মার্কিন নাগরিকের স্বামী/স্ত্রীর আবেদনের পন্থা

পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে আমেরিকার গ্রিনকার্ড পাওয়ার জন্য আটটি ভিন্ন ক্যাটাগরির মাধ্যমে আবেদন করা যায়। এগুলো হচ্ছে আইআর১, আইআর২, আইআর৫, এফ১, এফ৩, এফ৪, এফ২এ ও এফ২বি। এই আটটি ক্যাটাগরির মধ্যে একটি হচ্ছে মার্কিন নাগরিকের স্বামী/স্ত্রীর জন্য, যিনি আমেরিকাতেই অবস্থান করছেন। এই ক্যাটাগরিও আবার সাদামাটা নয়। একজন মার্কিন নাগরিকের সঙ্গী আমেরিকায় অনেকভাবেই অবস্থান করতে পারেন। তিনি বৈধ ও অবৈধ দুই ধরনের অভিবাসী হিসেবেই আমেরিকায় অবস্থান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর অভিবাসন অবস্থার (স্ট্যাটাস) ওপর নির্ভর করবে, তাঁর আবেদন পদ্ধতিটি। আজ এই ক্যাটাগরিতে পড়েন এমন ব্যক্তিদের গ্রিনকার্ডের আবেদন পদ্ধতি নিয়েই আলোচনা করা হবে।
আপনি যদি মার্কিন নাগরিক হন এবং আপনার স্বামী বা স্ত্রী যদি আমেরিকাতেই অবস্থান করেন, তবে তিনি যেমন একজন বৈধ অনঅভিবাসী (ননইমিগ্র্যান্ট) হতে পারেন, তেমনি হতে পারেন একজন অবৈধ অভিবাসীও। বৈধ অনঅভিবাসী স্ট্যাটাসের উদাহরণ হিসেবে আই-২০ ভ্যালিড আছে এমন অ্যাকাডেমিক স্টুডেন্ট ভিসা (এফ১) অথবা ভকেশনাল স্টুডেন্ট ভিসা (এম১), আমেরিকায় আসার পর ৯০ দিনের কম অতিবাহিত হয়েছে এমন বাগ্‌দত্তা ভিসা (কে১), মার্কিন নাগরিকের স্বামী/স্ত্রী (স্পাউস) ভিসা (কে৩), আই-৯৪ ভ্যালিড আছে এমন ব্যবসা বা পর্যটন ভিসা (বি১/বি২), সাংবাদিক ভিসা (আই), শিল্পী ভিসা (পি৩), পারসন ইন স্পেশালিটি অকুপেশন ভিসা (এইচ১বি), ট্রিটি ইনভেস্টর ভিসা (ই২), বিজ্ঞান/শিল্প/শিক্ষা/বাণিজ্য/ অ্যাথলেটিকসে অসাধারণ দক্ষতার জন্য ভিসা (ও), ইন্ট্রা কোম্পানি ট্রান্সফারি ভিসা (এক১এ/এল১বি), ধর্মীয় কর্মী ভিসা (আর১), অপরাধকর্মের ভুক্তভোগী ভিসা (ইউ) ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা যায়।
অন্যদিকে অবৈধ অভিবাসী আবার দুই ধরনের হতে পারে। কেউ বৈধভাবে ভিসা নিয়ে আমেরিকায় প্রবেশ করে অনুমোদিত মেয়াদের পরও অবস্থান করলে তাকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একইভাবে কেউ যদি কোনো ভিসা ছাড়াই আমেরিকার সীমান্ত অতিক্রম করে, তবে তাকেও অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সব মিলিয়ে এই তিন ধরনের (বৈধ অনঅভিবাসী ও দুই ধরনের অবৈধ অভিবাসী) ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমেরিকার নাগরিক বিয়ে করে, তার ওপর নির্ভর করে গ্রিনকার্ড পাওয়ার নিয়ম একরকম নয়।
প্রথমে আসা যাক মার্কিন নাগরিক যদি কোনো বৈধ অনঅভিবাসীকে বিয়ে করেন, তবে তাঁকে গ্রিনকার্ড পেতে নিম্নলিখিত ফর্মগুলো ব্যবহার করতে হবে—
* আই-১৩০, পিটিশন ফর অ্যালিয়েন রিলেটিভ- ফি ৫৩৫ ডলার
