক্লাশ সিক্স থেকে পড়েছিল।
আলপনা কবির শ্রদ্ধাভরে বলেন, সিদ্দিকা কবীর হলেন তাঁর অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগুরু। শেফ হিসেবে নিজেকে কখনো সেলিব্রিটি মনে হয়? এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে দু-হাত নেড়ে বলতে লাগলেন, ‘কোনো সময় তা মনে করিনি। এখনো করি না। সেলিব্রেটি না বলে আমাকে আপনাদের আপন বোন মনে করেন। হ্যাপি হোম কুক বলতে পারেন।’
এবার বইতে বিশেষ কী আছে তা জানতে চাইলে সংক্ষিপ্তভাবে আলপনা হাবীব বললেন, বইয়ে দেওয়া ২৫০টি বিভিন্ন রেসিপির বেশির ভাগ সহজে বোধগম্য। গৃহকর্ত্রী থেকে শুরু করে গৃহকর্মীরা আমার রেসিপি বুঝতে পারবেন। বইটিতে সনাতনী রান্না থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য, জাপানি, চীনা, কোরীয় ও ইংরেজদের পছন্দের নানা ধরনের রেসিপি দেওয়া আছে। একপর্যায়ে আলপনা হাবীব জানালেন ডি সি বইমেলাতে অংশগ্রহণ শেষে আমেরিকার প্রধান শহর এবং কানাডার টরন্টো শহর ঘুরে এসে আটলান্টায় অনুষ্ঠিতব্য ফোবানা-২০১৮ তে অংশ নেবেন।
আলাপচারিতার এই পর্যায়ে, বিশেষ ধন্যবাদ জানান মেলার আয়োজনকারী মুক্তধারা ফাউন্ডেশনসহ মেলা কমিটিকে। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলার আগ্রহ আছে কিনা জিজ্ঞেস করতেই বলেন, ‘অবশ্যই আছে! আমি বিস্মিত হয়েছি নিউইয়র্কে প্রকাশিত প্রথম আলোকে দেখে। এত সুন্দর ও প্রচুর পাঠযোগ্য লেখা সমৃদ্ধ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকা প্রবাসে বের হচ্ছে দেখে খুবই আনন্দ লাগছে।
গুণী এই রন্ধনশিল্পী হাসি মাখা মুখে পাঠকদের উদ্দেশে শুধু এ টুকু বললেন, ‘রান্নার প্রতি ভালোবাসা রাখুন, জীবন সঙ্গীকে রান্নার সময় সহায়তা করুন এবং সামর্থ্য অনুয়ায়ী রান্নায় বৈচিত্র্য আনুন। উপভোগ করুন আপন রসনা। রান্নায় রয়েছে বাঙালিদের নিজস্ব এক ঐতিহ্য।’