মঙ্গলবারের ভাষণে কী বলবেন ট্রাম্প?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

আরও সাত দিন আগেই জাতির উদ্দেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ফেডারেল সরকারের কর্মবন্ধ বা শাটডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের এই ভাষণের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

ট্রাম্প বায়না ধরেছিলেন, মেক্সিকোর সঙ্গে নিরাপত্তাদেয়াল নির্মাণের জন্য প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার না দেওয়া হলে কোনো বাজেট বরাদ্দ আইনে তিনি স্বাক্ষর করবেন না। জবাবে পেলোসি বলেছিলেন, কর্মবন্ধ শেষ হোক বা না হোক, দেয়ালের জন্য এক পয়সাও না।

কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সদস্যদের সামনে এই ভাষণে শুধু স্পিকারের আমন্ত্রণেই প্রেসিডেন্ট আসতে পারেন। ৩৫ দিন টানা কর্মবন্ধের পর ট্রাম্প টের পেলেন, পেলোসি মত বদলাবেন না। ফলে, তাঁকেই মত বদলাতে হলো। এক সপ্তাহ আগে সরকারি কাজকর্ম ফের শুরু হলে ট্রাম্পকে যথারীতি ভাষণে আমন্ত্রণ জানান পেলোসি।

আমেরিকার এই চলমান রাজনৈতিক বিভক্তির মধ্যে স্থানীয় সময় আজ (মঙ্গলবার) ‘স্টেট অব দ্যা ইউনিয়ন’ ভাষণ দিতে কংগ্রেসে আসছেন ট্রাম্প।

কর্মবন্ধের জন্য অধিকাংশ আমেরিকান ট্রাম্পকেই অভিযুক্ত করেছেন। এই মুহূর্তে তাঁর জনসমর্থন মাত্র ৩৭ শতাংশ। তাই এই ভাষণে ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য হবে নিজের জনপ্রিয়তা ফিরে পাওয়া।

জানা গেছে, ট্রাম্পের ভাষণের মুখ্য বিষয় হবে জাতীয় ঐক্য। রাজনৈতিক বিভক্তি কাটিয়ে উঠে দেশকে ঐক্যবদ্ধ হতে তিনি আহ্বান জানাবেন।

একাধিক ভাষ্যকার মন্তব্য করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক বিভক্তির প্রধান কারণ ট্রাম্প নিজেই। তিনি ঢালাওভাবে মেক্সিকান, কৃষ্ণকায়, মুসলিম ও সব অভিবাসীকে আমেরিকার নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে আসছেন। এভাবে হিংসা ও বিদ্বেষের রাজনীতির বিষ তিনিই ঢেলেছেন।

একই ভাষণে ট্রাম্প চলতি অভিবাসনব্যবস্থার বিপদ নিয়েও কথা বলবেন। সে কথা উল্লেখ করে বিখ্যাত ভাষ্যকার ই জে ডিয়ন মন্তব্য করেছেন, এহেন ট্রাম্পের মুখে ঐক্যের ডাক ‘ফ্যান্টাসি’ ছাড়া আর কিছু নয়।

ট্রাম্পের ভাষণের ‘জবাব’ দিতে ডেমোক্র্যাটরা নির্বাচন করেছেন আফ্রিকান-আমেরিকান রাজনীতিক স্টেসি আব্রামসকে। গত নভেম্বরে আব্রামস জর্জিয়ার গভর্নর পদে নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন। তাঁর অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার কারণেই তিনি পরাজিত হয়েছেন।

২০২০ সালে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন ঠেকানোর রণকৌশলের অংশ হিসেবেই ডেমোক্র্যাটরা একজন নারী ও আফ্রিকান-আমেরিকানকে পাল্টা-ভাষণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আব্রামসের নির্বাচন ডেমোক্রেটিক–সমর্থকদের এতটাই উদ্দীপ্ত করেছে যে অনেকে টিপ্পনী কাটা শুরু করেছেন, ট্রাম্পের ভাষণ বাদ দিয়ে সরাসরি তাঁর ‘জবাবে’ গেলেই সঠিক কাজ হবে।

শুধু স্টেসি আব্রামস নন, প্রায় সব ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্যই ট্রাম্পের ভাষণকালে তাঁদের অতিথি হিসেবে এমন ব্যক্তিদের নির্বাচন করেছেন, যাঁদের উপস্থিতি হবে প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান নেতৃত্বের প্রতি ভর্ৎসনা। যেমন নিউ জার্সির কংগ্রেস সদস্য বনি ওয়াটসন অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করেছেন ট্রাম্পের গলফ ক্লাবে অবৈধ বহিরাগত হওয়ার কারণে চাকরিচ্যুত এক নারীকে। ওরেগনের সিনেটর জেফ মার্কলি আমন্ত্রণ করেছেন গুয়াতেমালার এক নারী ও কন্যাকে, যাঁরা উদ্বাস্তু হিসেবে আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কংগ্রেসের নবীনতম সদস্য আলেকজান্ডার ওকাসিও-করতেজের অতিথি হবেন রক্ষণশীল বিচারপতি ব্রেট কাভানার মনোনয়নের তীব্র প্রতিবাদকারী এক নারী। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী সিনেটর কমলা হ্যারিসের অতিথি হবেন একজন বিমান ট্রাফিক কন্ট্রোলার, যিনি কর্মবন্ধের কারণে এক মাস কোনো বেতন ছাড়া কাজ করতে বাধ্য হন।

ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যরাও নিজেদের অতিথি নির্বাচন করেছেন সুপরিকল্পিতভাবে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অবৈধ অভিবাসীদের হাতে নিকটজন হারিয়েছেন—এমন মানুষ। আছেন মাদকাসক্তির কারণে সন্তানদের হারিয়েছেন—এমন মা–বাবা। এ ছাড়া আছেন অবৈধ অভিবাসন বন্ধে কর্মরত সীমান্তপ্রহরী।

আজকের আমেরিকা কতটা বিভক্ত, তা জানতে ট্রাম্পের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এই অতিথিতালিকা থেকেই সে কথা স্পষ্ট।