ট্রেনের গতি বাড়াতে 'সাবওয়ে সিগন্যাল গুরু' নিয়োগ

পিট টমলিন
পিট টমলিন

নিউইয়র্ক নগরীর পরিবহন কর্তৃপক্ষের প্রধান অ্যান্ডি বাইফোর্ড নিউইয়র্কের সাবওয়ে ট্রেনের গতি বাড়ানোর প্রকল্প নিয়েছেন। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘সাবওয়ে সিগন্যাল গুরু’ নামে বিশ্বখ্যাত পিট টমলিনকে নিয়োগ করেছে পরিবহন কর্তৃপক্ষ। এখন শুধু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তহবিল পাওয়ার অপেক্ষা।
পিট টমলিন সারা বিশ্বেই ‘সাবওয়ে সিগন্যাল গুরু’ নামে পরিচিত। লন্ডন থেকে হংকং, হংকং থেকে টরন্টো সবখানেই তাঁর রয়েছে ব্যাপক খ্যাতি। এবার তাঁর এই খ্যাতির ওপরই আস্থা রাখছে নিউইয়র্ক নগরীর পরিবহন কর্তৃপক্ষ। নিউইয়র্ক নগরীর সাবওয়েতে বিদ্যমান ১১টি লাইনকে ঢেলে সাজিয়ে এগুলো দিয়ে ট্রেনের গতি বৃদ্ধিতে তিনি কাজ করবেন। তবে এখানেও একটি কিন্তু রয়েছে। আর তা হলো তহবিল। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল এখনো অনুমোদন হয়নি।
এ বিষয়ে অ্যান্ডি বাইফোর্ড নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজকে বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা প্রস্তুত। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপযুক্ত ব্যক্তিকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন শুধু অর্থের প্রয়োজন।’
বাইফোর্ডের নেতৃত্বে তৈরি করা ‘ফাস্ট ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ৪ হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন। এই পরিকল্পনা ১০ বছরে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে পরিবহন কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তা এই বাজেট ২৫ শতাংশ কমানো হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, পরিকল্পনা কাটছাঁট করে ২৫ শতাংশ কমিয়ে বাস্তবায়ন ব্যয় ৩ হাজার কোটি ডলারে নামিয়ে আনা হতে পারে। এদিকে মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্টেশন অথোরিটি (এমটিএ) বলছে, নিউইয়র্ক নগরীর পরিবহন কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনাটির কথা বললেও, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বাইফোর্ডের সঙ্গে টমলিন এর আগেও কাজ করেছেন। টরন্টোর সাবওয়ে সংস্কারের সময় দুজন একসঙ্গে কাজ করেন। সেখানে কাজ করার সময় টমলিন টরন্টোর সাবওয়ের লাইন-১-এ নতুন সিগন্যাল বসান। উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে ব্যস্ত এ ট্রেন লাইনে ঘণ্টায় ২৯টি ট্রেন চলাচল করে। টমলিনের করা নতুন সিগন্যাল পদ্ধতিতে এই লাইনের ট্রেনের গতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ‘সাবওয়ে সিগন্যাল গুরু’ খ্যাত টমলিনের চাহিদা বিশ্বব্যাপী। কিন্তু শুধু পুরোনো সম্পর্কের কারণেই তিনি বাইফোর্ডের ডাকে সাড়া দিয়ে নিউইয়র্কে এসেছেন বলে জানা গেছে। ৪ জানুয়ারি ছিল নিউইয়র্কে টমলিনের ষষ্ঠ কর্মদিবস। এ দিন তিনি নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজের সংবাদকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ৩৪ স্ট্রিট-হাডসন ইয়ার্ড স্টেশনে যান। সেখানে তিনি আধুনিক সিগন্যাল প্রযুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। কমিউনিকেশন-বেজড ট্রেন কন্ট্রোল নামে পরিচিত এ সিগন্যাল পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ট্রেনের গতি ও এর সময়ানুবর্তিতার ক্ষেত্রে এ সিগন্যাল পদ্ধতি বড় অগ্রগতি নিয়ে আসতে পারে।’
নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জোসেফ ম্যাকগিবন নামের এক ব্যক্তি বসে আছেন সাতটি কম্পিউটার স্ক্রিন সামনে নিয়ে। এই স্ক্রিনগুলোর মাধ্যমে তিনি ৭ নম্বর লাইনের প্রতিটি ইঞ্চির ওপর নজর রাখতে পারেন। তিনি জানান, যেকোনো প্রয়োজনে এখানে বসেই ট্রেনের গতি ও পরবর্তী স্টেশনে পৌঁছানোর সময়ের সমন্বয় করা যায়। এখানে বসেই পুরো লাইনের চিত্রটি দেখা যায়। এটা অনেক বড় ব্যাপার। ফলে ট্রেন (নির্ধারিত সময়ের) আগে নাকি পরে আসবে, তা আগে থেকেই বোঝা সম্ভব।
টমলিন জানান, মার্চের শেষ নাগাদ ৭ নম্বর লাইনের ট্রেনগুলো অনেকটাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলাচল করবে। সে ক্ষেত্রে ট্রেন অপারেটরদের কাজ হবে শুধু নির্ধারিত বোতাম টেপা ও পর্যবেক্ষণ। তবে এই শহরের সাবওয়ে ব্যবস্থাকে উন্নত করার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জটি হলো, এই ব্যবস্থাকে চালু রেখেই সবকিছু করা। প্রতি দিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকা একটি ব্যবস্থাকে নতুন করে গড়ে তোলাটা অনেক কঠিন একটি কাজ। এটা অনেকটা শত বছর বয়সী একজনের ওপেন হার্ট সার্জারি করার মতো একটি বিষয়, যখন আবার তিনি মধ্যাহ্নভোজ করছেন।