ট্রাম্পের নতি স্বীকারে জয়ী ডেমোক্র্যাটরা

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি

৩৫ দিন একটানা কর্মবন্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের কাজকর্ম আবার শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই কর্মবন্ধ সমাপ্ত ঘোষণা করে এক আইনে সই করেছেন। ট্রাম্পের এই নতি স্বীকারে স্বভাবতই জয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা।

এত দিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলে এসেছেন, মেক্সিকোর সঙ্গে দেয়ালের জন্য ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ না করা হলে তিনি ফেডারেল সরকারের একাংশের কর্মবন্ধ বা শাটডাউন বন্ধে কোনো প্রস্তাবে সই করবেন না। চাপের মুখে মত বদলে দুই দিন আগে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে পুরো পাঁচ বিলিয়ন না হলেও চলবে, কিন্তু বড় অঙ্কের আগাম বরাদ্দ—ট্রাম্পের ভাষায় ‘ডাউন পেমেন্ট’—তাঁর চাই-ই চাই।

উত্তরে প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাটরা জানিয়েছিলেন, সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলতে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু অন্য কিছুর আগে কর্মবন্ধ শেষ করতে হবে। তাঁদের প্রস্তাব ছিল—সাময়িকভাবে হলেও সরকারি কাজকর্ম উন্মুক্ত করা হোক, তারপর সীমান্ত নিরাপত্তাসহ অন্যান্য প্রশ্নে আলোচনা শুরু করা যাবে।

শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ঠিক কাজটিই করলেন। কর্মবন্ধের ৩৫তম দিনে গতকাল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেন থেকে এক ঘোষণায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানালেন, তিনি সরকারি কাজকর্ম আবার খুলে দিচ্ছেন। রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের তিনি তিন সপ্তাহ সময় দিচ্ছেন, এই সময়ের মধ্যে তাঁরা গ্রহণযোগ্য একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়—এমন কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তিনি ফের কর্মবন্ধ আরোপ করতে পারেন। অথবা বিকল্প হিসেবে জরুরি অবস্থা জারি করবেন।

যে প্রস্তাবের ভিত্তিতে ট্রাম্প কর্মবন্ধে ইতি টানলেন, তাতে বিভিন্ন সরকারি বিভাগের জন্য তিন সপ্তাহের ব্যয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে, কিন্তু ট্রাম্পের দেয়ালের জন্য এক পয়সাও নেই। কংগ্রেসে উভয় দলের নেতাদের আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তাঁরা অবিলম্বে সীমান্ত নিরাপত্তা প্রশ্নে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন।

আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘতম এই কর্মবন্ধ শেষ হওয়ায় সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। সঙ্গে সঙ্গে এমন প্রশ্নও তুলেছেন, যে কাজ ৩৫ দিন আগেই করা যেত, তা না করে আট লাখ মানুষকে এমন দুর্ভোগের মধ্যে ট্রাম্প কেন ফেললেন? কর্মবন্ধ শুরু হওয়ার আগে সিনেটে ঠিক এই রকম একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। ট্রাম্প প্রথমে সে প্রস্তাবে সম্মতও হয়েছিলেন। কিন্তু রক্ষণশীল ভাষ্যকারদের প্রবল সমালোচনার মুখে তিনি নিজের মত বদলে ফেলেন।

ট্রাম্পের মত পরিবর্তনের দুটি কারণ। প্রথমত, তাঁর দলের ভেতরেই অনেকে কর্মবন্ধ শেষ করতে তাঁর ওপর চাপ প্রয়োগ করছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের উত্থাপিত কর্মবন্ধ শেষ করার এক প্রস্তাবের পক্ষে ছয়জন রিপাবলিকান সিনেটর ভোট দেন। ট্রাম্পের কাছে এটি অপ্রত্যাশিত ছিল। একই দিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সঙ্গে এক বৈঠকে রিপাবলিকান নেতারা অবিলম্বে কর্মবন্ধ শেষ করার দাবি তোলেন। তাঁরা পেন্সকে জানান, এক মাসের বেশি সময় বেতন না পাওয়ায় ফেডারেল কর্মচারীদের জন্য মানবিক দুর্যোগ নেমে এসেছে। জনজীবনেও দুর্ভোগ বাড়ছে। বিমানবন্দরগুলোয় নিরাপত্তাকর্মীদের অনুপস্থিতির কারণে উড়োজাহাজ চলাচলে সংকট দেখা দিচ্ছে।

অন্য কারণ, দেশের অধিকাংশ মানুষ এই সংকটের জন্য ট্রাম্পকে দোষী করছিল। সর্বশেষ জনমত জরিপে ট্রাম্পের সমর্থন মাত্র ৩৭ শতাংশে এসে ঠেকেছে। দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা সীমান্তদেয়ালের বিরুদ্ধে।

কোনো সন্দেহ নেই, ডেমোক্রেটিক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি কর্মবন্ধ শেষের প্রশ্নে যেভাবে অনড় ছিলেন, ট্রাম্পের নতি স্বীকারের পেছনে সেটাই মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। যেভাবে ট্রাম্পকে তিনি ঘোল খাওয়ালেন, তাতে অনেকেই পেলোসির নতুন নাম দিয়েছে ‘লৌহমানবী’। ডেমোক্রেটিক সিনেটর চাক শুমার বলেছেন, কারও ভুলেও স্পিকারের ক্ষমতায় সন্দেহ করা উচিত নয়। ট্রাম্প এখন সেই শিক্ষাটা ভালোভাবেই পেয়েছেন। পেলোসি অবশ্য বিজয় ঘোষণার বদলে কর্মবন্ধ শেষে সম্মত হওয়ায় ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বলেছেন, ‘আশা করি, সবাই এই ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন। একটা সমাধান অর্জন সম্ভব। সে ব্যাপারে আশাবাদী।’

ট্রাম্প মুখে বলেছেন যে তিনি দেয়াল প্রশ্নে মোটেই অবস্থান বদল করেননি। তাঁর একসময়ের অনুগত সমর্থকেরা সে কথার সঙ্গে একমত নন। রক্ষণশীল ভাষ্যকার অ্যান কুলটার ট্রাম্পকে ‘ছিঁচকাঁদুনে’ নামে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘এত দিন আমরা জর্জ ডব্লিউ বুশকে দেশের এক নম্বর ছিঁচকাঁদুনে নামে ডাকতাম। এখন থেকে সে জায়গা নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।’

অন্যদিকে, উদারপন্থী পত্রপত্রিকায় ট্রাম্পের নতি স্বীকারকে ডেমোক্র্যাটদের বড় জয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক পত্রিকা পলিটিকো লিখেছে, এটি ট্রাম্পের ‘পূর্ণ আত্মসমর্পণ’। ডেইলি বিস্ট ওয়েব পত্রিকার খ্যাতনামা ভাষ্যকার মাইকেল টমাস্কি বলেছেন, ‘ট্রাম্প যেভাবে একজন নারী স্পিকারের হাতে নাকানিচুবানি খেলেন, তারপর আর কোনো সন্দেহ থাকে না, এই লোকটা কতটা নির্বোধ ও প্রতারক।’