মামলা নিয়ে দুই পক্ষে কাদা ছোড়াছুড়ি

আদালতের স্থগিতাদেশে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন থমকে গেছে। আবার কবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে, এ নিয়ে জ্যাকসন হাইটস থেকে ব্রুকলিন, অ্যাস্টোরিয়া থেকে ব্রঙ্কসে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চায়ের টেবিল চলছে উত্তপ্ত আলোচনা। নির্বাচন আদৌ হবে কি না, তা নিয়েও চলছে কানাঘুষা। যাঁরা নির্বাচনে জড়িয়েছেন, তাদের মধ্যে চলছে দলাদলি, চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। দেয়ালে ঝুলে থাকা প্রার্থীদের পোস্টার পথচারী প্রবাসীদের মনে করিয়ে দিচ্ছে—ঐক্যের কথা বলে সোসাইটিতে বিভক্তির বিষয়টি।

আগামী ৩০ অক্টোবর আদালতে মামলার শুনানির জন্য নতুন তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেদিন চূড়ান্ত রায় হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন স্থগিতের কারণে কার লাভ, কার ক্ষতি—তা নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন সাধারণ প্রবাসই ও প্রার্থীরা। 

২১ অক্টোবর আমেরিকায় বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিন দিন আগে ১৮ অক্টোবর আদালতের নির্দেশে হঠাৎ নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাই শেষে দুই সদস্য পদপ্রার্থী আকবর আলী ও জেড আলম লিটুর মনোনয়নপত্র বাদ বাতিল করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা বাদী হয়ে জ্যামাইকায় সুপ্রিম কোর্ট সাটফিন বুলেভার্ডে মামলা করেন। সেই মামলার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নির্বাচন স্থগিত করেন।
আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দুই প্রার্থী বাদ দেওয়া হয়েছে, এই মর্মে আদালতে আপিল করা হয়েছে বলে সূত্রে জানা যায়। আদালতের নির্দেশে আবার তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন বলে নয়ন-আলী পরিষদ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। নয়ন-আলী পরিষদের সভাপতি পদপ্রার্থী কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন জানান, নির্বাচন হওয়া না-হওয়া এবং দুই প্রার্থীর ভবিষ্যৎ এখন আদালতের ওপরই নির্ভর করছে।
নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় সোসাইটির বিভিন্ন স্তরে হাজার হাজার ডলার খরচ হয়ে গেছে। নির্বাচনের কেন্দ্র বুকিং, জনবল নিয়োগ, মেশিন ভাড়াসহ যাবতীয় বিষয় নির্বাচন কমিশন ভাড়ায় ব্যবস্থা করেছে। এতে খরচ হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। কিন্তু এসব ডলার প্রবাসে খেতে খাওয়া প্রবাসীদের সদস্য চাঁদা থেকে আসা । অহেতুক মামলার গ্যাঁড়াকলে পড়ে ডলার খরচের বিষয়টি এখন সবার মুখে মুখে। এ সব ডলার সোসাইটির কোষাগারে থাকলে নিঃসন্দেহে সোসাইটির বড় কোনো উন্নয়নে খরচ করা যেত বলে সচেতন মহল মনে করেন। কিন্তু মামলার কারণে তা আর সম্ভব হবে না। কিন্তু এ দায় কার সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র।
আদালতের রায়ে মামলা স্থগিত হওয়ার পরও নয়ন-আলী পরিষদ ও রব রহুল পরিষদের প্রার্থীরা থেমে নেই গণসংযোগ থেকে। দিন রাত তাঁরা ভোটারদের সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত। তাঁরা মনে করেন, আদালতের রায়ে শিগগিরই আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই তারা মরিয়া হয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নির্বাচন স্থগিত হওয়া নিয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে দোষারোপ এবং আপত্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষ দিচ্ছেন। আবার কেউ নির্বাচন কমিশনকে দোষ দিচ্ছেন। এ নিয়ে উভয় প্রার্থী এবং সমর্থকদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। অশালীন বক্তব্য নিয়ে গত ১৯ অক্টোবর ব্রুকলিনে রাঁধুনি রেস্টুরেন্টের সামনে নয়ন-আলী পরিষদের সমর্থক আলী ইমামের সঙ্গে রব-রুহুল পরিষদের মাহবুব ও তাজুল সমর্থকদের সঙ্গে তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে কী হবে—তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। আদালতের নির্দেশে নির্বাচন স্থগিত হলেও নির্বাচন নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের আগ্রহে তেমন ভাটা পড়েনি। সোসাইটি আর দলাদলি নিয়ে যারা সক্রিয়, তাদের ব্যস্ততা আরও বেড়েছে।