সরকারি সুবিধা পেতে আবেদনেও ভয়!

আমেরিকায় ১ অক্টোবর থেকে অভিবাসনের নতুন অনেক নিয়ম চালু হয়েছে। কূটনীতিকদের সমকামী জীবন সঙ্গীদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চালু হওয়া নতুন বিধিতে যারা ইতিপূর্বে খাদ্য সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আয় গোপন করে সুবিধা গ্রহণকারীদের বা সরকারি সুবিধা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে—এমন অভিবাসীদের বিতাড়ন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
ট্রাম্প সরকারের আমলে নেহায়েত প্রয়োজন ছাড়া অভিবাসীরা কোনো সুবিধার জন্য আবেদন করতে ভয় পাচ্ছেন। আমেরিকার নাগরিক এমন দম্পতিদের বাইরের দেশ থেকে দাম্পত্য সঙ্গীকে নিয়ে আসা বা বিয়ের মাধ্যমে অভিবাসনের বৈধতা পাওয়ার আবেদন এখন প্রলম্বিত হচ্ছে। কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে বিদ্যমান আইনের কড়াকড়ি আরোপ করেই ট্রাম্প প্রশাসন ইমিগ্রেশন নিয়ন্ত্রণের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

২০০৯ সাল থেকে আমেরিকায় সমলিঙ্গের দম্পতিকে ভিসা দেওয়া হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রে আমেরিকায় অবস্থানরত কূটনীতিকেরা অতিরিক্ত সুবিধা পাচ্ছিলেন। আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত লোকজন সমলিঙ্গের দাম্পত্য সঙ্গীদের আমেরিকায় আনতে পারছিলেন। ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া নতুন বিধিতে দাম্পত্যকে প্রথাগত বিয়ের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করে হয়েছে। ফলে কূটনীতিকদের এখন সমলিঙ্গের জীবনসঙ্গী নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।
১ অক্টোবর জর্জ টাউন ইউনিভার্সিটিতে দেওয়া এক বক্তব্যে আমেরিকার সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস পরিচালক ফ্রান্সিস কিসেনা অভিবাসনের নতুন সব বিধি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমেরিকার নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য করেই কার্যকর অভিবাসন আইন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অভিবাসন বিভাগ অভিবাসীদের নোটিশ টু অ্যাপিয়ারের (এনটিএ) ক্ষেত্র বৃদ্ধি করেছে। সরকারি সুবিধার জন্য আবেদন করে অভিবাসীদের ইমিগ্রেশনের খড়্গে পড়তে হচ্ছে। যেসব অভিবাসী সঠিক তথ্য ছাড়া খাদ্য, চিকিৎসা বা আবাসন সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন, তাদের আবেদন যাচাই প্রক্রিয়াই ইমিগ্রেশনের ফাঁক–ফোকর ধরা পড়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে আবেদন প্রত্যাখ্যাত অভিবাসীদের এনটিএ জারি করা হবে। অভিবাসীদের জন্য এনটিএ অনেকটাই বিতাড়ন নোটিশের মতো। অভিবাসন সংক্রান্ত বিচারকের কাছে উপস্থিত হওয়ার অর্থই আমেরিকা থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হওয়া।
প্রকাশ্যে ঘোষণা না দিলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এসব কড়াকড়ি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। প্রথমে দক্ষিণ সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের ডাক, কয়েকটি মুসলিম দেশ থেকে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারিসহ পারিবারিক অভিবাসন বন্ধের প্রকাশ্য হুংকার দিয়েই নিজের রক্ষণশীল সমর্থকদের চাঙা রাখছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পাশাপাশি তাঁর রক্ষণশীল উপদেষ্টাদের পরামর্শে বিদ্যমান আইনের মাধ্যমেই অভিবাসন যতটা কঠোর করা করা যায়, তার সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
পরিসংখ্যান মতে, ৫১ শতাংশ অভিবাসী আমেরিকার কোনো না–কোনো সরকারি সহযোগিতা গ্রহণ করে থাকে। নাগরিকদের করের ওপর চালু থাকা এসব সরকারি সহযোগিতা গ্রহণের জন্য অনেকেই যথাযথ তথ্য দেন না। নানাভাবে আয় গোপন রেখে, নিজেকে স্বল্প আয়ের কর্মজীবী হিসেবে উল্লেখ করে সাহায্যের আবেদন জানানো হয়। শিশু সন্তানদের জন্য সরকারি স্বাস্থ্য সুবিধা নেওয়া, সরকারি খাদ্য সহায়তা গ্রহণ অভিবাসী পরিবারগুলোর জন্য স্বাভাবিক ঘটনা। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুযায়ী এসব সাহায্যের আবেদন দ্রুততার সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। অনেক সময় দেখা যায়, আবেদনকারীর আবেদনে দেওয়া তথ্যে গরমিল আছে। অভিবাসন বিভাগ এখন এসব আবেদনের জের ধরে এনটিএ জারি করতে পারবে। সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসের পরিচালক ফ্রান্সিস কিসেনা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল। এখন আমেরিকার অভিবাসন পদ্ধতির সুরক্ষার জন্যই নানা সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যা আমেরিকার নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে এবং করদাতাদের প্রতি সরকারের দায়িত্বকে গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।
যেসব অভিবাসীর আবেদন ইতিপূর্বে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, তার জের ধরে অভিবাসন বিভাগ এনটিএ জারি করতে পারে। আগের কোনো অপরাধ বা অভিবাসন বিভাগকে দেওয়া মিথ্যা তথ্যের জের ধরে অভিবাসীদের এখন বিতাড়ন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার দাবি আমেরিকার সর্বত্র। অন্যদিকে বৈধ অভিবাসনকেও কঠিন করার মোক্ষম সব অস্ত্র নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রায় দুই কোটি অবৈধ অভিবাসীকে বৈধতা দেওয়ার স্লোগান এখন অনেকটাই থমকে গেছে। অভিবাসী গ্রুপগুলোর ‘এখন ভাত চাই না—কুত্তা সামলাও’ অবস্থা। বৈধদের আমেরিকায় থাকা কঠিন করে তোলা হচ্ছে।
৩ অক্টোবর এনবিসি নিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আমেরিকার নাগরিকেরা এখন নববিবাহিত জীবনসঙ্গীর জন্য গ্রিনকার্ডধারী পেতে এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। আমেরিকার কোনো নাগরিক বিয়ের মাধ্যমে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে দাম্পত্য সঙ্গীকে বৈধ করার সুযোগ ছিল। এখন নানা সব তল্লাশিতে সময় বেশি লাগছে । দেড় থেকে দুই বছরে কোনো কোনো আবেদনের সুরাহা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আবেদনে কোনো জটিলতা থাকলে আর রক্ষা নাই । ইমিগ্রেশন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে তিন লাখ পারিবারিক অভিবাসনের আবেদন তাদের কাছে জমা পড়েছে। ২০১২ সালের তুলনায় আবেদনের হার ৩৪ শতাংশ বেড়ে গেছে। ইমিগ্রেশন বিভাগ এসব আবেদনের ফয়সালা করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে।