ট্রাম্পকে প্রতারক ও ঠগবাজ বললেন কোহেন

ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের আইনজীবী মাইকেল কোহেন। ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের আইনজীবী মাইকেল কোহেন। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহচর ও ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন বুধবার কংগ্রেসের এক উন্মুক্ত শুনানিতে বলেছেন, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন করে গেছেন। তাঁর জন্য একের পর এক তাঁকে অন্যায় করতে হয়েছে। এ জন্য তিনি অনুতপ্ত।

ট্রাম্পকে রক্ষার জন্য কংগ্রেসের সামনে কোহেনকে মিথ্যা বলতে হয়েছে, এ জন্য তাঁর তিন বছরের সাজা হয়েছে। কোহেন বলেন, ‘আমি লজ্জিত। কারণ আমি জানি, ট্রাম্প কেমন মানুষ। তিনি একজন বর্ণবিদ্বেষী, প্রতারক ও ঠগবাজ।’

ট্রাম্পকে মিথ্যাবাদী হিসেবেও চিহ্নিত করেন কোহেন। কোহেন আশা করেন, যে ভুল তিনি করেছেন, ট্রাম্পের সমর্থকেরা সেই একই ভুল করবেন না।

মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের তত্ত্বাবধান (ওভার সাইট) কমিটির সামনে দিনব্যাপী নাটকীয় শুনানিতে কোহেন ট্রাম্পের নির্দেশে যেসব বেআইনি ও অসংগত কাজ করেছেন, তার বিবরণ দেন। তিনি নিশ্চিত করেন, পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের মুখ বন্ধে যে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার তিনি প্রদান করেছিলেন, তা করা হয়েছিল ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে। ট্রাম্প তাঁকে ব্যক্তিগত চেকের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সে অর্থ পরিশোধ করেন। প্রমাণ হিসেবে কোহেন কমিটির সামনে ৩৫ হাজার ডলারের একটি চেকের কপি উপস্থিত করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্প তাঁকে এই চেক প্রদান করেন।

কোহেন এ কথাও নিশ্চিত করেন, ট্রাম্প জানতেন যে ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে উইকিলিকস হিলারি ক্লিনটন ও ডেমোক্রেটিক পার্টির ই–মেইল উন্মুক্ত করে ভোটকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে। তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু রজার স্টোন নিজে টেলিফোনে ট্রাম্পকে সে কথা জানান।

নির্বাচনের আগে ট্রাম্প টাওয়ারে একজন রুশ আইনজীবীর সঙ্গে ট্রাম্প জুনিয়র ও ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের একাধিক সদস্য যে গোপন বৈঠক করেন, সে কথাও তিনি (ট্রাম্প) জানতেন। কোহেনের উপস্থিতিতে ট্রাম্প জুনিয়র তাঁর বাবাকে সে বৈঠকের কথা জানান।

কোহেন জানান, ট্রাম্প যতটা ধনী নন, তার চেয়ে বেশি ধনসম্পত্তি দেখাতে ভালোবাসেন। কিন্তু আয়কর প্রদানের সময় নিজের সম্পদ কম করে দেখাতেন। এ কথার প্রমাণ হিসেবে কোহেন কমিটির সামনে একাধিক নথি উপস্থিত করেন।

ট্রাম্প কতটা প্রতারক তার প্রমাণ হিসেবে কোহেন জানান, ট্রাম্পের নির্দেশে তাঁর একটি পোর্ট্রেট বিক্রির ব্যবস্থা তিনি করেন। ট্রাম্প চেয়েছিলেন, মোটা দামে চিত্রটি বিক্রি হয়েছে, সে কথা সবাই জানুক। ৬০ হাজার ডলারে এক জাল ক্রেতা চিত্রটি কিনে নেন। পরে তাঁকে সেই অর্থ ট্রাম্পের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ফেরত দেওয়া হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে কোহেন জানান, নিউইয়র্কের একটি ফেডারেল আদালতে ট্রাম্পের সম্ভাব্য অপরাধকর্ম নিয়ে একাধিক অনুসন্ধান চলছে। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

অধিকাংশ পর্যবেক্ষক একমত, এই শুনানি ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সুনামের জন্য ক্ষতিকর হলেও কোহেন এমন কোনো কথা জানাননি, যা বড় রকমের অপরাধের প্রমাণ বলা যায়।

কমিটির রিপাবলিকান সদস্যরা কোহেনের ব্যক্তিগত সততার অভাবের কথা উল্লেখ করে বারবার তাঁর দাবির অসারতা প্রমাণের চেষ্টা করেন।

একজন সদস্য আঙুল উঁচিয়ে বলেন, ‘আপনি একজন আজন্ম মিথ্যুক। আপনার একটা কথাও বিশ্বাসযোগ্য নয়।’ তাঁর সে কথায় বাধা দিয়ে কোহেন পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি আমার না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যাপারে বলছেন?’

অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক সদস্যরা কোহেনের বক্তব্যকে সদয় দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করেন। একাধিক সদস্য বলেন, ট্রাম্পের পক্ষে মিথ্যা বলার জন্য তাঁকে এখন জেলে যেতে হচ্ছে। নতুন করে মিথ্যা বলে তাঁর কোনো লাভ নেই।

ডেমোক্রেটিক সমর্থকেরা আশা করেছিলেন, কোহেনের শুনানির ফলে ট্রাম্পের ব্যাপারে নতুন যে তথ্য-প্রমাণ মিলেছে, তার ভিত্তিতে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তিনি অভিশংসনের কথা ভাবছেন না। বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের তদন্ত শেষে প্রতিবেদনের জন্য তিনি অপেক্ষা করতে চান।

ওয়াশিংটনে কংগ্রেসে যখন এই শুনানি চলে, সে সময় ট্রাম্প ভিয়েতনামের রাজধানীতে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে ব্যস্ত। সেখানে যখন তিনি নিজেকে বিশ্ব নেতা হিসেবে উপস্থাপন করছিলেন, ঠিক সেই সময় তাঁর নিজের দেশের আইন পরিষদে তাঁকে মিথ্যাবাদী ও প্রতারক হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছিল।

এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে কোহেনের বক্তব্য বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জবাব দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। প্রেসিডেন্টকে বিব্রত করায় সন্ধ্যার নৈশভোজে প্রশ্নকর্তা সেই সাংবাদিক ও আরও তিনজনকে নিষিদ্ধ করা হয়।