বাজেট-বিতর্ক মার্কিন সরকারের কাজই বন্ধ করে দিচ্ছে

মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ বরাদ্দ না হলে বাজেটসংক্রান্ত কোনো আইনে স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। ছবি: টুইটার
মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ বরাদ্দ না হলে বাজেটসংক্রান্ত কোনো আইনে স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। ছবি: টুইটার

বাজেট প্রশ্নে অচলাবস্থা দূর না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একাংশের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশটির কংগ্রেসে বাজেট পাস নিয়ে মতৈক্য না হওয়ায় আজ শনিবার (স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত) থেকে ফেডারেল সরকারের এক–চতুর্থাংশের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ বছরের মধ্যে এই প্রথম একই বছরে তিনবার সরকারের একাংশের কাজকর্ম বন্ধ ঘোষণা করতে হচ্ছে।

সিএনএন ও বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট দুই কক্ষেই অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সিনেটের হুইপ রিপাবলিকান নেতা জন করনিন নিশ্চিত করেছেন, আজ সিনেটে কোনো ভোট হচ্ছে না। এতে সরকারের একাংশের কাজকর্ম বন্ধের বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। ফলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, পরিবহন, কৃষি, বিচার বিভাগের কাজকর্ম বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে ফেডারেল জাতীয় উদ্যান ও বন বিভাগের কাজও বন্ধ থাকবে। স্থানীয় সময় গতকাল মধ্যরাতের পর থেকে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেটের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। প্রায় এক লাখ সরকারি কর্মচারীর ওপর তা প্রভাব ফেলবে।

আর বাজেট নিয়ে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে মেক্সিকো সীমান্তে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়াল নির্মাণের জন্য অর্থ চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ বরাদ্দ না হলে বাজেটসংক্রান্ত কোনো আইনে স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা জানিয়েছেন, তাঁরা ১৩০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ বরাদ্দ সমর্থন করবেন না।

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফেডারেল সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচল রাখতে গত বুধবার অর্থ ব্যয়ের জন্য বিল পাস হয়। এর মধ্যে ট্রাম্পের দেয়াল নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সম্মতি দেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় ট্রাম্পের সমর্থক ও কট্টর রিপাবলিকানরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। সেই জোরে দেয়াল নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি ডলার অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারে অনড় থাকেন ট্রাম্প। এ বরাদ্দ দেওয়া না হলে ওই বিলে তিনি স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়েছেন।

বর্তমান নিয়ম অনুসারে, সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে প্রতিনিধি পরিষদে এ ধরনের বিল পাস হয়ে যায়। প্রতিনিধি পরিষদ কক্ষে এখন ট্রাম্পের দলের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয় পাওয়ার কারণে ডেমোক্র্যাটরা জানুয়ারি মাস থেকে ওই কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেবেন।

টুইটারে ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে সুচালো ধাতব–মাথার প্রাচীরের এই নকশার ছবি পোস্ট করেন। ছবি: টুইটার
টুইটারে ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে সুচালো ধাতব–মাথার প্রাচীরের এই নকশার ছবি পোস্ট করেন। ছবি: টুইটার

ট্রাম্প যে পরিমাণ অর্থ চেয়েছেন, তা প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্টের কাছে তা পৌঁছানোর আগে সিনেটে ৬০ ভোটে পাস হতে হবে। আর সিনেটে রিপাবলিকানদের আসন রয়েছে ৫১টি। গতকাল এই ইস্যুতে কংগ্রেসে উত্তেজনা বিরাজ করে। ডেমোক্র্যাটরা এই অর্থ বরাদ্দের বিরোধিতা করলে তিনি ফেডারেল সরকারের ওই সব প্রতিষ্ঠানের বাজেটে স্বাক্ষর না করে কাজকর্ম বন্ধ করে দেবেন বলে হুমকি দেন।

টুইটারে ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে সুচালো ধাতব–মাথার প্রাচীরের একটি নকশার ছবিও পোস্ট করেছেন। প্রাচীরটিকে তিনি ‘সম্পূর্ণ কার্যকর ও একই সঙ্গে সুন্দর’ বলে মন্তব্য করেছেন।

এই সীমান্তপ্রাচীর নির্মাণের বিষয়টি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে ছিল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারের সময় তিনি এই প্রাচীর নির্মাণের জন্য মেক্সিকোকেও অর্থ দিতে হবে বলে দাবি করেছিলেন। তবে মেক্সিকো এর জন্য কোনো অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

অধিবেশন মুলতবি হওয়ার আগে সিনেট একটি বিল পাস করেছে, যাতে কাজকর্ম বন্ধ হওয়ার কারণে ছুটিতে যাওয়া সরকারি কর্মচারীরা কাজে ফিরে আসার পর বেতন পান। সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি সিনেটে পাস হয়েছে। এটা এখন প্রতিনিধি পরিষদেও পাস হতে হবে। এ বিল উপস্থাপন করেন মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ক্রিস ভ্যান ও বেন কার্ডিন। মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে বিপুলসংখ্যক সরকারি কর্মচারী বসবাস করেন।

ফেডারেল সরকারের একাংশের কাজকর্ম বন্ধের জন্য ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটদের দোষারোপ করেছেন। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরাই এটা বন্ধ করেছে, কারণ আমরা আমাদের কাজ করেছি। আজ রাতে এটা বন্ধ হয়ে যাবে কি না, তা নির্ভর করছে ডেমোক্র্যাটদের ওপর। আশা করি, আমরা তা করব না। তবে আমরা দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজকর্ম বন্ধ থাকার ব্যাপারে পুরোপুরি প্রস্তুত আছি।’

রিপাবলিকান সিনেটর ম্যাককনেল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সংকট সমাধানে গঠনমূলক আলোচনা চলছে। এই আলোচনায় তিনি ফিরবেন কি না, সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বারবারই বলছি, আমাদের ডেমোক্রেটিক ভোট ও প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষর প্রয়োজন।’