* আই-১৩০এ, সাপ্লিমেন্টাল ইনফরমেশন ফর স্পাউস বেনিফিশিয়ারি- কোনো ফি নেই
* আই-৪৮৫, অ্যাপ্লিকেশন টু রেজিস্টার পারমানেন্ট রেসিডেন্স অর অ্যাডজাস্ট স্ট্যাটাস- ফি ১১৪০ ডলার
* আই-৭৬৫, অ্যাপ্লিকেশন ফর এমপ্লয়মেন্ট অথোরাইজেশন- কোনো ফি নেই
* আই-৮৬৪, অ্যাফিডেভিট অব সাপোর্ট আন্ডার সেকশন ২১৩এ অব আইএনএ- কোনো ফি নেই
* আই-৬৯৩, রিপোর্ট ফর মেডিকেল এক্সামিনেশন অ্যান্ড ভ্যাক্সিনেশন রেকর্ড- কোনো ফি নেই
* জি-১১৪৫, ই-নোটিফিকেশন অব অ্যাপ্লিকেশন/পিটিশন অ্যাক্সেপট্যান্স- কোনো ফি নেই
* বায়োমেট্রিক এর জন্য কোনো আলাদা ফর্ম না থাকলেও ৮৫ ডলার ফি দিতে হবে।
অর্থাৎ সর্বমোট ১ হাজার ৭৬০ ডলার সরকারি ফি পরিশোধ করতে হবে। এই সাতটি ফর্ম একত্রে জমা দেওয়াকে বলা হয় কনকারেন্ট ফাইলিং। যেহেতু মার্কিন নাগরিকের স্বামী বা স্ত্রীর গ্রিনকার্ড আবেদনের কোনো প্রায়োরিটি ডেট থাকে না (এই ক্যাটাগরির গ্রিনকার্ড সব সময় এভেইলেবল থাকে), তাই এই কনকারেন্ট ফাইলিংয়ের সুবিধা ভোগ করা যায়।
এই ফর্মগুলোর বাইরে অন্য যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে সেগুলো হল: বিয়ের সনদ, উভয়ের জন্মসনদ, বিয়ের ছবি, পারিবারিক ছবি, উভয়ের ছয় কপি পাসপোর্ট সাইজ ফটো, জয়েন্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট, বসবাসের ঠিকানায় জয়েন্ট লিজ অ্যাগ্রিমেন্ট অথবা জয়েন্ট ইউটিলিটি বিল, জয়েন্ট ট্যাক্স ফাইল ((যদি থাকে), সন্তান থাকলে তার জন্মসনদ, বিয়ের উদ্দেশ্য ও বর্তমান অবস্থা জানেন এমন একজন বা দুজন ব্যক্তি কর্তৃক প্রয়োজনীয় সব তথ্যসহ অ্যাফিডেভিট, যদি কোনো পূর্ব বিবাহ থাকে, তাহলে তার ডিভোর্স বা ডেথ সার্টিফিকেট, মার্কিন নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ন্যাচারালাইজেশন সার্টিফিকেট/নাগরিকত্ব সনদ/জন্মসনদ/মেয়াদোত্তীর্ণ নয় এমন মার্কিন পাসপোর্টের অনুলিপি।
ফর্মগুলো পূরণ করার জন্য উল্লিখিত কাগজপত্রের বাইরেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মা-বাবার জন্ম তারিখ ও জন্মস্থান, সর্বশেষ পাঁচ বছরের ঠিকানা ও বসবাসের তারিখ, সর্বশেষ পাঁচ বছরের কর্মস্থলের ঠিকানা ও তারিখ, আবেদনকারীর সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর, আবেদনকারী নিজে অথবা যিনি স্পনসর করবেন, তাঁর পূর্ববর্তী তিন বছরের আইআরএস ট্রান্সক্রিপ্ট, পূর্ববর্তী তিন বছরের ফর্ম ডব্লিউ-২ বা ফর্ম ১০৯৯-সহ ট্যাক্স রিটার্নের সমুদয় কপি, জব লেটার অথবা সমসাময়িক ছয় মাসের পে স্টাব, রিলেশনশিপ লেটার, নাগরিকত্ব সনদ/ জন্মসনদ/ মেয়াদোত্তীর্ণ নয় এমন মার্কিন পাসপোর্ট/গ্রিনকার্ডের অনুলিপি জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্পনসর ইতিপূর্বে যতজনকে স্পনসর