ট্রাম্প-পুতিন সত্যিই এসব কথা বলেছেন?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত সোমবার ফিনল্যান্ডে একান্ত বৈঠক করেন। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত সোমবার ফিনল্যান্ডে একান্ত বৈঠক করেন। ছবি: রয়টার্স
>

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে গত সোমবার একান্ত বৈঠকে বসেন। দোভাষীরা ছাড়া সেখানে অন্য কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তাঁদের বৈঠকের বিষয় নিয়ে শুরু থেকেই সবার আগ্রহ ছিল। নিউইয়র্ক টাইমসের কাছে তাঁদের বৈঠকের একটি অনুলিপি আসে। অনুলিপিটা নিচে দেওয়া হলো:

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প: ইয়োর এক্সিলেন্সি।
ভ্লাদিমির পুতিন: ডোনাল্ড।

ট্রাম্প: আপনাকে অকপটে বলতে চাই, ভ্লাদিমির, আপনি যদি কিছু মনে না করেন, আমাদের এই বৈঠক থেকে সত্যিই কিছু ভালো ফল চাই। ইংল্যান্ডে থেরেসা মের বিষয়টি নিয়ে আমি প্রায় মরতে বসেছি।
পুতিন: আলেক্সান্ডার লিতভিনেকো ও ডন স্টারগেসের মতো সত্যি সত্যি মরে যাচ্ছেন না নিশ্চয়ই, ডোনাল্ড। মনকে একটু বিশ্রাম দিন। আমরা মনে করি, ইউরোপে আপনার সফর দারুণ ফলপ্রসূ হয়েছে।

ট্রাম্প: ধন্যবাদ আপনাকে। রাশিয়াকে নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনের জন্য জার্মানি যে অর্থ দিয়েছিল, তার জন্য আঙ্গেলার সঙ্গে আমার রূঢ় আচরণে দুঃখিত।
পুতিন: না, বরং এটা একটা মারাত্মক কূটকৌশল হিসেবে কাজ করেছে। আর এতে আমাদের লাভই হয়েছে। জার্মানিতে গাজপ্রমবিরোধী এবং রাশিয়াবিরোধী একটা মনোভাব বাড়ছিল। কিন্তু যখনই আপনারা পাইপলাইনের বিরুদ্ধে বলা শুরু করলেন, তখন বার্লিন এই প্রকল্পে সমর্থন দেওয়াকে তাদের জাতীয় গর্ব এবং নীতির বিষয় বলে মনে করতে শুরু করল। এটা ব্যবসার একটা কৌশল, যাদের আপনি বাগে আনতে চান, তাদের এমনভাবে প্ররোচিত করা যেন আপনি তাদের হয়েই কাজ করছেন।

ট্রাম্প: ও আচ্ছা। এটা বিপরীতমুখী মনস্তত্ত্ব। ট্রাম্প ইউনিভার্সিটির সঙ্গে আমরা যা করেছি, এটা ঠিক তার মতো, বোকা লোকদের এমনভাবে বোঝানো যে তারা আবাসন ব্যবসার সাফল্যের গোপনীয়তা শিখতে যাচ্ছে!
পুতিন: ঠিক তা নয়, ডোনাল্ড। এটা একেবারে নির্জলা প্রতারণা।

ট্রাম্প: প্রতারকেরা বলে থাকে, আপনি জেনেও থাকবেন, ভুয়া খবর পরিবেশন করে নির্বাচনে আপনি আমাকে জিতিয়েছেন। আর আমাকে অনেকে বলছে, আপনি (পুতিন) কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করেছেন এবং এটা আমার জয়ের ক্ষেত্রে কলঙ্ক হিসেবে দেখানো হয়। এ জন্য আমি সত্যিই আপনার কাছে দুঃখিত। কিন্তু তারা বলেছে, আপনার সঙ্গে আলোচনায় যেন বিষয়টি আমি তুলে ধরি। আপনি কী বলেন?
পুতিন: ডোনাল্ড, এটা ঠিক আপনাদের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন একবার যেমন বলেছিলেন: আপনি কিছু মানুষকে অনেক সময়ের জন্য বোকা বানাতে পারেন, সব মানুষকে কিছু সময়ের জন্য বোকা বানাতে পারেন। কিন্তু যদি স্বাধীন গণমাধ্যমকে আপনি বিতর্কিত করতে পারেন, গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেন এবং সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়াতে পারেন, তবে আপনি প্রায় সব মানুষকে সব সময়ের জন্য বোকা বানাতে পারেন। কিন্তু এ প্রশ্নের উত্তর হলো ‘না’।

