দেশে যাচ্ছেন আ.লীগ ও বিএনপির নেতারা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঢেউ লেগেছে আমেরিকায়ও। নির্বাচন সামনে রেখে প্রবাসীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস থেকে ব্রুকলিন, ব্রঙ্কস—নিউইয়র্কের সব এলাকায় চা-কফির পেয়ালায় চুমুকের সঙ্গে চলছে বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। বিশেষ করে আমেরিকাপ্রবাসী বাংলাদেশি রাজনীতিকদের নিয়ে আলোচনা চলছে বেশি। দলীয় মনোনয়ন পেতে কে কত বড় অঙ্কের অর্থ দিচ্ছেন, কে কোথায় ধরনা দিচ্ছেন—এসব খবর নিয়ে চলছে প্রবাসীদের জম্পেশ আড্ডা। আমেরিকানদের আড্ডার মূল বিষয় কখনো রাজনীতি না হলেও এখানে থাকা বাংলাদেশিদের চালচিত্র ভিন্ন। এখানে দেশের রাজনীতি আর দলাদলি নিয়ে সদা চঞ্চল প্রবাসীরা। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে সেই চাঞ্চল্য অনেক বেড়েছে।

কেউ কেউ নিজ নিজ দলের মনোনয়নপত্র কিনতে, মনোনয়ন পেতে এরই মধ্যে দেশে গেছেন। কেউ যাচ্ছেন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য। শীতের মৌসুমে নিউইয়র্ক প্রবাসীদের বিরাট অংশ এমনিতেই দেশে যান। এবারে অনেকেই যাচ্ছেন নিজের পছন্দের দলকে ভোট দিতে। অনেক প্রবাসীর বাংলাদেশে ভোটাধিকার নেই, তারপরও তাঁরা যাচ্ছেন। আমেরিকা থেকে একাধিক প্রবাসী মনোনয়নপ্রত্যাশী এখন দেশে অবস্থান করছেন। নির্বাচনের ঘোষিত সময় ৩০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে যাওয়া-আসার টিকিট বুকিং দিতে আগ্রহীরা ট্রাভেল এজেন্সিগুলোতে খোঁজখবর রাখছেন।

ভোট এখানে নয়, বাংলাদেশে। তবু নিউইয়র্কের পাঁচ বরো তথা ব্রুকলিন, ব্রঙ্কস, ম্যানহাটন, লং আইল্যান্ড, কুইন্সসহ উত্তর আমেরিকার বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এখন ভোটের আমেজ বিরাজ করছে। চায়ের আড্ডায়, রেস্তোরাঁয়, ঘরোয়া আলোচনায় শুধু নির্বাচনের কথা। কে হারবে? কে কত আসন পাবে? কে কত আসন নেবে, কীভাবে নেবে? কে কোন আসনে জিতবে? কোন দল কত আসন পাবে?—এসব হিসাব কষতে দেখা গেছে প্রবাসীদের নিত্য আড্ডায়। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেককে।
দলীয় মনোনয়ন পেতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপির একাধিক প্রার্থী ইতিমধ্যে দেশে চলে গেছেন। আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেন (সিলেট-১), যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ (সিলেট-৪), আবদুল কাদের মিয়া (চট্টগ্রাম-৩ সন্দ্বীপ)। অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন জাহাঙ্গীর এম আলম (ভোলা-২), পারভেজ সাজ্জাদ (চট্টগ্রাম-১), সোলেমান ভূঁইয়া (ফেনী-৩), মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল (চট্টগ্রাম-৩ সন্দ্বীপ)।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এসব নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। নানাভাবে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। কারণ তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে খবর নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা মনোনয়ন নির্ধারণ করবেন। এঁদের মধ্যে যাঁরা দলীয় মনোনয়ন পাবেন, তাঁদের হয়ে কাজ করতে নিউইয়র্ক থেকে আরও অনেকে দেশে যাবেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভাবতে পারেনি বিএনপি নির্বাচনে যাবে। তাদের ধারণা ছিল, বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এখন বিএনপির গণজোয়ার। ভবিষ্যতে ঐক্যফ্রন্টই সরকার গঠন করবে। আর বিএনপিকে বিজয়ী করতে নির্বাচনের আগেই আমরা দেশে যাব।’
বিএনপির আরেক নেতা সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসিম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা কয়েকজন মিলে নির্বাচনের আগে দেশে যাব এবং বিএনপিকে জয়ী করতে সার্বিক সহযোগিতা দেব।

যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের জনসংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েস বলেন, দলের পক্ষ থেকে সভা করে অনেকেই নির্বাচনে দেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আরেক দফা প্রধানমন্ত্রী দেখা, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য এবারের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের রেকর্ডসংখ্যক নেতা-কর্মী নির্বাচনে প্রতিটি এলাকায় কাজ করার জন্য দেশে যাচ্ছেন।

নির্বাচনের আগে দেশে যাওয়া প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এনাম বলেন, ‘অবশ্যই আমরা ভোট দিতে দেশে যাব এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে সব রকমের সহযোগিতা দেব।’

যুক্তরাষ্ট্র শাখা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইফজাল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ৫০০ জনের বহর নিয়ে দেশে যাব। ভোটের দুই সপ্তাহ আগে থেকেই নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করব এবং নৌকা প্রতীকে ভোট দেব। আশা করি তৃতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবেন।’

প্রবাসী এনায়েত চৌধুরী জানালেন ভিন্ন কথা। পরিবার নিয়ে দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা হবে—এমন ধরনা করেই দেশে যাওয়া জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত রেখেছেন এই প্রবাসী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের চাওয়া দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হোক। ভালো একটা নির্বাচন হোক যাতে সবাই ভোট দিতে পারেন।’