করেছেন তার সংখ্যা, সকল সেভিংস ও চেকিং অ্যাকাউন্টের ব্যালান্স, কোনো স্থাবর সম্পত্তি (রিয়েল স্টেট প্রোপার্টি) থাকলে বন্ধকি ঋণ বাদ দিয়ে ওই সম্পত্তির নেট ভ্যালু ও ওই প্রোপার্টির অবস্থান, মালিকানা ও একুইজিশনের নথি, ফোন নম্বর ও ইমেইল ঠিকানা, আবেদনকারী ব্যতীত অন্য কেউ স্পনসর করলে ওই ব্যক্তি যদি তার স্পাউস বা অন্য কোনো হাউজহোল্ড মেম্বারের আয়সহ জয়েন্ট ট্যাক্স ফাইল করে থাকেন, তবে সেই সদস্য দ্বারা পূরণকৃত ফর্ম আই-৮৬৪এ জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে কন্ট্রাক্ট বিটুইন স্পনসর অ্যান্ড হাউজহোল্ড মেম্বার জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে।
আবেদনগুলো জমা দেওয়ার পর যার জন্য আবেদন করা হয়েছে, তাকে নিকটস্থ অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট সেন্টারে হাজির হয়ে হাতের ছাপ দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়ে জানানো হবে। সাধারণত আবেদনের পর ৯০ দিনের মধ্যে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যায়। সব আবেদনের ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রয়োজন নাও হতে পারে। যদি সাক্ষাৎকারের প্রয়োজন হয়, তাহলে তা চিঠি দিয়ে জানানো হবে। সে ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই ইতিপূর্বে জমা দেওয়া সব কাগজপত্রের মূল কপি সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। এর পর আবেদনের সময় থেকে সাত-আট মাস পর লিখিতভাবে ফলাফল জানানো হবে। যদি আপনার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়, তাহলে সেই প্রত্যাখ্যানের চিঠি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ফর্ম আই-২৯০বি, নোটিশ অব অ্যাপিল অর মোশন দাখিল করার মাধ্যমে আপিল অথবা রিওপেন ও রিকনসিডার করার জন্য মোশন করা যায়। গ্রিনকার্ড ইস্যু করার তারিখে যদি বিয়ের বয়স দুই বছরের কম হয়, তবে পরবর্তী দুই বছরের জন্য কন্ডিশনাল গ্রিনকার্ড দেওয়া হবে। সেই শর্ত অপসারণের জন্য গ্রিনকার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ৫৯৫ ডলার ফিসহ ফর্ম আই-৭৫১, পারমিট টু রিমুভ দ্য কন্ডিশনস অব রেসিডেন্স পূরণ করে এর সঙ্গে সন্তান থাকলে সন্তানের জন্মসনদ, বাড়ি ভাড়ার লিজ অ্যাগ্রিমেন্ট যেখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনের নাম রয়েছে, যৌথ সেভিংস ও চেকিং অ্যাকাউন্ট, যৌথ ট্যাক্স রিটার্ন, জয়েন্ট ইউটিলিটি বিল ও কন্ডিশনাল গ্রিনকার্ড পাওয়ার সময় থেকে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্কের বিষয়ে আবগত আছেন এমন দুজন ব্যক্তির অ্যাফিডেভিট জমা দিতে হবে।