ট্রাম্প: ভ্লাদিমির, আমি আপনাকে বিশ্বাস করি, আমি সত্যিই করি। এতে কোনো অপরাধ নেই। কিন্তু ধূর্ত হিলারি ক্লিনটনকে হারানোর জন্য আপনাকে আমার দরকার ছিল না!
পুতিন: অবশ্যই না। ডোনাল্ড, সময়মতো মিস্টার কমির হস্তক্ষেপ যথেষ্ট ছিল। আপনার সমর্থকদের সমাবেশ এবং আপনার বিরোধীদের বিভ্রান্ত করার পদ্ধতিতে আমরা লাভবানই হয়েছি। যা সম্প্রতি অনেকটা ইউক্রেনের ব্যাপারে ঘটেছে। ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে আপনার একই কৌশল ব্যবহার দেখে আমরা খুশি।

ট্রাম্প: ওহ্‌, তারা অত্যন্ত খারাপ! আমরা এখন বাছাই করা শুরু করেছি! এটা জাসা গ্যাবরের (মার্কিন অভিনেত্রী) সঙ্গে বা অন্য কারও সঙ্গে বিয়ে হওয়ার মতো। আপনি তাঁর জন্য সবকিছুই করবেন এবং পরে আপনি জানেতে পারবেন, আপনাকে তিনি বোকা বানিয়ে আপনার ঘর হাতিয়ে নেবে। না বাবা, ধন্যবাদ!
পুতিন: ডোনাল্ড, এটি যথাযথ তুলনা। সত্যিই আপনি এবং সব মার্কিন করদাতা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এবং যদি আমরা জিজ্ঞাসা করি এটা কেন? এত বেশি অভিবাসনের কারণে ইউরোপীয়রা আর ইউরোপীয়ও নেই। আপনি জানেন কি, ন্যাটোর নতুন সদস্য মন্টেনেগ্রোর প্রায় সবাই মুসলিম, শুধু তুরস্ক ছাড়া?

ট্রাম্প: আমি তো এটা জানি না!
পুতিন: এটা সত্য। আপনার পূর্বসূরি, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাদের ন্যাটোর যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। তারা আপনার (ট্রাম্প) মেয়াদ শুরুর পর থেকে আপনার পেছনে লেগেছে। কল্পনা করুণ, দেখতে পাবেন, ছোট্ট ওই দেশের বিরুদ্ধে আপনার তরুণ মার্কিন সৈন্যদের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ করতে হতে পারে।

ট্রাম্প: আমার চোখে পড়েনি। এই ছোট দেশগুলোর কেউ আমাদের নিরাপত্তার জন্য কোনো কাজে আসবে বলে মনে হয় না।
পুতিন: আপনি সম্ভবত এস্তোনিয়ার মতো দেশগুলোর কথা বলছেন। এ ছাড়াও দূরবর্তী কিছু দেশ আছে, এগুলোর ব্যাপারে আমাদের কথা বলার অনুমতি দেন। আপনি বলবেন, এসব ব্যাপারে কিছু জানেন না।

ট্রাম্প: সত্যি কথা বলতে কি, মানচিত্রে এসব দেশকে খুঁজে পাই না।
পুতিন: ডোনাল্ড, আমাদের লক্ষ্য একই। আমরা মহান ক্রিশ্চিয়ান সভ্যতাকে তুলে ধরতে চাই। কিন্তু পেছন থেকে আমাদের ছুরি মারা হচ্ছে। একই মানুষ ছুরি মারছে! আমি বলতে চাইছি, জর্জ সরোস ও বিল ব্রাউডারের মতো বৈশ্বিক পুঁজিবাদী ব্যক্তি, ‘পুরুষালি’ হিলারি ও ম্যার্কেল এবং ‘স্ত্রীসুলভ’ বারাক ওবামা—তাঁদের কোনো ইচ্ছা নেই এই লড়াই করার। পেছন থেকে ছুরি মারা এই ব্যক্তিদের দিকে মুখ ফিরে অবশ্যই তাকাতে হবে আমাদের।
ডোনাল্ড, রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যে তোড়জোড়, আসুন তা বন্ধ করি।

ট্রাম্প: ব্যক্তিগতভাবে এসব বার্তা দেওয়ার জন্য আপনি ওয়াশিংটনে চলে আসুন।
পুতিন: ওহ্‌ ডোনাল্ড, ভেবেছিলাম আপনি কখনো আমাকে যুক্তরাষ্ট্রে ডাকবেন না।