বাংলাদেশের চূড়ান্ত অভিবাসন কাঠামোর প্রশংসা

জাতিসংঘে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. শহিদুল হক
জাতিসংঘে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. শহিদুল হক

‘আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক জাতিসংঘের চলতি মাইগ্রেশন উইকে সাধারণ পরিষদের সভাপতি আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় ২৭ ফেব্রুয়ারি প্যানেলিস্ট হিসেবে দেওয়া বক্তব্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. শহিদুল হক রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক অভিবাসন প্রশাসনে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ সরকারের চূড়ান্ত বিবেচনাধীন জাতীয় অভিবাসন কাঠামোর বিষয়ে এই সভাকে অবহিত করেন; যা প্রশংসিত হয়। এর আগে এ দিন দুপুরে ফ্রেন্ডস অব মাইগ্রেশনের কো-চেয়ারদের আয়োজিত একটি ইভেন্টে সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব। এখানে তিনি মিশ্র অভিবাসন, মানবপাচার, অনিয়মিত অভিবাসনসহ অভিবাসনের জটিল বিষয়গুলো নিরসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় অভিবাসন কাঠামোর গুরুত্ব তুলে ধরেন। আইওএমের মহাপরিচালক অ্যান্তোনিও ভিতোরিনো, জাতিসংঘে নিযুক্ত আয়ারল্যান্ডের স্থায়ী প্রতিনিধিসহ সভাটিতে উপস্থিত সবাই পররাষ্ট্রসচিব উপস্থাপিত বাংলাদেশের এই ধারণার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ইভেন্টটিতে আইওএমের মহাপরিচালক নবগঠিত জাতিসংঘ অভিবাসন ফোরামের অর্জিত সাংগঠনিক অগ্রগতি সম্পর্কে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অবহিত করেন।
‘আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ইভেন্টটিতে প্যানেলিস্ট হিসেবে আরও অংশ নেন জাতিসংঘের লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চল-সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কমিশনের নির্বাহী সচিব অ্যালিসিয়া বার্সেনা, ইউরোপিয়ান কমিশনের সহযোগিতা ও উন্নয়ন-বিষয়ক মহাপরিচালক হেনরিএটি গেইজার, আন্তর্জাতিক মালিক সংস্থার (আইওই) মহাসচিব রবার্টো সুয়ারেজ-স্যান্তোস। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত স্পেনের স্থায়ী প্রতিনিধি প্রতিনিধি আগুস্টিন স্যান্তোজ।
সাধারণ পরিষদের সভাপতির সঙ্গে বৈঠক, অভিবাসন সপ্তাহের উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টগুলোতে যোগদানের পাশাপাশি এদিন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি (পিজিএ) মারিয়া ফার্নান্দে এস্পিনোসার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন পররাষ্ট্রসচিব শহিদুল হক। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ এ বৈঠকে সাধারণ পরিষদের সভাপতি জলবায়ু পরিবর্তন, শান্তির সংস্কৃতি ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সক্রিয় নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ‘দুর্যোগে বাস্তুচ্যুতি সংক্রান্ত প্ল্যাটফর্মের চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশের দায়িত্বশীল ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন রিভিউ ফোরামের কো-ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে বাংলাদেশকে মনোনীত করে বাংলাদেশের প্রতি তিনি যে আস্থা রেখেছেন তার জন্য সাধারণ পরিষদের সভাপতিকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রসচিব শহিদুল হক। পররাষ্ট্রসচিব আগামী মে মাসে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিতব্য অভিবাসন-সংক্রান্ত সম্মেলনে পিজিএকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউএন ডেসা আয়োজিত ‘এক্সপার্ট সিম্পোজিয়াম অন ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে’ অংশ নেন পররাষ্ট্রসচিব। এ ছাড়া এ দিন সন্ধ্যায় মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে ‘অভিবাসন সপ্তাহ’ উপলক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব মো. শহিদুল হক। তিনি তাঁর বক্তব্যে বৈশ্বিক অভিবাসন কমপ্যাক্ট প্রণয়ন ও গ্রহণে সিভিল সোসাইটির তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। আগামী মে মাসে বাংলাদেশের কক্সবাজারে অভিবাসন-সংক্রান্ত দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে মর্মে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রসচিব। অভিবাসী ও শরণার্থী-বিষয়ক জাতিসংঘের দুটি কম্প্যাক্টসহ এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একযোগে কাজ করা এবং আরও সক্রিয় হওয়ার জন্য সুশীল সমাজসহ সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান পররাষ্ট্রসচিব।
২৮ ফেব্রুয়ারি অভিবাসন-সংক্রান্ত কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টে অংশ নেবেন পররাষ্ট্রসচিব।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জানুয়ারি থেকে জাতিসংঘের অভিবাসন সপ্তাহ শুরু হয়। চলে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।