রিটার্নিং রেসিডেন্ট ভিসা ও ওয়েভার আবেদনের পন্থা

আমেরিকায় গ্রিনকার্ড পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কিছু নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে চলতে হয়। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি অন্য দেশে অবস্থান করলে ফিরে আসার জন্য বিশেষ কিছু পন্থা অবলম্বন করতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় রিটার্নিং রেসিডেন্ট ভিসা ও ওয়েভার অ্যাপ্লিকেশন করতে হয়। এ বিষয়ে করণীয় অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। আজকের আয়োজনে এ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

প্রশ্ন: গ্রিনকার্ড নিয়ে নির্ধারিত সময়ের বেশি আমেরিকার বাইরে থাকলে, ফিরে আসতে হলে কী করতে হবে?
উত্তর: আমেরিকায় বসবাসের জন্য আইনসিদ্ধ স্থায়ী আবাসনের অনুমতি বা গ্রিনকার্ড পাওয়ার পর আপনি যদি কোনোরকম পুনঃপ্রবেশের অনুমতি (রিএন্ট্রি পারমিট) ছাড়া এক বছরের বেশি অথবা রিএন্ট্রি পারমিট নিলেও অনুমোদিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় অন্য দেশে বসবাস করেন, তাহলে অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট) ২১১.১ ধারা অনুযায়ী আপনার গ্রিনকার্ড বাতিল হয়ে যাবে। এর পর যদি আপনি আবার আমেরিকায় প্রবেশ করতে চাইলে আপনাকে আমেরিকার বাইরে থেকে প্রযোজ্য কনস্যুলেট অফিসের মাধ্যমে ‘রিটার্নিং রেসিডেন্ট (এসবি-১) ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
এই রিটার্নিং রেসিডেন্ট ভিসা পেতে হলে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে, (১) আমেরিকার বাইরে যাওয়ার সময় আপনার গ্রিনকার্ড ছিল, (২) আপনি ফিরে আসার স্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়েই আমেরিকার বাইরে গিয়েছিলেন এবং গ্রিনকার্ড ত্যাগের কোনো উদ্দেশ্য আপনার ছিল না এবং (৩) যে বাড়তি সময় আপনি আমেরিকার বাইরে ছিলেন, সেটা এমন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য, যার ওপর আপনার কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এ ছাড়া আপনার আমেরিকায় অবস্থানকালের ট্যাক্স রিটার্ন, আয়ের প্রমাণ (এভিডেন্স অব ইনকাম), আমেরিকায় ছেড়ে আসা পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন-সম্পর্কিত তথ্য-প্রমাণের সঙ্গে ডিএস-১১৭ ফর্ম পূরণ করতে হবে। এই ভিসার আবেদনের জন্য আপনাকে ফি হিসেবে ২২০ ডলার পরিশোধ করতে হবে। রিটার্নিং রেসিডেন্ট ভিসার আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর আপনাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে এবং ডিএস-২৬০ ফর্ম পূরণ করতে হবে, যার জন্য নির্ধারিত ফি ৩২৫ ডলার। তবে রিটার্নিং রেসিডেন্ট ভিসার আবেদন মঞ্জুর না হলে আপনাকে নতুন করে গ্রিনকার্ডের আবেদন করতে হবে।
ফর্ম আই-১৩১, অ্যাপ্লিকেশন ফর অ্যাডভান্স প্যারোল বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট পূরণ করে ৫৭৫ ডলার ফি ও ৮৫ ডলার বায়োমেট্রিক ফি জমা দিলে সাধারণত দুই বছরের মধ্যে আমেরিকায় পুনরায় প্রবেশের এই রিএন্ট্রি পারমিট দেওয়া হয়। আবেদন করার পর আঙুলের ছাপ নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়ে ডাকা হয়। আবেদনের সময় ফর্মে উল্লেখ করলে আমেরিকায় বাইরে যেকোনো কনস্যুলেট অফিস থেকেও আপনি এটি সংগ্রহ করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ দেওয়ার পর আমেরিকার বাইরে যাওয়ার জন্য অ্যাডভান্স প্যারোল বা ট্রাভেল ডকুমেন্টের অপেক্ষা না করেই আপনি চলে যেতে পারেন এবং পরে নির্ধারিত কনস্যুলেট অফিস থেকে এটি সংগ্রহ করে নিতে পারেন।

