কাভানার পক্ষে প্রভাবশালী সিনেটররা, আজ চূড়ান্ত ভোট

ব্রেট কাভানার নিয়োগ বছরের বিতর্কিত ইস্যুতে পরিণত হয়। ছবি: রয়টার্স
ব্রেট কাভানার নিয়োগ বছরের বিতর্কিত ইস্যুতে পরিণত হয়। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প–মনোনীত বিচারপতি ব্রেট কাভানার নিয়োগের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আজ শনিবার। এর মধ্যে কাভানার পক্ষে বাতাস বইতে শুরু করেছে। প্রভাবশালী সিনেটররা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা কাভানার পক্ষে থাকবেন।

সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর শূন্য পদে নিয়োগের জন্য আপিল কোর্টের বিচারপতি ব্রেট কাভানাকে মনোনয়ন দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সিনেটে ৫১-৪৯ আসনে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে ধারণা করা হয়েছিল, কাভানার নিয়োগ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। ডেমোক্র্যাটরা বাধা দিলেও তা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের কাছে টিকবে না। সিনেটের ২১ সদস্যের বিচারবিষয়ক কমিটিতে ভোটে পাস করার পর সিনেটের পূর্ণ ভোট পেলেই সারা জীবনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের পদটি নিশ্চিত হয়ে যাবে কাভানার। যুক্তরাষ্ট্রে নয় সদস্যের সুপ্রিম কোর্টের প্রভাব অপরিসীম।

তবে যৌন হয়রানির অভিযোগের মুখে কাভানার নিয়োগ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। একজন সিনেটরের দাবিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগগুলো তদন্তের ভার দেন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইকে। এ জন্য এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেন তিনি। যদিও তদন্তের সময় বেঁধে দেওয়া নিয়ে ডেমোক্র্যাটরা প্রশ্ন তুলেছেন।

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, বিচারবিষয়ক কমিটিতে ১১ রিপাবলিকানের ভোট পেয়েছিলেন কাভানা। ওই কমিটির ১০ জন ডেমোক্র্যাট তাঁকে ভোট দেননি। আজ শনিবার পূর্ণ সিনেটের চূড়ান্ত ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে কয়েকজন সিনেটর গতকাল শুক্রবার কাভানার পক্ষে তাঁদের ভোট দেওয়ার আভাস দিয়েছেন। রিপাবলিকান সিনেটর সুসান কলিন্স ও ডেমোক্র্যাট সিনেটর জো মানচিন গতকাল তাঁদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। চূড়ান্ত মনোনয়নের আগে গতকাল পরীক্ষামূলক ভোট ও মনোনয়নের পক্ষে-বিপক্ষে সংক্ষিপ্ত বিতর্ক হয়। এই ভোটে (ক্লোচার ভোট) ৫১-৪৯ ভোটে কাভানার পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন সিনেটর। এর মধ্যে নিজ দলের বিরুদ্ধে গিয়ে ডেমোক্র্যাট মানচিন বিচারপতি কাভানার পক্ষে ভোট দিয়েছেন আর রিপাবলিকান লিসা মুর্কওয়াস্কি কাভানার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।

কলিন্স ও মানচিনের কাভানার পক্ষে সমর্থন দেওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কলিন্সের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ এবং হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স। এদিকে ডেমোক্র্যাট মানচিন নিজ দলের সমর্থকদের তোপের মুখে পড়েছেন। নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহকারী একটি গ্রুপ জানিয়েছে, তারা মানচিনের জন্য আর অর্থ সংগ্রহ করবে না।

সিনেটের বিচারবিষয়ক কমিটিতে কাভানার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন ক্রিস্টিন ব্লেসি ফোর্ড। ছবি: রয়টার্স
সিনেটের বিচারবিষয়ক কমিটিতে কাভানার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন ক্রিস্টিন ব্লেসি ফোর্ড। ছবি: রয়টার্স

ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টিন ব্লেসি ফোর্ডের অভিযোগের কারণে কাভানার নিয়োগ জটিলতায় পড়ে যায়। ক্রিস্টিন অভিযোগ করেন, ১৯৮২ সালে হাইস্কুলে পড়ার সময় এক পার্টিতে কাভানা মাতাল অবস্থায় তাঁকে যৌন হয়রানি করেন। এরপর আরেক নারী তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ডেবোরাহ রামিরেজ নামের ওই নারী অভিযোগ করেন, ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় ডরমিটরি পার্টিতে কাভানা সম্মতি ছাড়াই তাঁর শরীর স্পর্শ ও যৌন হয়রানি করেন। একের পর এক আরও অভিযোগ এসেছে। জুলি নামের ওয়াশিংটন ডিসির এক নারী অভিযোগ করেছেন, ১৯৮২ সালে কাভানার উপস্থিতিতে এক পার্টিতে তিনি গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। কলোরাডো সিনেটরের কাছে লেখা চিঠিতে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে এক নারী জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে ১৯৯৮ সালে কাভানাকে এক নারীর সঙ্গে যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করতে দেখেছেন।

সব কটি অভিযোগই অস্বীকার করেছেন কাভানা। তিনি অভিযোগ করেন, শুধু রাজনৈতিক কারণে তাঁর সুনাম নষ্ট করার জন্য ডেমোক্র্যাটরা এই ষড়যন্ত্র করছেন।

গত সপ্তাহে সিনেটের বিচারবিষয়ক কমিটিতে কাভানা ও ক্রিস্টিন দুজনই সাক্ষ্য দিয়েছেন। কমিটির ২১ জন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট তাঁদের প্রশ্ন করেন। সাক্ষ্য দিতে গিয়ে কাভানা ও ক্রিস্টিনা দুজনই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

ওই দিন আরিজোনোর সিনেটর রিপাবলিকান জেফ ফ্লেক জানান, সিনেটে পূর্ণ ভোটে পাঠানোর জন্য কাভানার মনোনয়ন প্রস্তাবের প্রতি তাঁর সমর্থন রয়েছে। তবে এফবিআই তদন্ত ছাড়া সিনেটে ভোটের মাধ্যমে কাভানার নিয়োগ নিশ্চিত করার পক্ষে নন তিনি। ফ্লেক জানান, তিনি কমিটিতে প্রবেশের আগে দুজন নারী তাঁকে ভর্ৎসনা করেন। ওই দুই নারী দাবি করেন, তাঁরা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন। কাভানার মনোনয়নের ব্যাপারে তাঁকে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বলেন তাঁরা। ফ্লেকের দাবির মুখে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাভানার বিরুদ্ধে আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ এফবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।