রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক ট্রাম্পের, দেয়াল নির্মাণে অটল

কংগ্রেসে স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
কংগ্রেসে স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

পুরোনো বিভক্তি, অচলাবস্থা ভেঙে রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাতে ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ বলে পরিচিত জাতির উদ্দেশে বার্ষিক ভাষণে ট্রাম্প এই ঐক্যের ডাক দেন। ভাষণে তিনি যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের ব্যাপারে অটল মনোভাব প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় বৈঠকের সময় ও স্থানের বিষয়টি ঘোষণা করেন।

আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে দেশের বাণিজ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, অভিবাসীসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত তুলে ধরেন। তিনি দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে মাদক, চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচার ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। বৈধ অভিবাসীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বাধা নেই বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার সকাল সাড়ে আটটার কিছু আগে এ ভাষণ শুরু হয়। ‘চুজিং গ্রেটনেস’ বা ‘মহত্ত্বকে বেছে নেওয়া’ থিম নিয়ে জাতির উদ্দেশে ট্রাম্প ৫২ মিনিট ভাষণ দেন। কংগ্রেসের সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ—দুই কক্ষের সদস্যসহ অতিথিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির নারী সদস্যরা সাদা পোশাক পরে উপস্থিত হন। এবারের কংগ্রেসে সর্বোচ্চসংখ্যক নারী সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান ট্রাম্প। ওই সময় বিপুল করতালি দিয়ে এতে সমর্থন দেন নারী সদস্যরা।

ট্রাম্প জানান, ২৭-২৮ ফেব্রুয়ারি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে ভিয়েতনামে তাঁর দ্বিতীয় বৈঠক হবে।

এর আগে গত বছরের জুন মাসে সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প-কিমের ঐতিহাসিক বৈঠক হয়। মার্কিন কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতার ওটাই ছিল প্রথম বৈঠক।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের বন্দীরা দেশে ফিরে এসেছে। পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা–নিরীক্ষা বন্ধ হয়েছে। গত ১৫ মাসে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ঘটনা ঘটেনি। যদি আমি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত না হতাম, আমার মতে, এখন আমরা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে থাকতাম। এখনো অনেক কাজ করা বাকি রয়েছে, তবে আমার সঙ্গে কিম জং-উনের সম্পর্ক ভালো।’

ভাষণে রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘একসঙ্গে আমরা দশকের পর দশক ধরে চলতে থাকা রাজনৈতিক অচলাবস্থা ভাঙতে পারি। পুরোনো বিভক্তিতে সেতু তৈরি করতে পারি, পুরোনো ক্ষত নিরাময় করতে পারি, নতুন সংযোগ স্থাপন করতে পারি।’

অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ওষুধের মূল্য কমানো, শিশুদের ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইসহ সম্ভাবনাময় খাতে চুক্তির ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয় তুলে ধরেন তিনি।

দেয়াল নির্মাণে অটল থাকার কথা জানান ট্রাম্প। তিনি জানান, এর আগে দেয়াল নির্মাণে অনেক আইনপ্রণেতা সমর্থন দিয়েছিলেন।

ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাচিত নারী সদস্যরা সাদা পোশাক পরেন। ছবি: এএফপি
ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাচিত নারী সদস্যরা সাদা পোশাক পরেন। ছবি: এএফপি

এই দেয়াল নির্মাণে বাজেট ইস্যুতে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে ট্রাম্পের বিতর্কে ফেডারেল বা কেন্দ্রীয় সরকারে অচলাবস্থা দেখা দেয়। বাজেট ইস্যুতে বিতর্কের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রেকর্ডসংখ্যক ৩৫ দিন বন্ধ ছিল ফেডারেল সরকারের একাংশের কাজকর্ম (শাটডাউন)। অর্থ বরাদ্দ না পেয়ে ফেডারেল সরকারের আট লাখ কর্মী বিনা বেতনে দিন যাপন করেছেন। চাপের মুখে ফেডারেল চাকা সচল করেন ট্রাম্প। তবে ফেডারেল সরকারকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ দেন তিনি। এ কারণে ১৫ ফেব্রুয়ারির পর অর্থ বরাদ্দ না হলে আবারও শাটডাউন শুরু হতে পারে।

ভাষণে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বলেন, ডেমোক্র্যাটদের ‘হাস্যকর দলীয় তদন্ত’ প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্য ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দেয়াল নির্মাণে কংগ্রেসে অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন পেতে তাঁর সামনে বেশ কিছু উপায় আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা। তবে ভাষণে তিনি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেননি।

ট্রাম্প বলেন, অবৈধ অভিবাসনের মূল্য চুকাতে হয় শ্রমজীবী আমেরিকানদের। ওই সময় দর্শকসারিতে আমন্ত্রিত এক নারীর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, একজন অবৈধ অভিবাসী নেভাদায় ওই নারীর বাবা-মাকে হত্যা করেছিল। ট্রাম্প আরও বলেন, খুবই বিপজ্জনক সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে আর কোনো আমেরিকানের জীবন এভাবে হারাতে দেওয়া উচিত নয়।

ট্রাম্প জানান, তিনি সিরিয়া ও আফগানিস্তান যুদ্ধে মার্কিন সম্পৃক্ততার সমাপ্তি টানার লক্ষ্যে এগোচ্ছেন। তিনি আরও জানান, প্রায় দুই দশকে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে সাত হাজার মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে এবং সাত ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।