মধ্যবর্তী নির্বাচনে সহিংস ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে

যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৬ নভেম্বর মধ্যবর্তী নির্বাচন। অনেকেই বলছেন, আমেরিকার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী নির্বাচন। এই নির্বাচনের ফলে শুধু যে মার্কিন কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ হাত বদল হতে পারে তা–ই নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালের পরবর্তী বছরগুলোর চরিত্রও নির্ধারিত হতে পারে।

অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করছেন, এই নির্বাচনে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ, অর্থাৎ প্রতিনিধি পরিষদ, ডেমোক্র্যাটদের হাতে ফিরে আসবে। একটি ট্রাম্পবিরোধী ‘নীল ঢেউ’ আসছে বলে যা ভাবা হচ্ছিল, তা বাস্তবায়িত না হলেও কংগ্রেসের হাতবদল ঠেকানো ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান দলের পক্ষে সম্ভব হয়তো হবে না। তবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ বা সিনেট রিপাবলিকানদের হাতেই থাকছে, এ ব্যাপারে সব বিশ্লেষক একমত।

সর্বশেষ জাতীয় জনমতের ভিত্তিতে প্রস্তুত নির্বাচনী মডেল অনুসারে প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটরা ২০৫ ও রিপাবলিকানরা ২০০ আসন পেতে পারে। এখনো ফলাফল অনিশ্চিত—এমন আসনের সংখ্যা ৩০। অন্যদিকে, সিনেটে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দলের অবস্থান যথাক্রমে ৪৪ ও ৫০। অনির্ধারিত এমন আসনের সংখ্যা ৬।

আগামী সপ্তাহের নির্বাচনকে অনেকেই ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার ওপর একটি রেফারেনডাম বা গণভোট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ট্রাম্প নিজেও সে কথা মনে করে ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ২০১৬ সালের মত এই প্রচারণায়ও তাঁর প্রধান অস্ত্র অভিবাসনবিরোধী ভীতির ব্যবহার। দক্ষিণ আমেরিকার তিনটি দেশ থেকে আশ্রয়প্রার্থী কয়েক হাজার মানুষের একটি কাফেলা মেক্সিকো হয়ে এগিয়ে আসছে। ট্রাম্প বলেছেন, এই ‘ক্যারাভান’ আমেরিকান বিরুদ্ধে একটি ‘অভিযান’, তা রোখার জন্য তিনি সীমান্ত এলাকায় সামরিক বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।

অক্টোবরের মাঝেও মনে হচ্ছিল, তাঁর এই নির্বাচনী রণকৌশল কাজ লাগছে। একদিকে প্রেসিডেন্টের নিজের জনসমর্থন বৃদ্ধি পাচ্ছিল, অন্যদিকে জাতীয় জনমতে দুই দলের ব্যবধান ক্রমে কমে আসছিল। মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনী প্রণোদনা চিরকালই কিছুটা স্তিমিত থাকে। কিন্তু এবার ভোট প্রদানের আগ্রহের ব্যাপারে গেল কয়েক সপ্তাহে রিপাবলিকান দল প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে তাদের ব্যবধান অনেকটাই কমিয়ে আনতে পেরেছিল। এ ব্যাপারে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ভূমিকা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। অন্য সব কাজ বাদ দিয়ে তিনি গত এক মাসে একের পর এক নির্বাচনী সভা করে গেছেন।

এর মধ্যে ঘটল দুটি সহিংসতার ঘটনা। প্রথমত, ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত ফ্লোরিডার এক ব্যক্তি ১৫ জন ডেমোক্র্যাট নেতা ও সিএনএনের ঠিকানায় প্যাকেটবোমা পাঠিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ল। যাঁদের কাছে বোমা পাঠানো হয়, তাঁরা সবাই ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক। দ্বিতীয়ত, দুদিন আগে পেনসিলভানিয়ার পিটার্সবার্গে একটি ইহুদি উপাসনালয়ে আরেক ট্রাম্প–সমর্থকের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণের কারণে ১১ ব্যক্তি নিহত ও অন্য আটজন আহত হলেন। উভয় ঘটনার জন্য পরোক্ষভাবে হলেও ট্রাম্প দায়ী, এ কথা বলা হচ্ছে। কারণ, তিনি যে ভাষায় তাঁর প্রতিপক্ষ, অভিবাসীসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করেছেন, তাতে ট্রাম্প–সমর্থকদের সহিংসতায় উসকে দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প নিজে অবশ্য এই অভিযোগ সরোষে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এই দুই ঘটনা ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আগত ‘ক্যারাভান’ কীভাবে আগামী মঙ্গলবারের নির্বাচন প্রভাবিত করবে, সে কথা স্পষ্ট নয়। তবে সমালোচনার তির ট্রাম্পের দিকে তাক হওয়ায় স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পবিরোধী মনোভাব দৃঢ় হতে পারে বলে ভাবা হচ্ছে। এই মনোভাবের প্রতিফলন পাওয়া যায় ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় রোনাল্ড রিগানের কন্যা প্যাটি ডেভিসের লেখা এক উপসম্পাদকীয়তে। সেখানে তিনি বলেছেন, জাতীয় সংকটের সময় একজন প্রেসিডেন্টের কাজ বেদনার উপশমে নেতৃত্ব দেওয়া। কিন্তু ট্রাম্পের কাছ থেকে সে নেতৃত্ব আশা করা অর্থহীন। তাঁর মধ্যে সে বোধ বা বিবেচনা নেই।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতীয় সংকটের বর্তমান মুহূর্তে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন—এ কথা ঠিক, কিন্তু তাঁর সে কথায় আস্থা আছে, রিপাবলিকান পার্টির বাইরে এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। শোক প্রকাশের জন্য আজ মঙ্গলবার ট্রাম্প পিটার্সবার্গ আসছেন, অথচ এই শহরের নাগরিকেরা এক খোলা চিঠিতে তাঁর আসার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। ‘আপনি আমাদের শহরে স্বাগত নন’—চিঠিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে—এমন মানুষের সংখ্যা ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শহরের মেয়র ও ইহুদিধর্মীয় একাধিক নেতা একই কথা বলেছেন।

ট্রাম্প–সমর্থকদের সহিংসতা ও ঘৃণার অভিযানের বিরুদ্ধে এক ভিন্ন বার্তা দিতে এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠী। সিলেব্রেট মার্সি নামের একটি মুসলিম সংগঠন বিগত ৪৮ ঘন্টায় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ডলারের চাঁদা সংগ্রহ করেছে। এই অর্থ পিটার্সবার্গের গুলিবর্ষণে নিহত ব্যক্তিদের সাহায্যে ব্যয় করা হবে বলে জানা গেছে।