ওয়াশিংটনে ক্ষমতার পালাবদল বিভক্তি কেবল বাড়াবেই

বৃহস্পতিবার থেকে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণভার চলে যাচ্ছে বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের হাতে। গত দুই বছর কংগ্রেসের উভয় কক্ষই ছিল ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টির নিয়ন্ত্রণে। প্রশাসনের সমক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় শাখা হলেও রিপাবলিকান কংগ্রেস ট্রাম্পের প্রতি নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে গেছে। কিন্তু এখন অবস্থা বদলে যাবে, তা ট্রাম্পও বুঝতে শুরু করেছেন। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন ছাড়া কোনো প্রস্তাব পাসই তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না।

সে কথার প্রথম লক্ষণ পাওয়া গেল গতকাল মঙ্গলবার। এদিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাজেট প্রশ্নে অব্যাহত অচলাবস্থা ও ফেডারেল সরকারের ‘বন্ধ’ থামাতে মতবিনিময়ের জন্য রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃবৃন্দকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি উভয় দলের নেতাদের বুঝিয়ে বলতে চান সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য তাঁর প্রস্তাবিত ‘দেয়াল’ এত জরুরি কেন।

এই ‘দেয়াল’ নিয়ে মতান্তরের কারণে প্রায় ১০ ধরে ফেডারেল সরকারের এক–চতুর্থাংশের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে আছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, মেক্সিকোর সঙ্গে নিরাপত্তাদেয়াল নির্মাণে আগামী বাজেটে পাঁচ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ না করা হলে তিনি সেই বাজেট প্রস্তাবে স্বাক্ষর করবেন না। বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, তাঁরা দেয়ালের জন্য এক পয়সাও দেবেন না, তবে সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার দিতে প্রস্তুত।

ডেমোক্র্যাটরা এই ‘বন্ধের’ জন্য সব দায় চাপিয়েছেন ট্রাম্পের ঘাড়ে। গত মাসে হোয়াইট হাউসে এক প্রকাশ্য বৈঠকে ট্রাম্প জানান, সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য তিনি সরকারের কাজকর্ম বন্ধ করে দিতে প্রস্তুত। এই কাজের জন্য তিনি গর্বিত বোধ করবেন। কিন্তু তাঁর অনুগত সমর্থকেরা ছাড়া রিপাবলিকান দলের প্রধান নেতাদের কেউই ট্রাম্পের এই বন্ধের সমর্থনে এগিয়ে আসেননি। ডেমোক্র্যাটদের একগুঁয়ে মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সমঝোতার একটি চেষ্টা করেছিলেন। তিনি প্রস্তাব রেখেছিলেন, আড়াই বিলিয়ন ডলার দিলেই ট্রাম্প সন্তুষ্ট হবেন। কিন্তু সে প্রস্তাব ডেমোক্র্যাটরা ফিরিয়ে দিয়েছেন।

এদিকে নতুন কংগ্রেসে সম্ভাব্য ডেমোক্রেটিক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি পরিষদের প্রথম দিনই তাঁরা সরকারের কাজকর্ম পুনারম্ভের জন্য বাজেট বরাদ্দ প্রস্তাব পাস করবেন। তাঁরা দুটি ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব গ্রহণ করবেন। প্রথম প্রস্তাবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ছাড়া বাকি সব ফেডারেল সরকারের এক বছরের বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে। কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে একই রকম একটি প্রস্তাব আগেই গৃহীত হয়েছে। তাঁদের দ্বিতীয় প্রস্তাবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের জন্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় বরাদ্দ মঞ্জুর করা হবে। এতে সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য চলতি বরাদ্দ অব্যাহত রাখা হবে, কিন্তু ট্রাম্পের দেয়ালের জন্য কোনো অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা হবে না। উভয় পক্ষকে আলাপ-আলোচনার জন্য সময় দিয়ে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এই আংশিক বাজেট প্রস্তাব তাঁরা গ্রহণ করবেন।

হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, ট্রাম্প এমন প্রস্তাব কিছুতেই সমর্থন করবেন না। কিন্তু তার বদলে অন্য আর কী তিনি করবেন, সে কথাও পরিষ্কার নয়। ট্রাম্পের দেয়ালের ব্যাপারে ডেমোক্র্যাটরা এতটা খেপে আছেন যে বিনিময়ে কিছু না পেলে এই কাজে তাঁরা কোনো অর্থ বরাদ্দ করবেন বলে মনে হয় না। কোনো কোনো রিপাবলিকান নেতা মনে করেন, অভিবাসন প্রশ্নে ডেমোক্র্যাটদের দাবি মেনে নিলে উভয় পক্ষের মধ্যে একটা রফা হতে পারে। তাঁরা দীর্ঘদিন থেকে ‘ডাকা’ কর্মসূচিভুক্ত বৈধ কাগজপত্রবিহীন তরুণ অভিবাসীদের বৈধকরণের দাবি জানিয়ে আসছেন। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম জানিয়েছেন, দেয়াল বাবদ অর্থ বরাদ্দ হলে এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।