আসছে থ্যাংকসগিভিং উৎসব

থ্যাংকসগিভিং ডেতে টার্কি দিয়ে আপ্যায়ন করাটাই রেওয়াজ
থ্যাংকসগিভিং ডেতে টার্কি দিয়ে আপ্যায়ন করাটাই রেওয়াজ

বড়দিনের পর আমেরিকার সবচেয়ে বড় উৎসব বলা হয় থ্যাংকসগিভিংকে। অনেকে আবার থ্যাংকসগিভিংকে রাখতে চান এক নম্বরে। বাংলাদেশে যেমন পয়লা বৈশাখ, সব ধর্মের-সব বর্ণের মানুষের উৎসব, থ্যাংকসগিভিংও এখানে সেরকম। বিশাল দেশ আমেরিকায় পৃথিবীর প্রায় সব দেশের, সব ভাষা-সংস্কৃতির মানুষ বাস করে। ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষকে একই সুতায় গাঁথে থ্যাংকসগিভিং ডে। প্রতি বছর নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবার এই উৎসব উদ্‌যাপিত হয়। বছরের বহু আকাঙ্ক্ষিত এই উৎসব উদ্‌যাপন হবে এই সপ্তাহে, যেখানে সবাই নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ও আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করবেন। এই দেশে যারা দীর্ঘদিন ধরে আছেন, তারা নানাভাবে এই দিনটাকে উদ্‌যাপন করেন। এখন আমেরিকান ফুটবলের মৌসুম। এমন অনেকেই আছেন যারা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মজাদার খাবার সহযোগে ফুটবল ম্যাচ দেখে সময়টা উপভোগ করতে চান।
এখন যেমন থ্যাংকসগিভিং সর্বজনীন উৎসব, আগে সেটা ছিল না। ১৭৮৯ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন কংগ্রেসের অনুরোধে এই উৎসব উপলক্ষে ছুটি ঘোষণা করেন। তবে নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবার থ্যাংকস গিভিং ডে পালিত হচ্ছে ১৮৬৩ সাল থেকে। গৃহযুদ্ধের সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে নভেম্বর মাসের শেষ বৃহস্পতিবারকে থ্যাংকসগিভিং ডে হিসেবে ঘোষণা করেন, যা আজ পর্যন্ত চালু আছে। মাঝের দুই বছর বাদ দিয়ে সে সময় থেকেই দিবসটি ফেডারেল ছুটির দিন হিসেবে পালন হয়ে আসছে। ১৯৩৯ সালে ছুটির এই দিনটাকে তৃতীয় বৃহস্পতিবার করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। শিপিং মৌসুমকে দীর্ঘায়িত করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ১৯৪১ সালে ছুটির দিন আবার চতুর্থ বৃহস্পতিবারে নিয়ে আসা হয়, এখন পর্যন্ত এই ব্যবস্থাই বহাল আছে।

তবে সর্বজনীন উৎসবে রূপ নেওয়ার অনেক আগে থেকে ‘থ্যাংকসগিভিং’ ডে পালিত হতো। স্প্যানিশ ব্যবসায়ী ফ্রান্সেসকো ভাসকুয়েজ ডি কোরানডো আমেরিকার মাটিতে প্রথম দিনটা পালন করেছিলেন সেই ১৫৪১ সালে। ১৬০৭ সালে কলোনিস্টরা মেইন স্টেটে স্থানীয় আবনাকি জনগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যে সময় থেকে দিনটা উদ্‌যাপন হয়ে আসছে বলে রেকর্ড রয়েছে। কয়েক বছর পর জেমসটাউনে সেটলাররা ‘থ্যাংকসগিভিং প্রার্থনা’ তে অংশ নেন। তবে ১৬২১ সালে প্লেমাউথে যে থ্যাংকসগিভিং পালিত হয়েছিল, সেটাকে বড় পরিসরের সবচেয়ে পুরোনো আয়োজন বলা যায়। শরৎকালে ফসল ফলার সময়ে তিন দিনব্যাপী এই উৎসব হয়েছিল, যেখানে খাদ্যতালিকায় ছিল টার্কি, হাঁস, লবস্টার, কর্নসহ আরও অনেক কিছু। পিলমোথ প্ল্যান্টেশন লিভিং হিস্ট্রি মিউজিয়াম প্রতি বছর থ্যাংকসগিভিং ডিনারের আয়োজন করে। এই আয়োজন দিয়ে তারা জানাতে চায় দিনটি ১৬৭৮ সাল থেকে বোস্টনে পালিত হয়ে আসছে।
বছরের পর বছর ধরে থ্যাংকসগিভিংয়ের আয়োজনের ব্যাপকতা তো কমেনি, বরং দিন দিন সেটা বেড়ে চলেছে। সারা বছর ধরে মানুষ যাদের সঙ্গে ওঠা-বসা করে, তাদের একটি দিন ‘ধন্যবাদ’ জানানোর প্রতীক হয়ে উঠেছে দিনটি। থ্যাংকসগিভিং ডে-কে কেউ কেউ টার্কি ডেও বলে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে থ্যাংকসগিভিং ডে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক এক অনুষ্ঠান। এই দিনের উদ্দেশ্য সবার জীবনের প্রতিটি সাফল্যের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো। খাবারের তালিকায় থাকে টার্কি রোস্ট, ক্রানবেরি সস, মিষ্টি আলুর ক্যানডি, ম্যাশড পটেটো ও ঐতিহ্যবাহী পামকিন পাই।
অন্যান্য আমেরিকানদের মতো প্রবাসী বাঙালিরাও নিজেদের বাসায় মহাসমারোহে দিনটি পালন করেন। সেখানে তারা মেন্যু হিসেবে এই পদগুলোই রাখে। কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট নার্গিস আহমেদ প্রতি বছর নিজের বাড়িতে থ্যাংকসগিভিং পার্টির আয়োজন করেন। আশির দশক থেকে এটা করেন তিনি। এই নিয়ে তিনি জানান, ‘আশির দশকে ইন্টারনেট ছিল না। বিনোদনের খুব বেশি উপকরণ ছিল না। সন্ধ্যা হলে একে অন্যের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। সবার বাসা থেকে এটা-সেটা বানিয়ে নিয়ে সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়া করতাম। এরপর এটা বড় পরিসরে করতে শুরু করলাম। থ্যাংকসগিভিং ডে-কে বেছে নিলাম আমরা। কারণ এটি আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী উৎসব। দীর্ঘদিন ধরে এই উৎসবের আয়োজন করছি আমি।’
থ্যাংকসগিভিংয়ের পরের দিনকে বলা হয় ব্ল্যাক ফ্রাইডে। এই দিন আমেরিকার সমস্ত বিখ্যাত স্টোরগুলোয় বিশাল মূল্যছাড় থাকে। এ দিন সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয়। ক্রেতারা অপেক্ষা করে থাকে সারা বছর ধরে এই দিনের জন্য। বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস পণ্য কেনার ব্যাপারে ক্রেতাদের আগ্রহ থাকে বেশি। আর এটা বিক্রিও হয় প্রচুর।