জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত

জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিয়োগের সনদ হাতে নাঈমা খান
জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিয়োগের সনদ হাতে নাঈমা খান

নিউইয়র্কে শিক্ষার প্রসারে অবদান রাখা প্রবাসী বাংলাদেশি নাঈমা খান জাতিসংঘের ‘শুভেচ্ছা দূত’ মনোনীত হয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অব মিডিয়ার নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদের কো-চেয়ার ড. আমিন ক্রুজ ১৫ অক্টোবর এ নিয়োগের আদেশ দেন।
১৯ অক্টোবর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে এ নিয়োগের সনদ আনুষ্ঠানিকভাবে নাঈমা খানের হাতে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় নিউজার্সির সিনেটর বব বেমেন্ডেজ, নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসম্যান আদ্রিয়ানো এসপাইলেট, নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টের জজ কারমেন ভেরাজকুয়েজ ও খান’স টিউটোরিয়ালের সিইও ডা. ইভান খান উপস্থিত ছিলেন। 

জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নাঈমা খান আগামী ৩ বছর শিক্ষা প্রসারের নানা কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন দেশে সভা-সিম্পোজিয়াম করবেন।
নাঈমা খান কমিউনিটির পরিচিত প্রতিষ্ঠান খান’স টিউটোরিয়ালের চেয়ারপারসন। জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত মনোনীত হওয়ার পর তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শিক্ষার উন্নয়নে তাঁর ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। এদিকে নাঈমা খান জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত হওয়ায় কমিউনিটির অনেকেই তাঁকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। ২১ অক্টোবর সকালে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা। লন্ডন থেকে শেখ রেহানা তাঁকে (নাঈমা) ফোনে অভিনন্দন জানান বলে নাঈমা খান জানিয়েছেন। এ সময় শেখ রেহানা বলেছেন, ‘এটা আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত খুশির খবর। প্রবাসী বাংলাদেশিরা যে এগিয়ে যাচ্ছে তার প্রমাণ আপনার এই খবরটি, আপনাকে অভিনন্দন।’
শেখ রেহানা ও নাঈমা খান সহপাঠী ছিলেন।
জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত নিযুক্ত হওয়ায় নাঈমা খান প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, স্কুলগামী সন্তানদের শিক্ষায় নিষ্ঠার সঙ্গে দিক-নির্দেশনা দেওয়ায় তাঁর ওপর সব অভিভাবকের আস্থা তৈরি হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে এমন একটি বিরল দায়িত্ব পাওয়া বড় সম্মানের। এর মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে বাংলাদেশের মুখই উজ্জ্বল হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের ১৭টি বিষয়ের মধ্যে চতুর্থতম হচ্ছে শিক্ষা। জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে থাকে। এসডিজি বাস্তবায়নের কাজ করছে ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অব মিডিয়া এবং হিস্পানিক-আমেরিকান কংগ্রেস অব প্রেস।
নিউইয়র্কে স্বল্প আয়ের বাংলাদেশিসহ অভিবাসী সমাজের সন্তানদের বিশেষায়িত স্কুলগুলোতে ভর্তির উপযোগী করতে খান’স টিউটোরিয়াল গত দুই দশক ধরে অবদান রাখছে। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ নিউইয়র্কের বিভিন্ন মহলে সুনাম অর্জন করেছে। এর প্রতিষ্ঠাতা নাঈমা খানের স্বামী মরহুম ড. মনসুর খান। তিনি শিক্ষায় অবদানের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক পেয়েছিলেন।
নাঈমা খান ঢাকা ও রাশিয়ায় (অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন) লেখাপড়া শেষে করে দেশে ফিরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৫ সালে স্বামী ড. মনসুর খান ও একমাত্র পুত্র ইভান খানকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং নিউইয়র্কে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি নিউইয়র্ক সিটির সার্টিফায়েড এলিমেন্টারি স্কুলশিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং শিক্ষকতার পাশাপাশি নিউ স্কুল ইউনিভার্সিটি থেকে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৯৫ সালে ড. মনসুর খান ‘খান’স টিউটোরিয়াল’ প্রতিষ্ঠার সময় নাঈমা খান সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন এবং বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করছেন। নিউইয়র্কে নগরীতে বর্তমানে খান’স টিউটোরিয়ালের ১১টি শাখা চালু রয়েছে।
নাঈমা খান নানা কর্মকাণ্ডের জন্য এর আগে ইউনেসকো সম্মাননা ও ড্যানি গ্রোভার সম্মাননা লাভ করেছেন। এ ছাড়া তিনি ব্যক্তিগতভাবে ইউএস কংগ্রেস, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য ও নগর, নাসাও কাউন্টি, ব্রঙ্কস বরোর কয়েকজন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে সম্মাননা পেয়েছেন।