প্রশ্ন: যার জন্য আই-১৩০ (অ্যাপ্লিকেশন ফর ফ্যামিলি পিটিশন)-এর আবেদন করেছেন, তিনি ওই আবেদন অনুমোদন হওয়ার সময় আমেরিকায় অবৈধভাবে অবস্থান করলে করণীয় কী?
উত্তর: মার্কিন নাগরিকের স্বামী/স্ত্রী (আইআর১) অথবা বাবা-মা (আইআর৫) আমেরিকার ভেতরে বৈধ বা অবৈধ যেকোনোভাবে থাকলে, তাদের প্রত্যেকের জন্য পৃথকভাবে ৫৩৫ ডলার ফিসহ আই-১৩০ ফর্মের সঙ্গে ১১৪০ ডলার ফিসহ আই-৪৮৫ ফর্ম জমা দিতে হবে।
আপনি মার্কিন নাগরিক হলে এবং আপনার ২১ বছরের কম বয়সী অবিবাহিত সন্তান (আইআর২) বৈধ বা অবৈধ যেকোনো উপায়ে আমেরিকায় অবস্থান করলে, তার জন্য আপনাকে ৫৩৫ ডলার ফি দিয়ে ফর্ম আই-১৩০ জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে ১৪ বছরের কম বয়সী সন্তানের জন্য ৭৫০ ডলার ও ১৪ বছরের বেশি বয়সী সন্তানের জন্য ১১৪০ ডলার ফিসহ ফর্ম আই-৪৮৫ জমা দিতে হবে। আপনি গ্রিনকার্ডধারী হলে আমেরিকায় বৈধভাবে (অবৈধ নয়) অবস্থানরত আপনার ২১ বছরের কম বয়সী অবিবাহিত সন্তানের (এফ২এ) জন্য ফর্ম আই-১৩০ অনুমোদনের পর (একত্রে নয়) ফর্ম আই-৪৮৫ জমা দিতে হবে।
গ্রিনকার্ডধারীর ২১ বছরের কম বয়সী অবিবাহিত সন্তান (এফ২এ), মার্কিন নাগরিকের ও গ্রিনকার্ডধারীর ২১ বছরের বেশি বয়সী অবিবাহিত সন্তান (এফ১ ও এফ২বি) ও ভাইবোন (এফ৪) এবং শুধুমাত্র মার্কিন নাগরিকের (গ্রিনকার্ডধারীর নয়) বিবাহিত সন্তান (এফ৩)— এই পাঁচটি ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে হলে, যার জন্য আবেদন করা হলো সে আমেরিকায় অবৈধভাবে অবস্থান করতে পারবে না। তাকে আবেদন অনুমোদন হওয়া পর্যন্ত আমেরিকার বাইরে অথবা বৈধভাবে ভেতরে অবস্থান করতে হবে। অর্থাৎ তার জন্য করা গ্রিনকার্ডের আবেদন ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট অব স্ট্যাটাস’ প্রক্রিয়ার জন্য প্রযোজ্য হবে না। আপনাকে তখন ‘কনস্যুলার প্রসেসিং’ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ আপনাকে দেশে ফিরে কনস্যুলেট অফিস থেকে অভিবাসী ভিসা নিতে হবে। কিন্তু আপনি যেহেতু অবৈধভাবে আমেরিকাতে প্রবেশ করেছেন তাই আমেরিকা থেকে বের হলে পুনরায় আমেরিকায় প্রবেশের সময় আপনার ওপর তিন বা দশ বছরের নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরোপিত হবে। এই নিষেধাজ্ঞা কাটাতে আপনাকে হয় দেশে ফিরে গিয়ে আই-৬০১ ফর্মের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে অথবা আমেরিকায় থেকেই আই-৬০১-এ-এর জন্য আবেদন করতে হবে। দেশে ফিরে আই-৬০১-এর আবেদন অনেক ক্ষেত্রেই অনুমোদন বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কারণ স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক বিবেচনা, শিক্ষা, ব্যক্তিগত বিবেচনা ও বিশেষ ফ্যাক্টর—এই পাঁচ ক্যাটাগরিতে এক্সট্রিম হার্ডশিপ প্রমাণ করতে হয়। আমেরিকাতে অবস্থান করে আই-৬০১-এ-এর জন্য করা আবেদন অনুমোদন হলেও আপনাকে ভিসা আনতে দেশে যেতে হবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ভিসা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রবল। কারণ ইতিমধ্যে আপনার আই-১৩০ ও আই-৬০১এ ইউএসসিআইএস থেকে অনুমোদন হয়ে গেছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই নিবন্ধ কোনো রকম আইনি পরামর্শ নয়। এটি কেবল ইউএসসিআইএস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত এ-সংক্রান্ত তথ্যের সন্নিবেশ মাত্র।

ভিসা সম্পর্কিত বার্তা

পরিবারভিত্তিক এবং চাকরিভিত্তিক ভিসা প্রদানের বার্ষিক সংখ্যা কংগ্রেস কর্তৃক সীমাবদ্ধ। এই ক্যাটাগরির আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নির্ধারিত হয় যদি তাঁদের অগ্রাধিকার তারিখ হালনাগাদ থাকে ও ভিসার সংখ্যা বর্তমান থাকে। যদিও সম্ভাবনা আছে, অগ্রাধিকার তারিখের পরিবর্তন হতে পারে এবং সাক্ষাৎকারের সময় ভিসার সংখ্যা আর বর্তমান নাও থাকতে পারে। আপনার ক্যাটাগরির ভিসার
সংখ্যা যদি বর্তমান না থাকে, তবুও আপনার সাক্ষাৎকার যথা সময়ে হবে, তবে আপনার ভিসা
ততদিন পর্যন্ত ইস্যু হবে না, যতদিন পর্যন্ত অগ্রধিকার তারিখ হালনাগাদ হয় এবং নতুন
ভিসার সংখ্যা বর্তমান হয়। সকল অভিবাসী ভিসা আবেদনকারীগণ তাঁদের অগ্রাধিকার তারিখের অগ্রগতি সম্পর্কে জানার জন্য পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে (https://bit.ly/2EfaUuN) ভিসা বুলেটিন দেখতে পারেন।

মাস: অক্টোবর ২০১৮

F1 : ১ জুন ২০১১: (আমেরিকান নাগরিকদের অবিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F2A : ২২ আগস্ট ২০১৬: (এলপিআর ব্যক্তিদের স্বামী বা স্ত্রী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)
FX : ১ আগস্ট ২০১৬: (F2A কেইসে যাদের অগ্রাধিকার তারিখ পুরোনো)
F2B : ২২ নভেম্বর ২০১১: (এলপিআর ব্যক্তিদের অবিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F3 : ১৫ জুন ২০০৬: (মার্কিন নাগরিকদের বিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F4 : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৫: (মার্কিন নাগরিকদের ভাই/বোন ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)
E3 : চলতি (দক্ষ কর্মী ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)
EW : চলতি (অদক্ষ কর্মী ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)

লেখক: ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল, নিউইয়র্ক প্রবাসী
সেল: (৯২৯)৩৯১-৬০৪৭; ই-মেইল: [email protected] <mailto:[email protected]>