সৌদি যুবরাজের পক্ষে ট্রাম্পের সাফাই

জামাল খাসোগি, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
জামাল খাসোগি, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

সাংবাদিক জামাল খাসোগি নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি আরবকে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দিতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খাসোগি নিখোঁজের ব্যাপারে জবাব পেতে সৌদি আরবকে ক্রমাগত চাপে রেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব, এমনকি মার্কিন সিনেটররাও সৌদি নেতাদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন। সৌদির সঙ্গে গড়ে ওঠা সুসম্পর্কের রেশ ধরে ট্রাম্প এমন পরিস্থিতির মধ্যেও সৌদির ওপর আস্থা রাখতে চান, সত্য ‘নিশ্চিত না হয়ে’ দোষারোপ করতে চান না।

বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার এপিকে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘একই ঘটনা ঘটে চলেছে, আপনি জানেন, আপনি নির্দোষ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত দোষী। আমি এটা পছন্দ করি না।’ ওই সময় তিনি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতি ব্রেট কাভানার বিষয়টি টেনে আনেন। নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার আগমুহূর্তে কয়েক জন নারী কাভানার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন।

এর আগে টুইটে ট্রাম্প বলেছিলেন, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে খাসোগি লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনার ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
২ অক্টোবর ব্যক্তিগত নথি আনার জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে জামাল খাসোগি যাওয়ার পর সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসেননি। তুরস্ক দাবি করেছে, কনস্যুলেট ভবনের ভেতর খাসোগিকে সৌদি এজেন্টরা হত্যা করেছে। এ হত্যা মিশনে অংশ নিতে ওই সময় ১৫ সদস্যের সৌদি স্কোয়াড রিয়াদ থেকে ইস্তাম্বুলে যায়। যুবরাজ মোহাম্মদ গত বছরের জুনে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে ক্ষমতা নেওয়ার পর গ্রেপ্তার–আতঙ্কে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন খাসোগি। এক বছরে তিনি ক্রাউন প্রিন্সের সমালোচনা করে ওয়াশিংটন পোস্টে ধারাবাহিক কলাম লিখেছিলেন।

টুইটারে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে মাত্র কথা বলেছি। তুর্কি কনস্যুলেটে যা ঘটেছে, সে সম্পর্কে তাঁর ধারণা নেই বলে জানিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, এ ব্যাপারে তিনি পূর্ণ তদন্ত ইতিমধ্যে শুরু করেছেন এবং তদন্ত দ্রুত আরও জোরদার করবেন। খুব শিগগিরই সব উত্তর পাওয়া যাবে।’

এরও আগে সোমবার ট্রাম্প তাঁর অনুমানের কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, এই নিখোঁজের পেছনে ‘কুখ্যাত হত্যাকারীরা’ থাকতে পারে। তবে তাঁর এই মতের পেছনে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

তবে যুবরাজ যা–ই করুক, সৌদি আরবের সঙ্গে ভবিষ্যতে পশ্চিমা বিশ্ব কেমন সম্পর্ক রাখবে, সে ব্যাপারে খাসোগি নিখোঁজের ঘটনা একটি পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যুবরাজ মোহাম্মদ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে এখন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উদ্‌যাপন করছেন। সৌদির অর্থনীতিকে তেলনির্ভরতা থেকে সরিয়ে বহুমুখী করা এবং কিছু সামাজিক সংস্কার এনে নিজেকে তিনি গতিশীল সৌদি আরবের নতুন মুখ হিসেবে অলংকৃত করেছেন। তবে যুবরাজের কিছু কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদির যুক্ত হওয়া, নারী অধিকারকর্মীদের আটক করা ও এ নিয়ে কানাডার সঙ্গে কূটনৈতিক বাদানুবাদে জড়ানো, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরিকে গত বছরের নভেম্বরে আটকে রাখা ইত্যাদি ঘটনায় যুবরাজ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে সমালোচনা রয়েছে।
সৌদির মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় পশ্চিমা বিশ্বের উদ্বেগ থাকার পরও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো বলে চলেছেন, তিনি রিয়াদের সঙ্গে অস্ত্র বিক্রির চুক্তি প্রত্যাহার করতে রাজি নন।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী স্টিভেন নিউচিন ২৩ অক্টোবর রিয়াদে অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। খাসোগি ইস্যুতে ওই সম্মেলন থেকে কয়েক জন শীর্ষ ব্যবসায়ী ও মিডিয়া গ্রুপ তাদের নাম তুলে নিয়েছে। এসবই আভাস দেয়, ট্রাম্প সৌদির পক্ষেই থাকবেন, গত বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম তিনি যে দেশটি সফর করেছিলেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সৌদি বাদশাহ সালমান, যুবরাজ মোহাম্মদ, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা থেকে তিনি বুঝতে পেরেছেন ‘ঘটনাটির খুঁটিনাটি বের করা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা, এমনকি সৌদির জ্যেষ্ঠ নেতা ও কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতাও নিশ্চিত করার জন্য সৌদি আরবের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে।’
আজ বুধবার মাইক পম্পেওর তুরস্ক সফরের কথা।

পম্পেও ও ট্রাম্পের এমন সব মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ পশ্চিমা অন্যান্য দেশকে উভয়সংকটে ফেলে দিয়েছে যে তারা কীভাবে সৌদি সাম্রাজ্যের প্রতি সাড়া দেবে, যেখানে দেশটি সাধারণত বিদেশি চাপের কাছে নতি স্বীকার করে না। সৌদি আরব বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক, পশ্চিমা দেশগুলোর বড় অস্ত্র ক্রেতা এবং সুন্নি মুসলিমদের বড় জোট।

মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বেশ কিছু ইস্যুতে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ লোক। তিনি যুবরাজ মোহাম্মদকে ‘বিষাক্ত’ ব্যক্তি বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, যুবরাজ মোহাম্মদ কখনো বিশ্ব মঞ্চে বিশ্ব নেতা হতে পারবেন না। তিনি বলেন, ‘সিনেটের ফ্লোরে আমি তাঁদের বড় সমর্থক। এই লোকটি সর্বনাশী বল। তুর্কি কনস্যুলেটে এই লোকটিই হত্যা করিয়েছেন এবং আমি যেন তা উপেক্ষা করি সে আশা করা হচ্ছে আমার কাছ থেকে। এ ঘটনায় আমি ব্যবহৃত ও নির্যাতনের শিকার বোধ করছি।’

যুক্তরাষ্ট্রসহ সাত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, খাসোগি নিখোঁজের ঘটনাটি তাঁদের কাছে ‘খুবই সংকটপূর্ণ’ বলে মনে হচ্ছে এবং ঘোষণা অনুসারে ঘটনাটির বিস্তারিত, গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও দ্রুত তদন্তের জন্য তাঁরা রিয়াদের দিকে তাকিয়ে আছেন।
মার্কিন মিডিয়ায় গত সোমবার প্রকাশিত হয়েছে যে কনস্যুলেটে প্রশ্ন করার সময়ে খাসোগির মৃত্যু হয়েছে স্বীকার করে সৌদি প্রতিবেদন দিতে পারে।