৩৫ বছর আগের ছবি এখন মাথাব্যথা

৩৫ বছর আগের এক ছবি নিয়ে ভার্জিনিয়ার গভর্নর রালফ নরথামের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ উঠেছে। ছবি: রয়টার্স
৩৫ বছর আগের এক ছবি নিয়ে ভার্জিনিয়ার গভর্নর রালফ নরথামের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ উঠেছে। ছবি: রয়টার্স

ছবিটি ৩৫ বছর আগের। বয়স ছিল কম, মাত্র ২৪ বছর। বিবেচনাবোধও অতটা পক্ব হয়নি। পরিণত বয়সে জনসেবায় গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। মানুষের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। তাই শ্রেণি, পেশা, বর্ণ ছাপিয়ে সব মানুষের প্রতি সমান ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনই তাঁর দায়িত্ব। কিন্তু অপরিণত বয়সের সেই বিবেচনাবোধহীন ছবির জন্য আজ বিপাকে পড়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ডেমোক্রেটিক পার্টির রালফ নরথামের ৩৫ বছর আগের এক ছবি নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগে তাঁর পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। তবে গভর্নর আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সেই ছবির জন্য।

আজ শনিবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, ২০১৭ সালে ভার্জিনিয়ার গভর্নর নির্বাচিত হন র‍্যালফ নরথাম (৫৯)। যে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন, সেই কলেজের বার্ষিক ম্যাগাজিনে ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত এক ছবি নিয়ে তাঁকে রীতিমতো দুয়ো দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। ওই বছর মেডিকেল কলেজের বার্ষিক ম্যাগাজিনের এক পাতায় মেডিকেল ছাত্র রালফ নরথামের ছবিসহ পরিচিতি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে একটি ছবি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দুজন ব্যক্তির একজন মুখে কালো রং মেখে কৃষ্ণাঙ্গ এবং আরেকজন কু ক্লাক্স ক্ল্যান গাউন পরেছেন। কু ক্লাক্স ক্ল্যানকে সংক্ষেপে কেকেকে বা ক্ল্যান বলা হয়। ১৮৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যে কেকেকে নামের ‘হেট গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই ছবির মাধ্যমে বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক আচরণ প্রকাশ করা হয়েছে জানিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন মহল।

১৯৮৪ সালে মেডিকেল কলেজের ছাপা হওয়া এই ছবি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ভার্জিনিয়ার গভর্নর রালফ নরথাম। ছবি: টুইটার
১৯৮৪ সালে মেডিকেল কলেজের ছাপা হওয়া এই ছবি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ভার্জিনিয়ার গভর্নর রালফ নরথাম। ছবি: টুইটার

ছবিতে কোন ব্যক্তি গভর্নর নরথাম, তা বোঝা যাচ্ছে না। নরথামও স্বীকার করেছেন, দুই ব্যক্তির একজন তিনি। তবে কোনো সাজে সেজেছিলেন, তা স্পষ্ট করেননি।

এক বিবৃতিতে ওই ছবির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে নরথাম বলেছেন, ওই ছবিতে এভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার জন্য তিনি গভীরভাবে দুঃখিত।

নরথাম বলেন, ‘আমার এখনকার অবস্থান এবং চিকিৎসা, সামরিক ও জনসেবা খাতে বছরের পর বছর ধরে যে মূলবোধের জন্য আমি লড়াই করেছি, এর সঙ্গে এই আচরণ খাপ খায় না। কিন্তু আমি স্পষ্ট করতে চাই যে আমি বুঝতে পেরেছি এ ব্যাপারে ভার্জিনিয়াবাসীর আস্থা কতটা নাড়া খেয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, তাঁর এ আচরণের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণে সময় লাগবে। এ জন্য যা করা দরকার, তা করতে প্রস্তুত রয়েছেন। এর মধ্যে তাঁর প্রথম কাজটি হচ্ছে আন্তরিক ক্ষমা প্রার্থনা এবং যে প্রত্যাশায় ভার্জিনিয়াবাসী তাঁকে গভর্নর নির্বাচিত করেছেন, তা পূরণ করা। টুইটারে নরথাম ভিডিও বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘অতীতের কৃতকর্মের সব দায় মাথা পেতে নিচ্ছি এবং আপনাদের আস্থা আবারও ফিরে পেতে যেকোনো কঠিন কাজ করতে আমি প্রস্তুত।’

ভার্জিনিয়া অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত আফ্রিকান আমেরিকানদের রাজনৈতিক সংগঠন ‘দ্য ভার্জিনিয়া লেজিসলেটিভ ব্ল্যাক ককাস’ এক বিবৃতিতে গভর্নরের ওই ছবিকে ‘ন্যক্কারজনক, নিন্দনীয় ও অপমানকর’ বলে মন্তব্য করেছে। তারা বলেছে, ওই ছবির মাধ্যমে জাতির দুঃসহ যন্ত্রদায়ক ইতিহাসকে খুঁচিয়ে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা এই ছবির পক্ষে ছুতো খুঁজবে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।

ছবিটি নিয়ে ভার্জিনিয়ায় রিপাবলিকান নেতারাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ভার্জিনিয়ায় রিপাবলিকান পার্টির চেয়ারম্যান জ্যাক উইলসন গভর্নর নরথামের পদত্যাগ দাবি করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ভার্জিনিয়ায় বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই।’