ফেডারেল সরকারের অচলাবস্থা কাটাতে চাপ বাড়ছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

একটানা ৩২ দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের এক–চতুর্থাংশ অচল হয়ে পড়ে আছে। প্রায় আট লাখ লোকের বেতন হয়নি। অভাবী ফেডারেল কর্মীরা বিনা পয়সায় খাবার সংগ্রহের লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। নিরাপত্তাকর্মীর অভাবে বিমান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। অবিলম্বে এই অচলাবস্থা দূর করতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের ওপরই চাপ বাড়ছে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন সিনেটে অচলাবস্থা শেষ করার লক্ষ্যে দুটি বিপরীত প্রস্তাব নিয়ে ভোট হবে। একটি ট্রাম্পের দেয়ালের সমর্থনে রিপাবলিকান পার্টির, অন্যটি সেই দেয়ালের বিরুদ্ধে ডেমোক্রেটিক পার্টির। কোনোটিই সিনেটে পাস হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবু শেষ পর্যন্ত অচলাবস্থা থামাতে দুই পক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতেই অনেকে আশার আলো দেখছেন।

রিপাবলিকান প্রস্তাবটির কেন্দ্রে রয়েছে ট্রাম্পের দাবি মতো মেক্সিকোর সঙ্গে দেয়াল নির্মাণে ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ। প্রস্তাবটি যাতে ডেমোক্র্যাটদের আগ্রহী করে, সে জন্য ‘ডাকা’ কর্মসূচির সাত লাখ অবৈধ তরুণ ও দুর্যোগের কারণে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সাময়িকভাবে আশ্রয়প্রাপ্ত তিন লাখ অস্থায়ী অভিবাসীর পরবর্তী তিন বছরের জন্য বৈধতা প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ প্রতিরোধের জন্য মোটা অঙ্কের বরাদ্দও এই প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রক্ষণশীলদের খুশি করতে এই প্রস্তাবে শিশুসহ সব বৈধ আশ্রয় প্রার্থীর যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় লাভের কঠোর বিধিনিষেধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রস্তাবটি গৃহীত হতে হলে অন্তত ৬০টি ভোট লাগবে। সিনেটে এই মুহূর্তে ৫৩-৪৭ ভোটের ব্যবধানে রিপাবলিকানদের প্রাধান্য রয়েছে। সব রিপাবলিকান প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার পরও কমপক্ষে সাতটি ডেমোক্রেটিক ভোট লাগবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান সহযোগীরা আশা করছেন, মধ্যপন্থী ডেমোক্রেটিক সিনেটরেরা দলছুট হয়ে এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবেন। কিন্তু সাতটি ভোট পাওয়া কার্যত অসম্ভব, এ ব্যাপারে সবাই একমত।

অন্যদিকে, ডেমোক্রেটিক প্রস্তাবে সরকারের সব দপ্তরের জন্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করার বিধান রাখা হয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, এই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই সীমান্ত নিরাপত্তা প্রশ্নে একটা সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এই প্রস্তাবে সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত এক বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের কথা বলা হলেও ট্রাম্পের দেয়ালের জন্য এক ডলারও নেই। এটিও পাস হওয়ার কোনো আশা নেই। কারণ, যে অতিরিক্ত ১৩ রিপাবলিকান ভোট তাদের দরকার, সে ভোট তাঁরা পাবেন—এ কথা কেউ বিশ্বাস করেন না।

উভয় প্রস্তাব ভোটে বাতিল হলেও আলাপ-আলোচনা শুরুর জন্য এটি একটি ক্ষেত্রে তৈরি করতে পারে। উভয় দলের নেতারাই বলেছেন, এখন যা জরুরি তা হলো অচলাবস্থা দূর করে সরকারের কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে অবিলম্বে সলাপরামর্শ শুরু করা। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সে কথা সমর্থন করে বলেছেন, ‘এটি আমাদের পক্ষে শুধু চূড়ান্ত প্রস্তাব, তা নয়, আইন প্রণয়ন একটি প্রক্রিয়া। এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে আলাপ-আলোচনা হতে পারে।’

সরকারের কার্যক্রম শুরু করার ব্যাপারে যে যার অবস্থান থেকে এক চুল সরে আসতে রাজি না হলেও এ ব্যাপারে একটা কিছু করা দরকার, তার জন্য ট্রাম্প ও স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ওপর চাপ বাড়ছে। সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুসারে, দেশের ৫৫ শতাংশ মানুষ কর্মবন্ধের জন্য ট্রাম্পকেই দায়ী করছে। পেলোসি ও ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করছে—এমন মানুষের সংখ্যা ৩২ শতাংশ। জনমতের দিক দিয়ে সন্তোষজনক অবস্থায় থাকলেও পেলোসির ওপর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাঁর নিজ দলের সদস্যদের কাছ থেকেই চাপ আসছে। মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত একদল ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হওয়ার জন্য ট্রাম্প ও পেলোসির প্রতি আহ্বান জানিয়ে পত্র বিলি করার কথা জানিয়েছেন। ঠিক কতজন ডেমোক্রেটিক সদস্য এই পত্রে এখন পর্যন্ত সই করেছেন, তা অবশ্য জানা যায়নি।

ট্রাম্পের জন্য অবশ্য অচলাবস্থা শেষ করায় আগ্রহী হওয়ার অন্য আরেকটি কারণও আছে। এ মাসের ২৯ তারিখ তাঁর কংগ্রেসের যৌথ কক্ষের এক বৈঠকে ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণ দেওয়ার কথা। সরকারি কাজকর্ম বন্ধ থাকায় নিরাপত্তাজনিত বিপদের কথা উল্লেখ করে স্পিকার পেলোসি সে ভাষণ বিলম্বিত করতে অনুরোধ করেছেন। জানা গেছে, সে অনুরোধ উপেক্ষা করে যথাসময়ে ভাষণ দিতে ট্রাম্প সব প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ‘আমাদের সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রের অবস্থা অত্যন্ত সবল’—এই কথা দিয়েই প্রতিবছর এই ভাষণ শুরু হয়। কিন্তু প্রায় দেড় মাস ধরে সরকার বন্ধ থাকার পর প্রজাতন্ত্রের অবস্থা ভালো, এমন কথা ট্রাম্প বলবেন কী করে? জানা গেছে, স্পিকার পেলোসি যদি ট্রাম্পকে এই ভাষণ দিতে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ না জানান, তাহলে তিনি হয়তো নির্বাচনী ক্যাম্পেইন কায়দায় ওয়াশিংটনের বাইরে কোথায় এই ভাষণ দেবেন।