মার্কিন নাগরিক যদি কোনো অবৈধ অভিবাসীকে বিয়ে করেন, তবে তার ক্ষেত্রে গ্রিনকার্ড পাওয়ার নিয়ম কানুন কেমন? যিনি ভিসা নিয়ে এ দেশে এসে অনুমোদিত মেয়াদের বেশি সময় থাকার কারণে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গণ্য হয়েছেন, অথবা যিনি কোনো রকম ভিসা ছাড়াই আমেরিকায় প্রবেশ করে অবৈধ অভিবাসী হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে মার্কিন নাগরিক বিয়ে করে গ্রিনকার্ড পেতে চাইলে আই-৬০১ ও আই-৬০১এ প্রযোজ্য হওয়ার নিয়ম কি, তার সম্পর্কে আগামী সপ্তাহে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই নিবন্ধ কোনো ধরনের আইনি পরামর্শ নয়। এটি শুধু ইউএসসিআইএস ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত এ-সংক্রান্ত তথ্যের সন্নিবেশ মাত্র। সেল: (৯২৯) ৩৯১ ৬০৪৭
ভিসা সম্পর্কিত বার্তা
পরিবারভিত্তিক এবং চাকরিভিত্তিক ভিসা প্রদানের বার্ষিক সংখ্যা কংগ্রেস কর্তৃক সীমাবদ্ধ। এই ক্যাটাগরির আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নির্ধারিত হয় যদি তাঁদের অগ্রাধিকার তারিখ হালনাগাদ থাকে ও ভিসার সংখ্যা বর্তমান থাকে। যদিও সম্ভাবনা আছে, অগ্রাধিকার তারিখের পরিবর্তন হতে পারে এবং সাক্ষাৎকারের সময়  ভিসার সংখ্যা আর বর্তমান নাও থাকতে পারে। আপনার ক্যাটাগরির ভিসার সংখ্যা যদি বর্তমান না থাকে, তবুও আপনার সাক্ষাৎকার যথা সময়ে হবে, তবে আপনার  ভিসা ততদিন পর্যন্ত ইস্যু হবে না, যতদিন পর্যন্ত অগ্রধিকার তারিখ হালনাগাদ হয় এবং নতুন ভিসার সংখ্যা বর্তমান হয়। সকল অভিবাসী ভিসা আবেদনকারীগণ তাঁদের অগ্রাধিকার তারিখের অগ্রগতি সম্পর্কে জানার জন্য পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে (https://bit.ly/2EfaUuN) ভিসা বুলেটিন দেখতে পারেন।

মাস: অক্টোবর ২০১৮
F1 : ১ জুন ২০১১: (আমেরিকান নাগরিকদের অবিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F2A : ২২ আগস্ট ২০১৬: (এলপিআর ব্যক্তিদের স্বামী বা স্ত্রী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)
FX : ১ আগস্ট ২০১৬: (F2A কেইসে যাদের অগ্রাধিকার তারিখ পুরোনো)
F2B : ২২ নভেম্বর ২০১১: (এলপিআর ব্যক্তিদের অবিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F3 : ১৫ জুন ২০০৬: (মার্কিন নাগরিকদের বিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F4 : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৫: (মার্কিন নাগরিকদের ভাই/বোন ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)
E3 : চলতি (দক্ষ কর্মী ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)
EW : চলতি (অদক্ষ কর্মী ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)


ই-মেইল: [email protected] <mailto:[email protected]>